খুলনা | মঙ্গলবার | ১৫ জুলাই ২০২৫ | ৩০ আষাঢ় ১৪৩২

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে হবে : মির্জা ফখরুল

খবর প্রতিবেদন |
০৬:৪৮ পি.এম | ১৪ জুলাই ২০২৫


বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তাদের একমাত্র লক্ষ্য ২০২৬ সালের ফেব্র“য়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া এবং এতে কোনো ব্যতিক্রম হবে না। তিনি উলে­খ করেন, লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকেই এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। সোমবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। 
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ অপপ্রচার, মিটফোর্ডে হত্যাকাণ্ড এবং সারাদেশে নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এ সমাবেশের আয়োজন করে।
তিনি বলেন, লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমান নির্বাচনের বিষয়টি নিশ্চিত করার পর থেকেই ‘তাদের মাথা বিগড়ে গেছে’। মির্জা ফখরুল নেতা-কর্মীদের ধৈর্য ধরে সব পরিস্থিতি মোকাবিলা করার আহŸান জানান।
মিটফোর্ড এলাকায় ব্যবসায়ী লালচাঁদ সোহাগ হত্যাকাণ্ডকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পরিকল্পিত ভাবে এই হত্যার ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে বিএনপি এবং তার শীর্ষ নেতৃত্বকে হেয় প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, স¤প্রতি সংঘটিত এক মর্মান্তিক ও অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার প্রেক্ষিতে এবং বিশেষ করে সুপরিকল্পিত ভাবে এই ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল ও তার শীর্ষ নেতৃত্ব জনাব তারেক রহমানের চরিত্রহননের ঘৃণ্য অপচেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, ঘটনার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততা বা উপস্থিতির কোনো প্রমাণ ছাড়াই যেসব ব্যক্তির নাম এজাহারে উলে­খ করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে দলের পক্ষ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের মতো সর্বোচ্চ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, একটি বিবেকবান রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা শুরু থেকেই এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছি এবং দোষীদের শাস্তির দাবি করেছি।
মির্জা ফখরুল দাবি করেন, নিহত সোহাগের পরিবারের সদস্যরাও এজাহারে নাম থাকা কয়েকজনের বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, যারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত নন, এমন তিনজনের নাম এজাহারে যুক্ত হয়েছে। অথচ প্রকৃত অপরাধীদের এখনো চিহ্নিত করা হয়নি এবং তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো।
ফখরুল বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্যি, এই হত্যাকাণ্ডে যারা সরাসরি অংশ নিয়েছে, তাদের কাউকেই এখনও গ্রেফতার করা হয়নি। এমনকি তদন্তে উলে­খযোগ্য কোনো অগ্রগতিও নেই।
তিনি অভিযোগ করেন, এই ইস্যুতে বিএনপি’র স্পষ্ট অবস্থান থাকা সত্ত্বেও একটি চিহ্নিত মহল পরিকল্পিতভাবে বিএনপি এবং তারেক রহমানকে নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে, শালীনতা ও চরিত্রহননের চেষ্টা করছে।
মির্জা ফখরুল প্রশ্ন তুলে বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা কোনো রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য ব্যবহার হচ্ছে কিনা এবং এর মাধ্যমে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশকে বিঘিœত করার জন্য বিশেষ কোনো মহলের প্ররোচনায় এই ধরনের ঘটনাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে সন্দেহ করার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। একই সময়ে কুমিল­ার মুরাদনগরে সংঘটিত তিনটি নৃশংস হত্যাকান্ড, চাঁদপুরে ইমামের ওপর হামলা হলো, খুলনায় যুবদল নেতা মাহবুব মোল­াকে হত্যা ও রগকাটা হলো কিন্তু এসব ক্ষেত্রে এক রকম প্রতিবাদ হয়নি।
জনসম্মুখে এই রূপ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধ ছাড়া বিনা বাধায় ভিডিও ধারণ যুক্তিসঙ্গত ভাবেই অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয় বলেও মনে করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, মাত্র গুটিকয়েক সন্ত্রাসী দ্বারা প্রকাশ্যে এমন হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হওয়ায়- মাত্র এক বছর আগে সংগঠিত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনার সম্পূর্ণ বিপরীতে পুনরায় আইনের শাসন ধ্বংসের ষড়যন্ত্র বলে বিবেচিত হতেই পারে।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, সরকার পরিচালনার দায়িত্বে না থাকা সত্তে¡ও বিশেষ একটি রাজনৈতিক দল (বিএনপি) ও তার প্রধান নেতৃত্বকে দায়ী করে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন এবং অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে আবারও সেই ফ্যাসিবাদের যুগে আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কি না এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে। দেশে সুস্থধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠার গণআকাক্সক্ষার বিপরীতে পরিকল্পিত অপপ্রচার, অশ্লীল শ্লোগানের মাধ্যমে আবারো ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও আওয়ামী লীগের কণ্ঠস্বরের প্রতিধ্বনিই শোনা যাচ্ছে। 
