খুলনা | রবিবার | ১৩ জুলাই ২০২৫ | ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

বনরক্ষীদের মাঝে বাঘ আতঙ্ক

সুন্দরবনের অফিস এলাকায় এক সপ্তাহে দুইবার বাঘের হানা, বনরক্ষীদের ফাঁকা গুলি

মোংলা প্রতিনিধি |
০১:৫৪ এ.এম | ১৩ জুলাই ২০২৫


সুন্দরবনের পূর্ব রেঞ্জের অফিস এলাকায় আবারও বাঘের আনাগোনা দেখা গেছে। আর অফিস এলাকায় বার বার বাঘের আনাগোনায় বনরক্ষীদের স্বাভাবিক চলাচল বিঘিœত হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে দুইবার রেঞ্জ সদর অফিস প্রাঙ্গনে বাঘ হানা দেয়। শুক্রবার দুপুরে বাঘের তাড়া খেয়ে ৮/১০টি হরিণ দৌড়ে রেঞ্জ অফিসের সামনে হুমড়ি খেয়ে পরে। এর আগে গত ৫ জুলাই রেঞ্জ অফিসের পাশে বাঘ দেখে ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে বাঘ তাড়াতে হয়েছে বনরক্ষীদের। 
পূর্ব সুন্দরবন বন বিভাগের স্টেশন কর্মকর্তা ফরেস্ট রেঞ্জার মোঃ খলিলুর রহমান শনিবার বিকেলে জানান, আগের তুলনায় এখন সুন্দরবনে বাঘের আনাগোনা বেড়েছে। গত এক সপ্তাহে (রয়েল বেঙ্গল টাইগার) বাঘ দুইবার পূর্ব রেঞ্জ অফিসের আঙিনায় চলে আসে। প্রথমবার গত ৪ জুলাই রেঞ্জ অফিস সংলগ্ন বনে বাঘের আগমন টের পাওয়া যায়। এ সময় বাঘ হরিণ ও শুকর তাড়া করে ফেরে। এখানে বাঘ অবস্থান করায় বনরক্ষীরা স্বাভাবিক চলাচল করতে পারছিল না। দুই দিনেও বাঘ সরে না যাওয়ায় দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে বাঘ তাড়াতে হয়েছে। এ ঘটনার ৬ দিন পরে শুক্রবার (১১ জুলাই) দুপুরে একই স্থানে আবার বাঘ হানা দেয়। এদিন দুপুরে ৮/১০টি হরিণে বাঘের তাড়া খেয়ে দৌড়ে রেঞ্জ অফিসের সামনে এসে হুমড়ি খেয়ে পরে এবং বন্য শুকরগুলো এলোপাতাড়ি দৌড়ে সুন্দরবনের মধ্যে চলে যায়। অফিসের কাছাকাছি বাঘের পায়ের ছাপও দেখা গেছে।
শুক্রবার রাতে বনরক্ষীরা বাঘের ভয়ে অফিস থেকে বাইরে বের হয়নি। বনরক্ষী ও বনকর্মচারীদের মধ্যে এখন বাঘ আতঙ্ক বিরাজ করছে। শনিবার সকাল থেকে রেঞ্জ ও স্টেশন অফিস আঙিনায় অন্য দিনের মতো বন্য শুকর বিচরণ করতেও দেখা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, বাঘ রেঞ্জ অফিসের কাছাকাছি স্থানে এখনও লুকিয়ে রয়েছে বলে ফরেস্ট রেঞ্জার খলিলুর রহমান জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বনরক্ষী বলেন, শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জ এবং এর পার্শ্ববর্তী স্টেশন অফিসগুলোর পাশে বাঘ আনাগোনার খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে বাঘ ভিতরে প্রবেশ ঠেকাতে পূর্ব দিকে বনের পাশে নাইলনের ফেন্সিং দিয়ে ঘেরাও রযেছে কিন্ত অন্যদিক খোলা রয়েছে। এছাড়া এ ঘেরার মধ্যে কয়েকটি হরিণ ছোট জঙ্গল ও ঝোপের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। এ ছাড়া ফেন্সিংয়ের নীচ দিয়ে কিছু বন্য শুকর অফিস আঙ্গিনায় চলে আসে। সম্ভবত হরিণের লোভে বাঘ বারবার অফিসের কাছে চলে আসছে বলে ফরেস্ট অফিসের বনরক্ষীদের ধারণা।
সুন্দরবন বন বিভাগের পূর্ব রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) রানা দেব বলেন, রেঞ্জ অফিস সংলগ্ন ভোলা নদী সাঁতরে বাঘ অফিসের কাছে চলে আসছে। ধারণা করা হচ্ছে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া যেখানে হরিণের বিচরণ বেশী থাকবে সেখানেই বাঘের আনাগোনা বেশী থাকে এটা স্বাভাবিক, কিন্তু ফরেস্ট অফিসের পাসে বাঘ আসা মানে বনরক্ষীদের মাঝে আতঙ্ক দেখা দেয়া। 
পূর্ব সুন্দরবন বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোঃ রেজাউল করীম চৌধুরী বলেন, সুন্দরবনে বাঘের চাপ বৃদ্ধি তো ভালো খবর। সুন্দরবন বাঘের আবাসস্থল। বাঘ বনের যে কোন জায়গায় বিচরণ করতে পারে এটা স্বাভাবিক ঘটনা। তবে বাঘ যাতে অফিস এলাকায় প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আর সুন্দরবন আছে বলেই বাঘ আছে, এতে বনরক্ষীদের আতঙ্ক হওয়ার কিছু নেই বলে জানায় বিভাগীয় বন কর্মকর্তা।