খুলনা | বুধবার | ১৬ জুলাই ২০২৫ | ১ শ্রাবণ ১৪৩২

টানা ভারী বর্ষণে স্থবির মোংলার জনজীবন ঢেউয়ের তোড়ে টিকতে পারছেনা জেলেরা : ৬৪০টি চিংড়ি ঘের প্লাবিত

মোংলা প্রতিনিধি |
০১:২৮ এ.এম | ১০ জুলাই ২০২৫


সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় একটানা ভারী বর্ষণে মোংলা বন্দর, পৌরসভা ও উপজেলার ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কোন কোন এলাকায় বসত বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। শুক্রবার ভোর থেকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মোড়ে ও সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই মাসের প্রায় ১৫ দিনই দিনে-রাতে দু’দু’বার পানি উঠে জলাবদ্ধতার সৃষ্টির কারনে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। বঙ্গোপসাগর প্রচন্ড উত্তাল হয়ে উঠেছে। সাগরের ঢেউ উপকূলে আছড়ে পড়ছে বলে জানিয়েছে জেলেরা। মোংলা সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। এদিকে টানা বৃষ্টিপাতের কারণে মোংলা বন্দরে জাহাজে পণ্য বোঝাই ও খালাস কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ।
গত শুক্রবার ভোর থেকেই শুরু হয় মোংলাসহ এর আশপাস এলাকায় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ও ভারি বর্ষণ। গত সাতদিন ধরে মুষলধারে বৃষ্টির কারণে বুধবার মোংলা পৌর শহরের তাহেরের মোড়, শেলাবুনিয়া স্কুল রোড, পুরাতন বাজার, পুরনো থানার সামনে, বিএল এস রোড, কবরস্থান রোড, বান্দাঘাটা মোড়, প্যারাডাইস মোড়, সিগনাল টাওয়ার লাকাসহ বিভিন্ন মোড় ও সড়কে জলাবদ্ধতা দেখা গেছে। এছাড়া চাঁদপাই ইউনিয়নের মাছমারা এলাকা, চিলা ইউনিয়নের বৈদ্যমারী ও জয়মনি এলাকা, চাঁদপাই ইউনিয়নের তালতলা সড়ক ও এর আশপাশ এলাকা, সুন্দরবন ইউনিয়নের টাটিবুনিয়া, মিঠাখালী ইউনিয়নের চটেরহাট, মোল­ার হাটের বেশ কিছু এলাকা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়। এছাড়াও বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়ন ও সোনাইলতলা ইউনিয়নের বেশ কিছু নিম্নাঞ্চলে বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তবে এলাকায় সাদা সোনা খ্যাত চিংড়ি ঘের ডুবির খবরে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে ঘের ব্যাবসায়ী ও মৎস্য চাষিরা। এ উপজেলায় বসবাসকারী এক মাত্র উৎস্য মৎস্য চাষ। গত কয়েকদিন ভারী বৃষ্টিপাতে প্রায় ৩/৪শ’ হেক্টর জমিতে ৬৪০টি চিংড়ি ঘের তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় এক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারের কাছে তালিকা পাঠানো হয়েছে বলে জানান মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ জাহিদ হোসেন।
ভারী বর্ষণের ব্যাপারে মোংলা পোর্ট পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের আবাসিক এলাকার বাসিন্দা তমিজ তালকুদার ও আঃ সালাম হাওলাদার জানান, পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় এবং কতিপয় প্রভাবশালীরা শহরের ভিতরের ঠাকুরানীর খালের দুইপাড় দখল করে রাখার কারণে পানি নিষ্কাশন হতে পারছে না। ভারী বৃষ্টি হলে বা জোয়ারের পানি শহরে ঢুকে পড়লে বিভিন্ন রাস্তা ও নিম্নাঞ্চলে পানি আটকে থাকে। তবে গত সরকারের আমলের শেষের দিকে বেশ কিছু রাস্তাঘাট তৈরি ও পৌরসভার পক্ষ থেকে পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য বড় একটি প্রকল্প হাতে নিলেও তার কোন কাজ করেনি পৌর মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলে জানিয়েছেন সাবেক প্যানেল মেয়র মোঃ আলাউদ্দিন। 
চাঁদপাই এলাকার ব্যবসায়ী মকবুল সেখ জানান, জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে রাস্তাঘাট ও মাছের ঘের প্লাবিত হওয়ার পর তাঁদের মৎস্য ব্যবসার মাথায় হাত উঠেছে। বাড়ির সামনের রাস্তায় হাটু পানিতে পরিণত হয়েছে। বাড়ি ঘর তলিয়ে যাওয়ায় দুপুরে তাঁদের গ্রামের বাড়িতে রান্না বন্ধ ছিল। 
মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা জানান, বঙ্গোপসাগর প্রচন্ড উত্তাল হয়ে উঠেছে এবং ঢেউ উপকূলে আছড়ে পড়ছে। যা ফলে সাগরে জাল ধরার সাহস পাচ্ছেনা তারা। ডেউয়ের মুখে টিকতে না পেড়ে সাগর থেকে সুন্দরবনের কিনারায় ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছে তারা। 
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক মোঃ মাকরুজ্জামান জানান, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া আর ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বন্দরে অবস্থানরত বাণিজ্যিক জাহাজে পণ্য খালাস ও বোঝাই কাজ ব্যাহত হচ্ছে। বন্দরের হারবাড়িয়া এলাকায় একটি সারবাহীসহ এখন ৬টি জাহাজ অবস্থান করছে। তবে বৃষ্টির সময় সার খালাস কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।