ফখরুলের অভিযোগ, পূর্বপরিকল্পিত ভাবে ৯ জুলাইয়ের ঘটনা ১১ জুলাই শুক্রবার জুমার নামাজের পর, সবচেয়ে প্রাইম টাইমে ইন্টারনেটে ছড়ানো শুরু হয়। পরিকল্পিত ভাবে নির্দিষ্ট কিছু সোশ্যাল মিডিয়া আইডি ও পেজ থেকে আগে থেকেই তৈরি করে রাখা ফটোকার্ডগুলো অনলাইনে ছড়ানো শুরু হয়। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, অনলাইনে ভুয়া তথ্য প্রচারের ক্যাম্পেইন শুরুর আগে থেকেই অপপ্রচার সামগ্রী তৈরি করে রাখা হয়েছিল। 
তিনি বলেন, অপরাধীর জন্য কোনো অনুকম্পার সুযোগ যেমন নেই তেমনি পক্ষ অবলম্বনের প্রশ্নই উঠে না। শুধুমাত্র অভিযোগের ভিত্তিতে দলীয় পদ থেকে অপসারনের এমন দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপকে স্বাগত না জানিয়ে পরিকল্পিতভাবে চরিত্রহনন; দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দ্রুত কার্যকর করার বিষয়ে বিএনপি’র দলীয় অবস্থান সুদৃঢ় এবং অপরিবর্তিত আছে বলেও জানান মির্জা ফখরুল।
সোহাগ হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে বিএনপি কমিটি করবে জানিয়ে ফখরুল বলেন, নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের অন্তর্নিহিত কারণ অনুসন্ধানের জন্য আমরা উপযুক্ত ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে একটি ‘তদন্ত ও তথ্যানুসন্ধানী কমিটি’ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি যারা  প্রকৃত সত্য  উদ্ঘাটন করবেন এবং তা  জনসম্মুখে  প্রকাশ করবেন। কিন্তু এ বিষয় নিয়ে যারা রাজনৈতিক পরিবেশ নষ্ট এবং জাতীয় নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত ও অনিশ্চিত করতে চান এবং প্রকারান্ত ফ্যাসিবাদ উত্থানের পথ কারা সৃষ্টি করতে চান, তাদেরকে চিহ্নিত করা  ও প্রতিহত করার প্রত্যয়ও একইসাথে উচ্চারণ করতে চাই। 
অপরাধীর কোনো দলীয় পরিচয় থাকতে পারে না জানিয়ে ফখরুল বলেন, ব্যক্তির অপরাধের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই।
ফখরুল বলেন, দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে ঐক্যবদ্ধ জাতিকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ আজ উন্মোচিত। এই অপরাজনীতি প্রতিহত করার ক্ষেত্রে সরকারের উদাসীনতার প্রতি আমরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছি। 
গুটি কয়েক রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রকারীর অপচেষ্টায় বাংলাদেশ ব্যর্থ হতে পারে না এমন মন্তব্য করে ফখরুল বলেন,  ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশে ষড়যন্ত্রকারীদের কোনো অপচেষ্টাই আমাদের লক্ষ্য অর্জনের পথে বাধা হতে পারবে না। সংঘাত সৃষ্টির পরিকল্পিত ফাঁদে পা না দিয়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্যকে বিনষ্ট করার যে কোনো ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। ফ্যাসিবাদের অনুপ্রবেশের যে কোনো ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র আমরা এই বাংলাদেশে বাস্তবায়িত হতে দেব না। সকল গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যবদ্ধ অবস্থানকে সাথে নিয়ে এদেশে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সংকল্পে আমরা বরাবরের মতই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, পতিত স্বৈরাচার আর কাপুরুষ  ষড়যন্ত্রকারীদের মিলিত অপচেষ্টা, সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও আগামীর বাংলাদেশ গড়ার পথে যদি কোনো বাধা হয়ে আসে তবে সেটা আমরা ঐক্যবদ্ধ গণতান্ত্রিক শক্তির মাধ্যমে প্রতিহত করবো।
মির্জা ফখরুল বলেন, মিটফোর্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু রাজনৈতিক মহল ও চক্র দেশের রাজনীতিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। 
চক্রান্তকারীদের পরিকল্পনাকে ‘অত্যন্ত ভয়াবহ’ উলে­খ করে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে বাংলাদেশে আবার অস্থিতিশীলতা, অস্থিরতা ও বিভাজন সৃষ্টি করে গণতন্ত্রকে কবরস্থ করার চেষ্টা চলছে।
তিনি বলেন, আমরা যেভাবে ফ্যাসিস্টকে বিতাড়িত করতে পেরেছি, ঠিক সেভাবেই জনগণকে সঙ্গে নিয়ে যেন কোনোদিন আবার ফ্যাসিস্ট চালু হতে না পারে তার ব্যবস্থা অবশ্যই আমরা করবো।
নেতা-কর্মীদের প্রতি নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, আমরা যেন কারো পাতা ফাঁদে পা না দেই। তারা আমাদের উত্তেজিত করে তাদের পাতা ফাঁদে ফেলতে চাইছে। আমরা উত্তেজিত না হয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে গণতন্ত্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে গণতন্ত্র চাই।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।