খুলনা | বুধবার | ০৯ জুলাই ২০২৫ | ২৫ আষাঢ় ১৪৩২

সাবেক এমপি শাহীনসহ ৪ জনের নামে মামলা, তদন্তে পিবিআই

‘এমপিওভুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেশিনে গুণে ব্যাগে ভরেন ৮৪ লাখ টাকা’

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর |
০২:০৫ এ.এম | ০৯ জুলাই ২০২৫


যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের সাবেক এমপি ও জেলা আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারসহ ৪ জনের নামে শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তির প্রতিশ্র“তি দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে ৮৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হয়েছে। ওই টাকা আসামিরা মেশিনে গণনা করে ব্যাগে ভরে নেন বলে এজাহারে উলে­খ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (কেশবপুর আমলী) আদালতে এ মামলা করেন কেশবপুরের শহিদ লেঃ মাসুদ মেমোরিয়াল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মশিয়ার রহমান। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আঞ্জুমান আরা বেগম অভিযোগটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-(পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।  বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাদীর আইনজীবী তাহমিদ আকাশ।
মামলার অপর তিন আসামি হলেন, কেশবপুর শহরের হাসপাতাল পূর্বপাশের সাহাপাড়ার রোডের আবু বক্কার সিদ্দিকের ছেলে আলমগীর সিদ্দিক টিটো, তার স্ত্রী শামিমা পারভীন রুমা ও কেশবপুর উপজেলার মাগুরখালি গ্রামের সোবহান গাজীর ছেলে রবিউল ইসলাম।
মামলার এজাহারে উলে­খ করা হয়েছে, এক নম্বর আসামি শাহীন চাকলাদার যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আ’লীগের সম্পাদক। ২ নম্বর আসামি শাহীন চাকলাদারের এপিএস আলমগীর সিদ্দিক টিটো ছিলেন। টিটোর স্ত্রী ৩ নম্বর আসামি শামীমা পারভীন রুমা ও ৪ নম্বর আসামি প্রধান আসামির সহযোগী ছিলেন। মামলার বাদী মশিয়ার রহমান কেশবপুরের শহিদ লেঃ মাসুদ মেমোরিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ ও শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি থাকাবস্থায় আসামি আলমগীর সিদ্দিক টিটোর সঙ্গে আলোচনার এক পর্যায়ে কলেজের স্নাতক ও বিএমটি শাখার এমপিও, কৃষি ডিপ্লোমা শাখার শিক্ষক কর্মচারীদের এমপিও ছাড় করিয়ে দিতে পারবেন বলে প্রস্তাব দেন। এ সময় আসামির ওই কাজের বিনিময়ে বাদীর কাছ থেকে কলেজের জন্য ৬৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ও স্কুলের জন্য ২০ লাখ টাকাসহ মোট ৮৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা দাবি করেন।  আসামি শাহীন চাকলাদার কাজটি দ্রুত করে দেবেন বলে ঘোষণা দিলে আলমীগর সিদ্দিক টিটো ও রবিউল ইসলাম স্কুল কলেজের উন্নয়নে করে নেওয়ার জন্য বাদীকে বুঝাতে থাকেন। আসামি আলমগীর সিদ্দিক টিটো শাখাগুলোর এমপিও কাজ করে নেওয়ার জন্য শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে শাহীন চাকলাদারকে দেওয়ার জন্য বাদীকে প্ররোচিত করেন। 
মামলার এজাহারে আরও উলে­খ করা হয়েছে আসামি শাহীন চাকলাদার প্রবঞ্চনা করে বাদীকে বিশ্বাস করান, যে আসামি শাহীন চাকলাদার মন্ত্রণালয় থেকে স্কুল ও কলেজের এমপিও করিয়ে আনতে পারবেন। আসামিদের কথায় রাজি হয়ে টাকা দিলে স্কুল ও কলেজের শিক্ষকরা লাভবান হবেন। বাদী আসামিদের কথায় রাজি হয়ে ২০২০ সালের ২ অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের ৩০ আগস্টের মধ্যে কেশবপুর হাসপাতালের পূর্বপাশে আসামি আলমগীর সিদ্দিক টিটো ও শামীমা পারভীন রুমার বাসায় বসে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে আসামি শাহীন চাকলাদার ও রবিউল ইসলাম নগদ ৩৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা, নগদ ৩০ লাখ টাকা ও নগদ ২০ লাখ টাকাসহ মোট ৮৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা গ্রহণ করেন।  আসামি আলমগীর সিদ্দিক টিটো, শামীমা পারভীন রুমা ও রবিউল ইসলাম মেশিন দিয়ে টাকা গুণে ব্যাগে ভরে আসামি শাহীন চাকলাদারকে দেন। তিনি সেই টাকা গ্রহণ করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে ২০২১-২০২২ সালের মধ্যে মাসুদ মেমোরিয়াল কলেজের স্নাতক ও জিয়াউর রহমান স্কুলের এমপিও ছাড় করানো, কৃষি ডিপ্লোমার শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও করাতে পারেননি। এমপিওভুক্তির জন্য আসামিদের তাগিদ দিলে তালবাহানা করতে থাকেন।  এক পর্যায়ে এমপিওর কোনো কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে বাদীকে জানিয়ে দেয় আসামিরা। 
তবে প্রতিশ্র“তি অনুযায়ী কাজ না করায় বাদী পরে বিষয়টি জানতে চাইলে আসামিরা নানা তালবাহানা করেন এবং জানিয়ে দেন, কাজ আর হবে না। পরে বাদী মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, টাকাগুলো চার আসামি ভাগ করে নিয়েছেন। কিন্তু মামলা ও হামলার ভয়ে তখন তিনি কোনো ব্যবস্থা নিতে সাহস পাননি।
সবশেষ গত ২০ জুন বাদী আলমগীর টিটো ও তার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে টাকা ফেরত চাইলে তারা তা ফিরিয়ে দেবেন না বলে জানিয়ে বিভিন্নভাবে হুমকি দেন। ‘আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসছে’ বলেও ভয়ভীতি দেখান তারা। অবশেষে বাধ্য হয়ে বাদী আদালতের দ্বারস্থ হন।