খুলনা | বুধবার | ১৬ জুলাই ২০২৫ | ১ শ্রাবণ ১৪৩২

মূল্যবান দলিলপত্র ও কার্যালয়টি অন্যত্র স্থানান্তরে মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ

খুলনা রেজিস্ট্রি অফিসের ছাদ ধসে ভিজলো চারশ’ দলিলের বালাম বই

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:১৬ এ.এম | ০৯ জুলাই ২০২৫


লাগাতার বৃষ্টির জেরে খুলনা সদর সাব রেজিস্ট্রি কার্যালয়ের একতলা ভবনের রুমের ছাদ ভেঙে পড়েছে। বহু পুরাতন রেজিস্ট্রি অফিসের রেকর্ড রুমের ছাদ ধসে ভিজে গেছে অন্তত চারশ’ দলিলের বালাম বই। সোমবার দিবাগত রাতের যে কোনো সময় ছাদ ধসে পড়লেও গতকাল মঙ্গলবার সকালে অফিসে যেয়ে এটি দেখতে পান সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কক্ষটিতে খুলনা বিভাগের অন্তত দেড়শ’ বছরের পুরনো দলিলপত্র সংরক্ষিত ছিল। সকালেই বিভাগীয় কমিশনার মোঃ ফিরোজ সরকার ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামসহ গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তারা কক্ষটি পরিদর্শন করেন। গতকাল বিকেলেই ভবনের সংরক্ষিত মূল্যবান দলিলপত্রসহ কার্যালয়টির কার্যক্রম অন্যত্র স্থানান্তর ও নতুন ভবন নির্মাণের জন্য আইন মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেন পত্র প্রেরণ করেছেন জেলা রেজিস্ট্রার মোঃ মিজানুর রহমান।
খুলনা সদর রেজিস্ট্রি অফিসের রেকর্ড কিপার মাহবুবুর রহমান জানান, ভবনটির বিভিন্ন অংশ থেকে পানি পড়ছে। ছাদের প্লাস্টার খসে খসে পড়ছে। গত কয়েক দিনের অতিবৃষ্টিতে মঙ্গলবার ভোরের দিকে ভবনটির মাঝখানের ছাদের একাংশ পড়ে যায়। ফলে বৃষ্টিতে সেখানে রাখা প্রায় শতখানেক বই পানিতে ভিজে গেছে। বৃষ্টির পানি না আসতে পারে সেজন্য ছাদের ওপর পলিথিন দিয়ে চারজন শ্রমিকের মাধ্যমে রেকর্ড রুম পরিস্কার করা হচ্ছে। আর পানিতে যে ভলিউম বইগুলো ভিজে গিয়েছে তা সংরক্ষণের চেষ্টা চলছে।
তিনি বলেন, রেকর্ড রুমের ভবনটি অনেক পুরাতন। এটি সংস্কারের জন্য একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েও হয়নি। ভবন সংস্কার ও নতুন ভবন করার জন্য ইতোপূর্বে বেশ কয়েকবার পত্র দেয়া হয়েছে। কিন্তু গণপূর্ত বিভাগের পক্ষ থেকে কার্যকর তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
গণপূর্ত বিভাগ খুলনা-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল হাসান বলেন, জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয়টি নতুন করার জন্য আগে বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। টেন্ডার পর্যন্ত হয় এমনটিও শুনেছি। কিন্তু আগের সরকার ভবন নির্মাণ করতে পারেনি। এখন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ যেভাবে নির্দেশনা দেবেন সেভাবেই কাজ করা হবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, সকালে খবর পেয়ে ছাদ ধ্বসে পড়া ভবনটি পরিদর্শন করেছি। অনেক পুরাতন ভবন। মূলত ছাদ ধসে পড়েনি, ছাদের ওপর একটি গম্বুজের মতো ছিল সেটি ধসে পড়ে। যার ব্যাসার্ধ দুই মিটারের মতো। তবে যে পরিমানে ধসে গেছে সে পরিমানে বালাম বইয়ের ক্ষতি হয়নি। ধীরে ধীরে সেগুলো সরিয়ে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। আর ধসে পড়া স্থানটি পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও নতুন ভবন নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত অন্য কোনো ভবনে বালাম বইগুলো সরিয়ে নেয়ার জন্য ভবন খোঁজা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চুন আর সুরকি দিয়ে ব্রিটিশ আমলের তৈরি ভবনটিতে জেলা ও সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিস হিসেবে আলাদা আলাদা হিসেবে কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ভবনটি বহু আগেই পরিত্যাক্ত ঘোষণা করেছিল গণপূর্ত বিভাগ। জরাজীর্ণ ভবনটির ছাদ এর আগেই কয়েকবার ধসে পড়েছিল। বিভিন্ন সময় ছাদের অংশ ভেঙে পড়ায় কয়েকজন আহতও হয়েছেন। মাঝে মধ্যে সংস্কার করে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হলেও প্রতিনিয়ত আতঙ্কে থাকেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
খুলনা জেলা রেজিস্ট্রার মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, বেশকিছু বালাম (দলিলের) বই আংশিক ভিজে গেছে। সেগুলো অন্য কক্ষে সরিয়ে শুকানোর চেষ্টা করছি। মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেছি। শিগগরিই ভবনের সংরক্ষিত মূল্যবান দলিলপত্রসহ কার্যালয়টির কার্যক্রম অন্যত্র স্থানান্তর ও নতুন ভবন নির্মাণের জন্য আইন মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেন পত্র প্রেরণ করেছি।