খুলনা | বুধবার | ১৬ জুলাই ২০২৫ | ১ শ্রাবণ ১৪৩২

ঝিনাইদহে এনসিপি’র আহবায়ক নাহিদ ইসলাম

জুলাই সনদ আমরা ঐক্যমতের ভিত্তিতে আদায় করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি |
০১:২৬ এ.এম | ১০ জুলাই ২০২৫


জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহŸায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, জুলাই ঘোষণাপত্রের কথা বলছি। যেই জুলাই এর প্রেক্ষাপট, শহিদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের অধিকার নিরাপত্তার কথা বলবে। জুলাই সনদ আমরা ঐক্যমতের ভিত্তিতে আদায় করে ছাড়বো ইনশাআল­াহ। আজ জুলাই অভ্যুত্থানকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে প্রপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। আজ ঝিনাইদহবাসীর কাছ থেকে অভূতপূর্ব ভালোবাসা পেয়েছি। এ সময় তিনি জুলাই আন্দোলনে নিহতদের পরিবারের প্রতি সম্মান ও সমবেদনা জানান। দ্রুত জুলাই সনদ তৈরির দাবি জানান। 
বুধবার সন্ধ্যায় ঝিনাইদহ শহরের পায়রা চত্বরে আয়োজিত জাতীয় নাগরিক কমিটির জুলাই পদযাত্রা ও পথসভায় দেওয়া বক্তব্যে নাহিদ ইসলাম এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, এক সপ্তাহ আগে বিএসএফ একজনকে ধরে নিয়ে গিয়ে চোখ তুলে হত্যা করে লাশ ফেরত দিয়েছে। ২০০০ সাল থেকে ২৫ বছরে সীমান্তে বিএসএফ ১২০০ মানুষকে হত্যা করেছে। বিএসএফ সীমান্তরক্ষী নয়, একটি খুনি বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। তারা শুধু খুন করতে চাই। খুন করা তাদের নেশা। বিএসএফ মানবতা বিরোধী বাহিনী। আমরা সীমান্ত হত্যা মেনে নেব না। আমরা ভারত সরকারকে বলতে চায় বাংলাদেশের মানুষের সাথে মর্যাদাশীল আচরণ করুন। 
তিনি আরো বলেন, ঝিনাইদহের সন্তান তারেক রেজা ঢাকায় প্রথম ছয় শহিদের জানাজা পড়িয়েছিলেন। আমরা তাকে আপনাদের হাতে তুলে দিয়ে গেলাম। তিনি ঝিনাইদহবাসীর জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ উন্নয়নে কাজ করতে চাই। আপনারা এনসিপির সাথে থাকেন। এনসিপি আপনাদের অধিকার আদায়ে কাজ করবে। এনসিপি জনগণের রাজনীতি করবে এবং সব সময় জনগণের পাশে থাকবে বলে উলে­খ করে মাত্র তিন মিনিটে বক্তব্য শেষ করেন।
এর আগে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ২৪ এ আমরা একটি খুনি শাসকের হাত থেকে মুক্ত হয়েছি কিন্তু শাসন ব্যবস্থা থেকে মুক্ত হতে পারিনি। দেশের সব প্রতিষ্ঠানকে নতুন করে গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনসহ সকল গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। দেশের সকল প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ করার জন্য সকল ব্যবস্থা করতে হবে। 
এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব তারেক রেজা বলেন, স্বৈরচারী, পাগল, খুনি জুলাই হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। যার প্রমাণ ইতিমেধ্যে বিবিসি পেয়েছে। ফলে খুনি শেখ হাসিনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত কোন নির্বাচন হবে না। এ সময় তিনি ঝিনাইদহবাসী দোয়া ও পরামর্শ চান। 
দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল­াহ বলেন, আমরা বাংলাদেশের জনগণ। ৫ আগস্টের পর থেকে দেখছি একটি দল আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ করছে। তারা সংস্কার চায় না, নির্বাচন চায়। আমরা বিচার এবং সংস্কার করেই নির্বাচন চাই। আমরা খুনি হাসিনার বিচার চাই। প্রিয় ঝিনাইদহবাসী আপনাদের সন্তান তারেক রেজাকে আপনাদের কাছে দিয়ে যাচ্ছি। আপনারা তার হাতকে শক্তিশালী করবেন। প্রিয় তরুণ সমাজ আমরা দুর্ণীতি চাই না, আমরা চাই একটি সুখী সমৃদ্ধি দেশ।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন পার্টির উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস। তিনি বলেন, আমরা যখন শহিদ পরিবারের পাশে দাঁড়াই, শহিদের বাবা মা’র পাশে দাঁড়াই তখন আমরা জুলাই আন্দোলনে ফিরে যাই। এ সময় সারজিসের শ্লোগানে শ্লোগানে সভাস্থল ও তার আশপাশ প্রকম্পিত হয়ে উঠে। তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার নির্দেশে ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়েছিল তার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো। সভায় জুলাই আন্দোলনে শহিদ রাকিব হোসেনের মা ও বাবা বক্তব্য রাখেন।
পদযাত্রা ও পথসভায় আরো অংশ নেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম-সদস্য সচিব ডাঃ তাসনিম জারা ও যুগ্ম-সদস্য সচিব মাহিন সরকারসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব তারেক রেজা, ঝিনাইদহ জেলা আহবায়ক আবু হুরাইয়া, জেলা সদস্য সচিব সাইদুর রহমান, জেলা যুগ্ম-সদস্য সচিব সাহারিয়ার অভিক, সদর উপজেলা আহবায়ক সৌরভ আহম্মেদ শুভ,  মহেশপুর উপজেলা আহবায়ক হামিদুর রহমান রানা ও কোটচাঁদপুর উপজেলা আহবায়ক হৃদয় আহম্মেদসহ জেলা ও উপজেলা নেতৃবৃন্দ।
এর আগে বিকেলে জাতীয় নাগরিক পার্টির প্রতিনিধি দলটি চুয়াডাঙ্গা থেকে ঝিনাইদহ জেলা শহরের জোহান পার্কে আসেন। সেখানে তারা শহিদ পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেন। এরপর বিকেল ৬টার পর পানি উন্নয়ন বোর্ড চত্বর থেকে পদযাত্রা শুরু করেন। পদযাত্রার এ সময় রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার মানুষ এনসিপি নেতাদের শুভেচ্ছা জানান। পদযাত্রা নিয়ে শহরের পায়রা চত্বরে সমাবেশস্থলে আসেন। মাগরিবের নামাজ পর পথসভার মঞ্চে আসেন নেতারা। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থী তরুণসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষের উপস্থিতিতে লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে সভাস্থল।