খুলনা | বুধবার | ০৯ জুলাই ২০২৫ | ২৫ আষাঢ় ১৪৩২

চালের বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনুন

|
১২:০৯ এ.এম | ০৯ জুলাই ২০২৫


কয়েক বছর ধরে চালের দাম বাড়ছে। অথচ চালের দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ পাচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। লাগামহীন চালের বাজার জনগণের মধ্যে তৈরি করছে অস্থিরতা। বাংলাদেশের খাদ্যনিরাপত্তার অন্যতম প্রধান উপাদান চাল। দাম বাড়লেও খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়ার কোনো উপায় নেই। সারা দেশে খুচরা বাজারে চিকন চালের (মিনিকেট) দাম কেজিতে ৮-১০ টাকা বেড়েছে। মাঝারি ও মোটা চালও কেজিতে ৩-৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। 
নতুন মৌসুমের বোরো ধান গত মাসের শুরুতেই বাজারে আসে। এরপরও এক মাসের ব্যবধানে আবারও বেড়েছে দাম। ব্যবসায়ীদের দাবি, পরিবহন ব্যয় ও চালকলে খরচ বেশি পড়ায় চালের দাম বাড়ছে। এর বাইরে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর মজুতের প্রভাবও পড়েছে বাজারে। এছাড়া কৃষকরাও ধানের দাম বাড়িয়েছেন উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায়। চাল ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদের আগে অধিকাংশ ট্রাক ও পিকআপ ভ্যান কোরবানির পশু পরিবহনে যুক্ত ছিল। এখন আবার দেশে ফলের মৌসুমেও ট্রাকগুলো ফলের বাজারকেন্দ্রিক বেশি ব্যবহার হচ্ছে। এর ফলে চালের পরিবহনে খরচ কিছুটা বেড়েছে।  
ইউএসডিএর তথ্য অনুযায়ী, চাল উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশ তৃতীয়। ট্যারিফ কমিশনের হিসাবে দেশে বছরে চালের চাহিদা ৩ কোটি ৫০ লাখ থেকে ৩ কোটি ৮০ লাখ টন। উৎপাদন প্রায় ৩৯ দশমিক ১ কোটি টন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা কোনো কারণে উৎপাদন ব্যাহত হলে ঘাটতি পূরণের জন্য সরকার বেসরকারি খাতে চাল আমদানির অনুমতি দেয়। সা¤প্রতিক সময়ে চালের বাজারে যে অস্থিরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তা কেবল সরবরাহ ঘাটতি নয়, বরং একটি কাঠামোগত ও ব্যবস্থাপনার সংকটের প্রতিফলন।
খোলা বাজারে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য দৈনন্দিন জীবনযাপন ক্রমেই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে। মিল মালিক, মজুতদার ও মধ্যস্বত্বভোগীদের একটি শক্তিশালী চক্র নিয়ন্ত্রণ করছে চালের বাজার, এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ধান সংগ্রহ মৌসুমে কৃষকদের কাছ থেকে সরকার কাক্সিক্ষত পরিমাণে ধান সংগ্রহ করতে না পারা এবং পর্যাপ্ত মনিটরিংয়ের অভাবেও এই সংকট আরও গভীর হয়েছে। ফলে নির্ভরযোগ্য ও টেকসই সমাধান প্রয়োজন। 
প্রথমত, দেশে ধানচাষে উৎপাদন ব্যয় হ্রাস ও কৃষকদের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তারা উৎসাহিত হয় বেশি উৎপাদনে। দ্বিতীয়ত, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমাতে বাজার ব্যবস্থাপনায় কঠোর নজরদারি ও ডিজিটাল ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু করা প্রয়োজন। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যের গুদাম ও মজুত ব্যবস্থাপনার স্বচ্ছতাও নিশ্চিত করা দরকার। চালের বাজারে অস্থিরতা জাতীয় অর্থনীতি ও খাদ্যনিরাপত্তার ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।
তাই এ সংকট সমাধানে প্রয়োজন কৃষি, বিপণন ও প্রশাসনের সমন্বিত পরিকল্পনা। সরকার ও সংশ্লিষ্ট মহলের এখনই দায়িত্বশীল ভূমিকা নেওয়ার সময়। বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা মানেই সাধারণ মানুষের ভোগান্তি। খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চালের বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এখন সময়ের দাবি।