খুলনা | বৃহস্পতিবার | ১৭ জুলাই ২০২৫ | ২ শ্রাবণ ১৪৩২

সব আসামি শনাক্ত

পুরান ঢাকার বীভৎস হত্যাকাণ্ড: প্রধান আসামিসহ অস্ত্রসহ গ্রেফতার ৪

খবর প্রতিবেদন |
০৯:৩০ পি.এম | ১১ জুলাই ২০২৫


রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কাছে প্রকাশ্যে ভাঙ্গারি ব্যবসায়ীকে পাথর মেরে বীভৎসভাবে হত্যার ঘটনায় জড়িত দুজনকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় এর আগে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয় দুজন।

পুলিশ জানিয়েছে ঘটনায় জড়িতদের সবাইকে শনাক্ত করেছে পুলিশ, তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

বুধবার (৯ জুলাই) বিকেলে হাসপাতালের তিন নম্বর গেটের সামনে পাকা রাস্তার ওপর বীভৎস এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। পরে এই ঘটনায় মামলা হয়। সেই মামলায় এখন পর্যন্ত চারজন গ্রেফতার হলো।

ভাইরাল হওয়া সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, সোহাগকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর তার নিথর দেহ টেনেহিঁচড়ে হাসপাতাল চত্বরের বাইরে এনে শত শত মানুষের সামনে চলে বীভৎস উন্মত্ততা।

ডিএমপির কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ ইয়াসিন শিকদার জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত মহিন ও তারেক নামের দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য আসামিদেরও শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।

পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার বিকেলে একদল লোক লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯) নামে এক ব্যক্তিকে এলোপাতাড়ি আঘাত করে ও কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ঘটনার সংবাদ পাওয়ার পর কোতয়ালি থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে যায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরবর্তীতে পুলিশ নিহতের মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য তা হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

শুক্রবার (১১ জুলাই) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সোহাগ হত্যার ঘটনায় তার বড় বোন বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলার ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায় এবং এজাহারভুক্ত আসামি মাহমুদুল হাসান মহিন (৪১) ও তারেক রহমান রবিনকে (২২) গ্রেফতার করে।

তারেক রহমান রবিনের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।

ডিএমপি জানায়, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব ও পূর্ব শত্রুতার জেরেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে। ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনে এবং অন্য জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) জানিয়েছে, মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে প্রকাশ্যে সংঘটিত নৃশংস হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে দুজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী বলেন, র‌্যাব-১০ রাজধানী থেকে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুজনকে গ্রেফতার করেছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঘটনার সময় হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা চালু ছিল এবং আনসার ক্যাম্পের সদস্যরাও আশপাশে অবস্থান করছিলেন। তবে এমন ভয়াবহ সন্ত্রাসের সামনে কেউ এগিয়ে আসেনি। পরে সোহাগকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে চিকিৎসক জানান, তিনি ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোহাগের মৃত্যুর পরও হামলাকারীরা থামেনি। তার রক্তাক্ত নিথর দেহটি রাস্তার মাঝে ফেলে রেখে চলে নৃশংসতা। কেউ লাশের বুকের ওপর লাফায়, কেউ মুখে কিল-ঘুষি দেয়।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, এক হামলাকারী মোবাইলে কথা বলার সময় পাশ থেকে চলছিল লাশের ওপর মারধর।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, নিহত সোহাগ মিটফোর্ড এলাকায় ভাঙাড়ি ও পুরোনো বৈদ্যুতিক কেবল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার দোকানের নাম ছিল ‘সোহানা মেটাল’। বিদ্যুতের তামার ও সাদা তারের ব্যবসার একটি সিন্ডিকেট পরিচালনা করতেন তিনি। এই ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া ছিলেন মাহমুদুল হাসান মহিন ও সারোয়ার হোসেন টিটু। তারা নিয়মিত চাঁদা দাবি করছিলেন এবং ব্যবসার ৫০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ চেয়েছিলেন। এই বিরোধ থেকেই হত্যাকাণ্ডের সূত্রপাত বলে জানিয়েছে পুলিশ।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নিহত সোহাগ এবং হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া মহিন ও টিটুসহ অধিকাংশ আসামি ৩০ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তবে তাদের সংগঠনে কোনো আনুষ্ঠানিক পদ ছিল কি না, তা নিশ্চিত করা যায়নি।

এ ঘটনায় নিহতের বোন মঞ্জুয়ারা বেগম কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় নাম উল্লেখ করে ১৯ জন এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত মাহমুদুল হাসান মহিন, সারোয়ার হোসেন টিটু, মনির ওরফে ছোট মনির, আলমগীর, মনির ওরফে লম্বা মনির, নান্নু, সজীব, রিয়াদ, টিটন গাজী, রাকিব, সাবা করিম লাকী, কালু ওরফে স্বেচ্ছাসেবক কালু, রজব আলী পিন্টু, মো. সিরাজুল ইসলাম, রবিন, মিজান, অপু দাস, হিম্মত আলী ও আনিসুর রহমান হাওলাদার।