খুলনা | বুধবার | ১৬ জুলাই ২০২৫ | ১ শ্রাবণ ১৪৩২

বৃষ্টিতে দুর্ভোগে লাখো মানুষ, ভেসে গেছে বেশির ভাগ ঘের

টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে সাতক্ষীরার নিম্নাঞ্চল

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা |
০১:২১ এ.এম | ০৯ জুলাই ২০২৫


টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরার শহর ও গ্রামীণ জনপদে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। শুধু সাতক্ষীরা পৌরসভায় নয়; সদর ও আশাশুনি উপজেলার বেশির ভাগ এলাকাই বর্তমানে পানিবন্দি। ঘরবাড়ি, রান্নাঘর, গোয়ালঘর এমনকি সুপেয় পানির উৎস টিউবওয়েলও তলিয়ে গেছে। নষ্ট হয়েছে ফসল ও মাছের ঘের।
চারদিকে শুধু পানি আর পানি। কোথাও কলাগাছে ভেলা, কোথাও আবার কক্সশিটে শিশু ও জিনিসপত্র নিয়ে যাতায়াত করছেন পানিতে আটকেপড়া লোকজন। এতে সুপেয় পানি, রান্না ও স্যানিটেশন সমস্যায় পড়েছেন হাজারও পরিবার।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, দুপুর ১২টা পর্যন্ত সাতক্ষীরায় মোট ২৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় হয়েছে ১০২ মিলিমিটার। অতিবৃষ্টির কারণে পৌরসভার অধিকাংশ ওয়ার্ডে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, কামালনগর, ইটাগাছা, পলাশপোলের মধুমোল­ারডাঙি, মেহেদীবাগ, রসুলপুর, বদ্দিপুর কলোনি, রইচপুর, মধ্য কাটিয়া, রথখোলা, রাজারবাগান, গদাইবিল, মাঠপাড়া, পার-মাছখোলা ও পুরাতন সাতক্ষীরার মতো নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা পৌরসভার ৭ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের।
ইটাগাছা বিলপাড়ার বাসিন্দা নাজমুল হাসান বলেন, ঘের মালিকরা বিলে পানি আটকে রেখেছে। বাইপাসের স্লুইস গেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পানি খাল দিয়ে নদীতে নামতে পারছে না। ফলে ঘরে-পথে সবখানে পানি।
বদ্দিপুর কলোনির গৃহবধূ শাহানারা বেগম বলেন, ১০ বছর ধরে এমন হয়, কিন্তু কোনো সমাধান নেই। এবার রান্না ঘরে পানি ঢুকে হাড়ি-পাতিল নষ্ট। পোকামাকড় ঢুকে ঘুমাতে পারছি না। সন্তানদের নিয়ে নিরাপদ জায়গায় থাকতে হচ্ছে।
শহরের কুখরালি এলাকার ইকরামুল হাসান বলেন, প্রভাবশালীরা বিলের মুখ বন্ধ করে মাছের ঘের করছে। তাদের কারণে শত শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এইচএসসি পরীক্ষার্থী আফসানা মিমি জানান, পানির কারণে সময়মতো পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়া যাচ্ছে না। টিউবওয়েল ডুবে গেছে, পানি কিনে ব্যবহার করতে হচ্ছে।
সমাজকর্মী সাজেদুল ইসলাম বলেন, নদী ও খাল খননে অনিয়ম হয়েছে। পাড় উঁচু করে কৃত্রিম গভীরতা দেখানো হয়েছে, তাই পানি বের হচ্ছে না। বর্ষার পানি লোকালয়ে ঢুকে যাচ্ছে।
বিশিষ্ট আইনজীবী ফাহিমুল হক কিসলু বলেন, বছরের পর বছর ধরে সাতক্ষীরার মানুষ একই দুর্ভোগে পড়ে আছে। পৌর মেয়র ও কাউন্সিলররা শুধু নির্বাচনের সময় আসেন। এখন বলেন, সরকার পতনের পর ঠিকাদার পালিয়েছে, তাই কাজ হয়নি।
তিনি বলেন, নেটপাটা সরানো, স্লুইস গেট সচল রাখা, প্রকৃত গভীরতা অনুযায়ী খাল খনন ও বাঁধ সংস্কার ছাড়া এই দুর্ভোগের সমাধান নেই।
জেলা নাগরিক কমিটির আহŸায়ক আজাদ হোসেন বেলাল বলেন, ‘প্রতিবছর একই দুর্ভোগের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। অথচ প্রশাসন ও পৌরসভা শুধু আশ্বাস দিয়ে থেমে থাকে। আধুনিক ড্রেনেজ না হলে জলাবদ্ধতা কাটবে না।’
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইশতিয়াক আহম্মেদ বলেন, ‘৯টি ওয়ার্ডে অস্থায়ী পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা হয়েছে। শহরের খাল ও ড্রেন উন্নয়নে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। যেসব ঘের মালিক পানি আটকে রেখেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোয়াইব আহমাদ বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৫০ কিঃমিঃ খাল ও সেচনালা সংস্কার করা হয়েছে। স্লুইস গেট খুলে দেওয়া হবে এবং প্রাণসায়ের খালে পানি ফেলার ব্যবস্থা হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। জলাবদ্ধতার চাপে বিপর্যস্ত সাতক্ষীরাবাসী এখন টেকসই ড্রেনেজ পরিকল্পনা ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপের আশায় দিন গুণছে।