খুলনা | মঙ্গলবার | ০৮ জুলাই ২০২৫ | ২৪ আষাঢ় ১৪৩২

ওসি ক্লোজড, গঠন হয়েছে তদন্ত কমিটি

মহেশপুর থানার ওসি’র রেস্টহাউজে নারীকান্ডে যশোর-ঝিনাইদহ জুড়ে তোলপাড়

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর |
০২:৩১ এ.এম | ০৮ জুলাই ২০২৫


যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের রেস্ট হাউজে ঝিনাইদহের মহেশপুর থানার ওসি’র নারীকান্ডে যশোর ও ঝিনাইদহ জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে এ ঘটনায় ওসি সাইফুল ইসলামকে ক্লোজড করা হয়েছে। তাকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে ঝিনাইদহ পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। একই সাথে গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি।
বিষয়টি নিয়ে যশোর ও ঝিনাইদহ পুলিশ প্রশাসনে শুরু হয় তোলপাড়। তেমনি সবার মুখে মুখে রটে যায় এ ঘটনা। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সর্বত্র আলোচনা চলে ওসির রেস্টহাউজে নারীকান্ড।
সূত্র থেকে জানা যায়, গত ৩০ জুন রাতে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের রেস্ট হাউসে স্ত্রী পরিচয়ে এক নারীকে নিয়ে অবস্থান করছিলেন মহেশপুর থানার ওসি সাইফুল ইসলাম। এক পর্যায়ে স্থানীয় ছাত্রদলের কতিপয় নেতা-কর্মী তাকে অবরুদ্ধ ও লাঞ্ছিত করে। তার কাছ থেকে আদায় করা হয় মোটা অংকের টাকা। খবর পেয়ে কোতোয়ালি থানা ও ডিএসবি পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে। এরপর ঘটনার গোপন তদন্তে ও ভিডিও ফুটেজ দেখে ডিএসবি পুলিশের কাছে অনেকটাই পরিষ্কার হয় ওসি’র অনৈতিক কর্মকান্ড।
রেস্ট হাউসের কেয়ারটেকার মিজানুর রহমান বলেন, ওসি সাইফুল নিজে এসে স্ত্রী পরিচয়ে এক নারীকে নিয়ে কক্ষ নেন।
পাউবো যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী বলেন, ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের চিঠির ভিত্তিতে রেস্ট হাউসে কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়। অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খতিয়ে দেখছে।
যশোর জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক গোলাম হাসান সনি বলেন, রেস্ট হাউসে অসামাজিক কর্মকান্ড হচ্ছে-স্থানীয়দের মাধ্যমে এমন খবর পেয়ে সেখানে যাই।’ সেখানে কোনো নারীকে দেখেননি বলে দাবি করেন তিনি। যদিও সিসিটিভি ফুটেজে তাদের উপস্থিতি ও নারীসহ থাকার বিষয়টি স্পষ্ট।
ওসি সাইফুল ইসলাম দাবি করেন, কোনো অনৈতিক কিছু ঘটেনি। তিনি যশোরে ব্যক্তিগত কাজে এসেছিলেন। নারী বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে রেস্ট হাউসে অবস্থান করছিলেন। এ সময় কিছু ছাত্রনেতা এসে স্বাভাবিক কথাবার্তা বলে চলে যান। তার ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতে ‘অপপ্রচার’ চালানো হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
প্রশাসনিক একটি সূত্র থেকে জানা যায়, প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত হয় ওসি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম গত ৩০ জুন রাতে যে নারীকে নিয়ে যশোরের রেস্ট হাউজে উঠেছিলেন, তিনি তার স্ত্রী নন। এছাড়া ওসি পরবর্তীতে ওই নারীকে তার বান্ধবী বলে পরিচয় দিলেও মহেশপুর থেকে যশোরে এসে পানি উন্নয়ন বোর্ডের রেস্ট হাউসে সময় কাটানো চাকুরিবিধি অমান্য করার শামিল। যে কারণে ঝিনাইদহ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনজুর মোর্শেদ সোমবার তাকে মহেশপুর থানা থেকে প্রত্যাহার করেছেন। একসাথে তাকে ঝিনাইদহ পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে, ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জেলা পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র ইমরান জাকারিয়াকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ঘটনাটির তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্ত রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে ঝিনাইদহ পুলিশ প্রশাসন ওসি সাইফুলের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হচ্ছেন, কোটচাঁদপুর সার্কেল এএসপি মুন্না বিশ্বাস ও ঝিনাইদহের কোট ইন্সপেক্টর।
তিন সদস্যের এই কমিটি ইতিমধ্যে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছেন। তারা ঘটনাস্থল পানি উন্নয়ন বোর্ড, রেস্ট হাউস, যশোর কোতোয়ালি থানা, যশোর ডিএসবিসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সেক্টরে কথা বলবেন। ওই কমিটির প্রতিবেদনের পরে পরবর্তী বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে ঝিনাইদহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ওসি সাইফুলের এই নারী কাণ্ডে যশোর ও ঝিনাইদহ পুলিশ প্রশাসনে হইচই শুরু হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রটি জানিয়েছে।