খুলনা | রবিবার | ১৩ জুলাই ২০২৫ | ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

কোতোয়ালি থানায় দু’টি মামলায় একটি হত্যা, অপরটি অস্ত্র * চাঁদা নয়, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যা : ডিএমপি

সোহাগ হত্যা : আসামি রবিনের স্বীকারোক্তি টিটন ৫ দিনের রিমান্ডে

খবর প্রতিবেদন |
০৫:৫৫ পি.এম | ১২ জুলাই ২০২৫


রাজধানীর পুরান ঢাকায় মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে লাল চাঁদ ওরফে মোঃ সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় করা অস্ত্র মামলায় তারেক রহমান রবিন (২২) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। হত্যা মামলায় মোঃ টিটন গাজীকে (৩২) নামের এক আসামিকে ৫ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত।
শনিবার তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। দুই দিনের রিমান্ড শেষে রবিন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার এসআই মোঃ মনির। ঢাকার মহানগর হাকিম হাসিব উল­াহ গিয়াস তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। অপরদিকে টিটন গাজীর সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন আরেক তদন্ত কর্মকর্তা একই থানার ইন্সপেক্টর নাসির উদ্দিন। তবে আদালতে টিটন গাজীর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত শনিবার বিকেলে এ আদেশ দেন।
এর আগে গত বুধবার (৯ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টার দিকে হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটসংলগ্ন রজনী ঘোষ লেনে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। এ হত্যার ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় দু’টি মামলা হয়। একটি হত্যা মামলা, অপরটি অস্ত্র মামলা। আলোচিত এ হত্যা মামলায় টিটন গাজী, তারেক রহমান রবিনসহ মোট পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি তিনজন হলেন মাহমুদুল হাসান মহিন (৪১), আলমগীর (২৮) ও মনির ওরফে ছোট মনির (২৫)।
পুলিশ ও আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ হত্যা মামলায় গত বৃহস্পতিবার মাহমুদুল হাসান মহিনকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন আদালত। তিনি এখন কোতোয়ালি থানা হেফাজতে রয়েছেন। আর গ্রেফতার তারেক রহমান রবিনকে সেদিন অস্ত্র মামলায় দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। তারেককে দু’দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তাঁকে আজ কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। তাঁকে আজ লাল চাঁদ হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া এ মামলায় আলমগীর (২৮) ও মনির ওরফে ছোট মনিরকে (২৫) গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। তাঁদের আদালতে হাজির করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে নিহত মোঃ সোহাগ কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পূর্ব নামাবাড়ি গ্রামের ইউসুফ আলী হাওলাদারের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মিটফোর্ড এলাকার ৪ নম্বর রজনী ঘোষ লেনে ভাঙারির ব্যবসা করতেন। ঘটনার পর পুলিশ মাহমুদুল হাসান মহিন ও তারেক রহমান রবিনকে আটক করে। পরে কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা ও একটি অস্ত্র মামলা দায়ের হয়।
এর মধ্যে হত্যা মামলায় মাহমুদুল হাসান মহিনকে ৫ দিন এবং তারেক রহমান রবিনকে অস্ত্র মামলায় ২ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। রবিনের শনিবার রিমান্ড শেষ হলেও আরেক আসামি মাহমুদুল রিমান্ডে রয়েছেন। এদিকে পাথর নিক্ষেপ করে প্রকাশ্যে সোহাগকে হত্যা করার ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে। ফেসবুকে অনেকেই এর নিন্দা জানিয়েছেন।
চাঁদা নয় ব্যবসায়িক দ্ব›েদ্ব মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যা: ব্যবসায়িক দ্ব›েদ্ব ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁন ওরফে সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। শনিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টার আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোঃ জসীম উদ্দিন।
তিনি বলেন, গত ৯ জুলাই বিকেল ৫টা ৪০ মিনিট থেকে ৬টার মধ্যে কোতোয়ালি থানাধীন স্যার সলিমুল­াহ মেডিকেল কলেজের তিন নম্বর গেটে এবং সংলগ্ন এ হত্যাকাণ্ড হয়। অনেক লোক একত্র হয়ে একজনকে বিভিন্ন ভাবে আঘাত করে হত্যা করেছে। এ ঘটনা ঘটার সাথে সাথেই পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় এবং অল্প সময়ের মধ্যে দুইজনকে গ্রেফতার করে। তাৎক্ষণিকভাবে আমরা লাশের সুরতহাল করে ময়নাতদন্তের জন্য মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠাই।  
ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, এ ঘটনার নেপথ্যে অনেক রকম কথাবার্তা আমরা মিডিয়া দেখতে পাচ্ছি। আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, ওই এলাকায় ভাঙারি ব্যবসা খুব প্রচলিত। সেখানে একটি ভাঙারি দোকান ছিল, সেই দোকানে কারা ব্যবসা করবে এ নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। আমরা জানতে পেরেছি, যিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন এবং যারা হত্যার সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে তারা পরস্পর সম্পর্কিত। তারা একসঙ্গে ব্যবসাটা কিছুদিন করেছে। কিন্তু তাদের মধ্যে ব্যবসায়িক লেনদেন নিয়ে একটা দ্ব›দ্ব তৈরি হয়। তারা নিজেদের মতো ব্যবসা করার জন্য সোহাগের সঙ্গে বিবাদে লিপ্ত হয় এবং এ হত্যাকাণ্ড হয়।
তিনি আরও জানান, ৯ জুলাই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পর ১০ জুলাই ভুক্তভোগী সোহাগের বোন বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। যার মামলা নম্বর ৭। এ ঘটনার পর ভিডিও ফুটেজ দেখে আমরা হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্ত করি এবং এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে দুইজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব এবং তিনজনকে গ্রেফতার করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।
হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটা অপরাধ হলে কে অপরাধী সেটা বিবেচনা করে পুলিশ মামলা তদন্ত করে। তাদের রাজনৈতিক পরিচয় আমাদের কাছে মুখ্য বিষয় নয়। অপরাধের সঙ্গে তাদের যে সম্পৃক্ততা এটা কি আমরা গুরুত্ব দিতে চাই। তারা কেন অপরাধটি করেছে এটা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা দেখেছি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িয়ে তাদের পরিচয় দেখানো হচ্ছে। কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত নির্ভরযোগ্য সোর্স থেকে পরিচয় বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারিনি। যারা গ্রেফতার হয়েছে তাদেরকেও আমরা জিজ্ঞেস করেছি তাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় আছে কিনা। এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য আমাদের দেয়নি। আমরা তাদের আরো নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করবো।
চাঁদাবাজির কোনো বিষয় ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, চাঁদাবাজির বিষয়টা আমাদের নলেজে নেই। আমরা এমন কোনো তথ্য পাইনি। আমরা যতটুকু জেনেছি এটা পারস্পরিক দ্ব›েদ্বর বিষয়।
ঢাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল ও ব্যবসায়িক এলাকায় দীর্ঘক্ষণ ধরে একটি নৃশংসতা হয়েছে। এক্ষেত্রে আগাম পুলিশিং ব্যবস্থা এবং পুলিশ টহলের ব্যত্যয় ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনার দশ মিনিটের মধ্যে পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়েছে এবং তাৎক্ষণিকভাবে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে।
এ সময় ডিএমপির মিডিয়া এ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।