খুলনা | শনিবার | ১৯ জুলাই ২০২৫ | ৪ শ্রাবণ ১৪৩২

স্বস্তিতে নেই সাধারণ মানুষ, বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নিন

|
১২:২১ এ.এম | ১৮ জুলাই ২০২৫


স্বস্তিতে নেই সাধারণ মানুষ। দ্রব্যমূল্য নিয়ে তারা চরম অস্বস্তিতে আছেন। গত শীতে একবার সবজির দাম কিছুটা কমলেও অন্য খাদ্যপণ্যের দাম দরিদ্র মানুষের ক্রয়ক্ষমতার নাগালের বাইরে ছিল। শীতের পর নিত্যপণ্যের বাজারে আর স্বস্তি ফিরে আসেনি। গত দু-তিন দিনে আবার দ্রব্যমূল্য গরিব মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে। গষমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি সপ্তাহে কোনো না কোনো জিনিসের দাম হঠাৎ বেড়ে যায়। দাম একবার বাড়লে আর কমে না। সরকারের পরিবর্তন হয়েছে প্রায় এক বছর। কিন্তু বাজার ঠিক হচ্ছে না। চালের এখন ভরা মৌসুম; অথচ চালের দাম বেশি। 
দেশে গত এক বছরে ১৩ লাখ মেট্রিক টনের মতো চাল আমদানি হয়েছে। গত বোরো মৌসুমে ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু এতে চালের দাম কমেনি, বরং বেড়েছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, বাজারে মোটা চালের সর্বনিম্ন দর উঠেছে প্রতি কেজি ৫৫ টাকায়, যা এক মাস আগে ছিল ৫০ টাকা। মাঝারি চালের কেজি ৬০-৬৫ টাকা। সরু চাল কিনতে লাগছে প্রতি কেজি ৭৫-৮৫ টাকা।
অভিযোগ রয়েছে, মিলমালিকদের সিন্ডিকেটের কারণে চালের দাম কমছে না। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল বিপুল। কিন্তু সিন্ডিকেটের দুষ্টচক্র থেকে এই সরকারও মুক্তি দিতে পারছে না। সাধারণ মানুষ তাই প্রশ্ন করছেন, এখন চালের দাম বৃদ্ধির কারণ কী? গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত একটা সরকার কেন এই সিন্ডিকেট নির্মূল করতে পারছে না?  
চালের এই মূল্যবৃদ্ধি অনেক দিন ধরেই সাধারণ মানুষের শিরঃপীড়ার কারণ হয়ে আছে। শুধু চাল নয়, মাছের ও সবজির দামও চড়া। অন্য মাছের তুলনায় পাঙাশ ও তেলাপিয়া মাছের দাম সব সময়ই কম ছিল। সংগত কারণেই এই দুই ধরনের মাছ গরিব মানুষ কিনতেন। কিন্তু তাতেও দামের উত্তাপ সাধারণ মানুষকে বিপন্ন করে তুলছে। এখন বর্ষাকাল। মাছের ভরা মৌসুম। বাংলাদেশের মানুষের পছন্দ মিঠাপানির মাছ। এই মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে গত বছর জুনে বাংলাদেশ বিশ্বে ছিল দ্বিতীয়। কিন্তু এবার এই ভরা মৌসুমে মাত্র এক বছরের ব্যবধানে এই মাছের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। গরিবের পাতে মাছের তেমন ঠাঁই হচ্ছে না। দাম কম হওয়ায় যে পাঙাশ ও তেলাপিয়া তাদের প্রিয়, সেই মাছ তারা কিনতে পারছেন না। মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে বিভিন্ন ধরনের মাছের দাম কেজিতে ৮০ থেকে ১০০ টাকা বেড়ে গেছে। 
কাজলি, ট্যাংরা, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার কমে মেলে না। বেলে মাছও ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা কেজি। চাষের রুই-কাতলাসহ অন্য মাছের দামও কেজিতে ৫০ টাকার বেশি বেড়েছে। রুই, কাতলা মাছের কেজি ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, পাবদা ৪৫০ থেকে ৫০০, চিংড়ি ৫০০ থেকে ৮০০ এবং কাচকি মাছ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে ইলিশ নিয়ে প্রায় সবার মধ্যে মৎস্যরসনা জেগে ওঠে। সেই ইলিশ মাছের কেজি ৩ হাজার টাকা ছাড়িয়েছে।
নিঃসন্দেহে এই মূল্যবৃদ্ধি আকাশচুম্বী। মধ্যবিত্তের আয়ত্তে¡ও থাকছে না। গরিবের পাত থেকে মাছ যেমন উঠে যাচ্ছে, তেমনি ইলিশ মাছকে ঘিরে মধ্যবিত্তের যৎকিঞ্চিৎ বিলাসী হওয়ার সুযোগ তো দূরের কথা, ন্যূনতম পুষ্টির জোগান পাওয়া যাবে কি না, সেই শঙ্কা দেখা দিয়েছে। 
শুধু মাছ নয়, সবজির দাম কম, এ রকম আপ্তবাক্যে স্বস্তি মিলছে না। সব ধরনের সবজির দাম বেড়ে উচ্চবিত্ত ও ধনীরা ছাড়া সবার ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। খবরের কাগজের প্রতিবেদকের কাছে এক নারী ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘আমরা কোথায় যাব? খাব কী? চালের পর মরিচের দামও বেড়ে গেছে। এবার আমাদের প্রিয় মাছ পাঙাশ, তেলাপিয়ার দামও বেড়ে গেছে। এই সরকারের এক বছর হয়ে গেল। তারা কী করছে।’
মূল্যস্ফীতি কমছে বলে সংবাদ প্রকাশিত হলেও আদতে বাজারে তার প্রতিফলন নেই। সরকারের করণীয় সম্পর্কে আমরা সেই পুরোনো কিছু কথারই পুনরাবৃত্তি করতে চাই। 
প্রথমত, বাজারের পণ্য কেনাবেচার ব্যবস্থাপনায় মনোযোগী হয়ে দাম কমানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, যত ধরনের সিন্ডিকেট আছে তার সবই ভেঙে দিতে হবে। তৃতীয়ত, সরকার যে এ বিষয়ে আন্তরিক সাধারণ মানুষ যেন তা বুঝতে পারেন। কীভাবে এই মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, সরকার সেটা ভালোই জানে। প্রয়োজন সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করা। এ কথা তো অনস্বীকার্য, বাজরের হালচালের ওপরই অনেকাংশে নির্ভর করে একটা সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা।