খুলনা | মঙ্গলবার | ০৮ জুলাই ২০২৫ | ২৪ আষাঢ় ১৪৩২

পুতিন বরখাস্ত করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রুশ মন্ত্রীর ‘আত্মহত্যা’

খবর প্রতিবেদন |
১০:৫০ পি.এম | ০৭ জুলাই ২০২৫


রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দ্বারা বরখাস্ত হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নিজের বাড়ির কাছে গাড়িতে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রাশিয়ার পরিবহনমন্ত্রী রোমান স্তারোভোইতের মরদেহ পাওয়া গেছে। প্রাথমিক তদন্তে এটি ‘আত্মহত্যা’ বলে মনে করা হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক দ্য টাইমস জানিয়েছে, ৫৩ বছর বয়সী স্তারোভোইত আজ সোমবার বরখাস্ত হন। এর আগে রাশিয়ার জাতীয় বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, ইউক্রেনের ড্রোন হামলার আশঙ্কায় গত শনিবার থেকে রাশিয়াজুড়ে পাঁচ শতাধিক ফ্লাইট বাতিল ও প্রায় ২ হাজার ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই বিশৃঙ্খলার জন্য মন্ত্রী হিসেবে স্তারোভোইতকেই দায়ী করা হয়েছে।

মস্কোর ওদিনৎসোভো জেলায় নিজের বাড়ির কাছে গাড়িতে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় স্তারোভোইতের মরদেহ পাওয়া যায়। তাঁর ব্যবহৃত মাকারোভ পিস্তলটি ২০২৩ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তিনি পুরস্কার হিসেবে পেয়েছিলেন বলেও জানা যায়।

তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মৃত্যুস্থান ঘিরে তদন্ত চলছে এবং আপাতত আত্মহত্যাকেই প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে। তবে মৃত্যু কখন হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। রুশ সংসদের প্রতিরক্ষা কমিটির প্রধান আন্দ্রেই কার্তাপোলভ জানিয়েছেন, স্তারোভোইতের মৃত্যু অনেক আগেই হয়ে থাকতে পারে, যদিও তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।

২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত স্তারোভোইত পশ্চিম রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলের গভর্নর ছিলেন। গত বছর সীমান্তবর্তী অঞ্চলটিতে ইউক্রেনের হামলা শুরু করার কিছু দিনের মধ্যেই তাঁকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। রুশ সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, কুরস্ক সীমান্ত প্রতিরক্ষার জন্য বরাদ্দ এক বিলিয়ন রুবল অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছিল। তাঁর স্থলাভিষিক্ত আলেক্সেই স্মিরনভ এ বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন এবং তিনিও গত এপ্রিলে গ্রেপ্তার হন।

স্তারোভোইতের এই আত্মহত্যা রাশিয়ার উচ্চপর্যায়ের কোনো মন্ত্রীর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সহিংস মৃত্যু। এর আগে ২০২১ সালে আর্কটিক অঞ্চলে দুর্ঘটনায় জরুরি ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী ইয়েভগেনি জিনিচেভের মৃত্যু হয়েছিল। এ ছাড়া ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রহস্যজনকভাবে বহুতল ভবন থেকে পড়ে একাধিক রুশ ব্যবসায়ীরও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

ড্রোন হামলা নিয়ে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মুখপাত্র সের্হি ব্রাচুক বলেন, ‘এটি কেবল হামলা নয়, রাশিয়ার জনমানসে মানসিক চাপ তৈরির কৌশল। বিমানবন্দরে শুয়ে থাকা এই যুদ্ধের জন্য সামান্য মূল্যই। কিন্তু এটি জনগণের মনোবল ভাঙে।’

ড্রোন হামলায় শঙ্কায় সম্প্রতি মস্কো, সেন্ট পিটার্সবার্গ, নিঝনি নভগোরদসহ বিভিন্ন বিমানবন্দরে যাত্রীদের মেঝেতে শুয়ে থাকতে দেখা গেছে। ফ্লাইট বাতিলে রুশ এয়ারলাইনসের দৈনিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২০ বিলিয়ন রুবল। তুরস্কের আন্তালিয়ার মতো জায়গায় বহু রুশ পর্যটক আটকা পড়েছেন।

এক ইউক্রেনীয় সামরিক ব্লগার লিখেছেন, ‘একটা অস্ত্রাগার ধ্বংস করার চেয়ে একটা বিমানবন্দর অচল করে দেওয়া সহজ। কেবল কয়েকটা ড্রোনই যথেষ্ট। এই পরিস্থিতি বহু রাশিয়ানের দৃষ্টিভঙ্গিকে বদলে দিচ্ছে।’

রাশিয়া এখন নিজস্ব ড্রোন উৎপাদন বাড়াচ্ছে। জুন মাসেই তারা ইউক্রেনে ৫ হাজার ৪০০-এর বেশি ড্রোন ছুড়েছে।