খুলনা | বুধবার | ১৬ জুলাই ২০২৫ | ১ শ্রাবণ ১৪৩২

খুলনা-পাইকগাছা-কয়রা সড়কে বাস চলবে আজ থেকে

সড়কের খানাখন্দে পড়ে ঘুরছে না গাড়ির চাকা দুর্ভোগে নাকাল দক্ষিণের মানুষের জীবনযাত্রা

পারভেজ মোহাম্মদ/তৃপ্তি রঞ্জন সেন |
০১:০৩ এ.এম | ১৬ জুলাই ২০২৫


সুন্দরবন তীরবর্তী কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলার কয়েক লক্ষ মানুষের সড়কপথে যাতায়াতের একমাত্র পথ কয়রা-পাইকগাছা-খুলনা সড়ক। সড়কের বেহাল দশায় গত তিন দিনে দুই দফা বন্ধ হয়েছে বাস চলাচল। বৃদ্ধি পেয়েছে জনদুর্ভোগ, চরম বিপাকে পড়েছে দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষ। খুলনা হতে পাইকগাছার দূরত্ব ৬৫ কিলোমিটার। পাইকগাছা থেকে কয়রার দূরত্ব ৩৩ কিলোমিটার। বিগত সরকারের আমলে প্রায় ৪শ’ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পে শুরু হয় উন্নয়ন কাজ। শেখ পরিবারের আস্থাভাজন ঠিকাদার মেসার্স মোজাহার এন্টারপ্রাইজ আঠারো মাইল থেকে কয়রা পর্যন্ত কাজ শুরু করেন দুর্নীতির মহোৎসব করে। কচ্ছপ গতির এ কাজে উন্নয়নের মানসিক প্রশান্তি রূপ নেয় দুর্ভোগের চরম সীমায়। সড়ক প্রশস্তকরণ এবং সরলিকরণের নামে জন ভোগান্তি রূপ নিয়েছে জনদুর্ভোগে। সবশেষ ফ্যাসিস্ট  সরকার ও শেখ পরিবারের দেশত্যাগের পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ ফেলে দিয়ে হয়েছে লাপাত্তা। 
এদিকে গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে সড়কটি। বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ ও বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়ে পানি জমার ফলে ঘটছে দুর্ঘটনা। গর্ততো নয় যেন মৃত্যু কূপ। শক্ত হাতে স্টিয়ারিং ধরে গাড়ি আগলে রাখা দায়। প্রতিমুহূর্তে জীবনের ঝুঁকি বাড়ছে। প্রয়োজন মেটাতে শত ভীতি উপেক্ষা করে পথ চলতে হচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষের। এমনটি জানালেন বাস ড্রাইভার তুষার। 
সরেজমিনে দেখা গেছে, এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন বাস, সিএনজি চালিত অটো রিকশা, ট্রাক, পিকআপ, কাভারভ্যান ও বিভিন্ন ব্যক্তিগত গাড়িসহ আঞ্চলিক রুটের থ্রি হুইলার চলাচল করে। সা¤প্রতিক সময়ে সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে যানবাহন গুলো প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। 
রোববার প্রথম দফায় খুলনা-পাইকগাছা-কয়রা সড়কে বেহাল দশার কারণে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই যাত্রীবাহী বাস বন্ধ করে দেয় শ্রমিকরা। গাড়ি বন্ধের কারণে শত-শত যাত্রী বাসস্ট্যান্ডে এসে বিপাকে পড়েছে। গতকাল (মঙ্গলবার) ও একই কারণে দ্বিতীয় দফায় বন্ধ হলো বাস চলাচল। অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে অনেকে মোটরসাইকেল, ইজিবাইক, মাহিন্দা ভাড়া করে গন্তব্যে যাচ্ছে।
শনিবার গভীর রাতে কপিলমুনির ফকিরবাসা মোড় ও তালা থানার পাশে বেহাল রাস্তায় ট্রাক আটকে যায়। সে কারণে ভোর থেকে সকল ধরনের বাস-ট্রাক বন্ধ ঘোষণা করে বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক সমিতি। গতকাল মুচির পুকুর পাড় মোড়ে পণ্যবাহী ট্রাক সড়কের ভাঙা গর্তে আটকে যাওয়ায় নতুন করে বাস  চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
খুলনা জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, খুলনা-পাইকগাছা রুটে  ১২০টি গাড়ি  আন্তঃ জেলা চলাচল করে এবং ৭০টি দূরপাল­া ঢাকার পরিবহন চলাচল করে এ সড়কে। 
কয়রার মনিরুল ইসলাম অসুস্থ মাকে নিয়ে খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। মুচির পুকুর মোড়ে ট্রাক আটকে থাকার কারণে কিছুটা বিরক্তিকর সময় পার করেন। 
সাংবাদিক পরিচয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আপনারা এই রাস্তায় চলাফেরা করেন না। কিছু বলেন উপরমহলে। তা না হলে ভিক্ষার দরকার নেই ভাই, কুত্তা ঠেকাতে বলেন। আমরা আর ভোগান্তি নিতে পারছিনা।
বাসযাত্রী আজগর জানান, খুলনা কোর্টে জরুরি কাজে যেতে হবে। বাস বন্ধের কারণে বিপাকে পড়েছি। পকেটে টাকা কম থাকায় মোটরসাইকেলেও যাওয়া সম্ভব না।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুলতানা জানান,  বাড়িতে এসে এখন যেতে পারছি না। নিরুপায় হয়ে বাড়ি ফিরে যেতে হবে। 
ব্যবসায়ী সাজ্জাদ জানান,  কপিলমুনির ফকিরবাসা মোড়, গোলাবাটী মোড়, মুচির পুকুর, তালার থানার সামনের মোড়ের অবস্থা খুবি খারাপ। আর খুলনা থেকে ১৮ মাইলে তো উন্নয়নের নতুন মেরুকরণ, পিচের উপর হচ্ছে ইটের সলিং। 
এ সময় বাস ড্রাইভার বক্কার জানান, বেহাল সড়কের কারণে গাড়ি চালাতে খুব সমস্যা হচ্ছে। যাত্রীরা চরম ভোগান্তি পাচ্ছে।
বাস মালিক সমিতির সহ-সভাপতি অমরেশ কুমার মন্ডল বলেন, আঠারো মাইল থেকে পাইকগাছা পর্যন্ত ৬ স্থানের রাস্তার খুব খারাপ অবস্থা। আমরা মালিক সমিতির পক্ষ থেকে ইট-বালু ফেলে মেরামতের চেষ্টা করছি। আমরা বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। জেলা প্রশাসকের কাছে দশ চাকার গাড়ি বন্ধের দাবি জানিয়েছি। কাল (আজ বুধবার) থেকে বাস চলাচল করবে বলে মালিক সমিতির এ কর্মকর্তা জানান। 
খুলনা সওজ নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ তানিমুল হক জানান, ভাঙা সড়কে মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। অচিরেই সড়ক চলাচল স্বাভাবিক হবে।
পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহেরা নাজনীন জানান, এক্সেন সাহেবকে বিষয়টি জানিয়েছি। বাস চলার একমাত্র পথ  বন্ধ, জনদুর্ভোগ  বেড়েছে। মালিক সমিতির পক্ষ থেকেও তাকে জানানো হয়েছে। ১০ চাকার গাড়ি যাতে এই সড়কে চলাচল না করে সে বিষয়টি নিয়েও কথা হয়েছে। রাস্তা সংস্কার করে দ্রুত দুর্ভোগ লাঘবের চেষ্টা চলছে।