খুলনা | বৃহস্পতিবার | ১৭ জুলাই ২০২৫ | ২ শ্রাবণ ১৪৩২

গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে হামলাকারীদের গ্রেফতার চায় জামায়াত

খবর প্রতিবেদন |
০৬:৩৮ পি.এম | ১৬ জুলাই ২০২৫


গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পূর্বঘোষিত ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিতে হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জামায়াত। একইসঙ্গে এই হামলায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিও জানিয়েছে দলটি।

বুধবার (১৬ জুলাই) বিকেলে দেওয়া এক বিবৃতিতে এই দাবি জানিয়েছেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।

প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘পতিত আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসরদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি প্রদানের জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘গোপালগঞ্জ জেলায় এনসিপির পূর্বঘোষিত ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিতে পতিত আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সন্ত্রাসী দোসররা হামলা চালিয়েছে। এনসিপির নেতৃবৃন্দ স্বাভাবিক নিয়মে প্রশাসনের সঙ্গে পূর্ব থেকেই আলাপ আলোচনা করে তাদের কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহায়তা চেয়েছে। যেকোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা প্রশাসনের দায়িত্ব।’

জামায়াতের এই শীর্ষ নেতার দাবি, ‘কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকর তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। এটি উদ্বেগজনক। গোপালগঞ্জ বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো জেলা নয়। এটি বাংলাদেশেরই অংশ। সরকারকে গোপালগঞ্জসহ বাংলাদেশের সর্বত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে খুনি শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের পতন হয়েছে। কিন্তু দেশ এখনো ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়নি। পতিত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন চালিয়েছে। তারা দেশকে আবারও অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে অপতৎপরতা চালাচ্ছে। তারা নানা অপতৎপরতা চালিয়ে ফায়দা হাসিল করতে চায়। তারই অংশ হিসেবে আজ এনসিপির পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, ভাঙচুর চালিয়েছে।’

গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, ‘আওয়ামী দুর্বৃত্তরা ইউএনওসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়ি ভাঙচুর করে তাতে অগ্নিসংযোগ করেছে। এই সন্ত্রাসী ঘটনায় কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আমি তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি এবং আওয়ামী দুর্বৃত্তদের এই সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

এদিকে গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাদের ওপর আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের হামলা ও অবরুদ্ধ করার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

একইসঙ্গে তিনি এনসিপি নেতাকর্মীদের উদ্ধারসহ সার্বিক ব্যবস্থা নিতে বর্তমান সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় পরিস্থিতি যা হবে তার দায় সরকারকে নিতে হবে বলে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।

বুধবার (১৬ জুলাই) এক ফেসবুক পোস্টে তিনি এই আহ্বান জানিয়েছেন। জামায়াত আমিরের প্রশ্ন, ‘গোপালগঞ্জে কী হচ্ছে?’

তিনি লিখেছেন, ‘গোপালগঞ্জ তো বাংলাদেশেরই অংশ। যতদূর জানতে পেরেছি, এনসিপির নেতৃবৃন্দ স্বাভাবিক নিয়মে সর্বপর্যায়ের প্রশাসনের সঙ্গে পূর্ব থেকেই আলাপ-আলোচনা করে তাদের কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহায়তা চেয়েছেন। এটি তাদের রাজনৈতিক অধিকার।’

সেখানকার সংঘর্ষের বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করে জামায়াত আমির লিখেছেন, ‘কিন্তু এখন যে অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে, কার্যত মাঠে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো উপস্থিতিই লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। অতি দ্রুত সরকারকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় ইতিহাসের পূর্ণ দায় সরকারের ওপরেই বর্তাবে।’

সবশেষে তিনি লিখেছেন, ‘আমরা সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণকে সকল ধরনের উশৃঙ্খলতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই এবং শান্তিপ্রিয়, ফ্যাসিবাদবিরোধী জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আন্তরিক আহ্বান জানাচ্ছি। মহান আল্লাহ সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে তার সাহায্য প্রেরণ করুন। আমিন।’

বুধবার গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশ ছিল। এদিন দুপুর ২টার পর জেলার পৌর পার্কের উন্মুক্ত মঞ্চে সমাবেশটি শুরু হয়। সেটি শুরুর আগে বেলা দেড়টার দিকে সমাবেশের মঞ্চে এক দফা হামলার ঘটনা ঘটে।

এরপর সমাবেশ শেষে ফের এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায় গোপালগঞ্জের স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ। ভাঙচুর করা হয় নতুন এ দলটির গাড়িবহর।

এদিন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে হঠাৎ করে মিছিল নিয়ে এসে মঞ্চে চড়াও হয়। এসময় সাউন্ড বক্স, মাইক ও চেয়ার ভাঙচুর করার পাশাপাশি এনসিপির উপস্থিত নেতাকর্মীদেরও মারধর করে তারা। কিন্তু হামলার পরও সমাবেশে অংশ নেন এনসিপি নেতারা।

পরে সমাবেশ শেষে দুপুরের দিকে আরও এক দফা হামলা চালানো হয়। গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। এসময় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। হামলারকারীরা তাদের ওপরও চড়াও হয়। পরে তারা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গিয়ে আশ্রয় নেন।