খুলনা | শুক্রবার | ১৮ জুলাই ২০২৫ | ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন, যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক ২০

গোপালগঞ্জে কারফিউ চলবে, বিরতি তিন ঘণ্টা

খবর ডেস্ক |
০২:১০ এ.এম | ১৮ জুলাই ২০২৫


গোপালগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও এনসিপির কর্মসূচিতে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের হামলার পর জারি করা কারফিউ তিন ঘণ্টা বিরতির পর আজ শুক্রবার দুপুর ২টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত চলবে। এর আগে বুধবার জারি করা কারফিউ আজ শুক্রবার বেলা ১১টা পর্যন্ত চলবে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়, বুধবার রাত ৮টা থেকে আজ (গতকাল বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গোপালগঞ্জে চলমান কারফিউ আগামীকাল (আজ শুক্রবার) বেলা ১১টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। আগামীকাল (শুক্রবার) বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টার জন্য কারফিউ বন্ধ থাকবে। পরে দুপুর ২টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কারফিউ চলমান থাকবে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এর আগে বুধবার রাত ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গোপালগঞ্জে কারফিউ জারির কথা জানানো হয় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে। এর আগে বুধবার দুপুরে হামলার ঘটনার পর গোপালগঞ্জ জেলাজুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করেন জেলা প্রশাসক মোঃ কামরুজ্জামান।
গোপালগঞ্জের ঘটনায় ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন : গোপালগঞ্জে সংঘটিত সহিংস ঘটনার তদন্তে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে  জানানো হয় যে, গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি। কমিটিতে আরও থাকবেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের একজন করে অতিরিক্ত সচিব।
কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ ও নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার দফতরে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার পুনরায় নিশ্চিত করছে যে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও জনশৃঙ্খলা বজায় রাখার পাশাপাশি সহিংসতা, প্রাণহানি বা যেকোনো বেআইনি কর্মকাণ্ডে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে গোপালগঞ্জ শহরের পৌরপার্ক এলাকায় ১৬ জুলাই জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা রেঞ্জের পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) রেজাউল করিম মলি­ক।
রেজাউল করিম মলি­ক জানান, গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্ব পালন না করে থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি আরও জানান, গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় ২০ জনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে এলাকার পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে।
এদিকে গোপালগঞ্জ শহরের পৌরপার্ক এলাকায় এনসিপির পদযাত্রা কর্মসূচিতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের হামলা ও সহিংসতার পর বুধবার রাত ৮টা থেকে চলছে কারফিউ। থমথমে পরিস্থিতি প্রায় পুরো জেলায়। শহরে ছোট ছোট যানবাহন চললেও বন্ধ বেশির ভাগ দোকানপাট।
সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কে থাকা ইট-পাটকেল, তোরণ গেট, ব্যানার, ফেস্টুন ও ফেলে রাখা গাছসহ ধ্বংসস্তূপ সরানো হচ্ছে।
এছাড়াও জেলা কারাগারে হামলার পর নিরাপত্তায় রয়েছেন সেনা ও বিজিবির সদস্যরা। সঙ্গে সারা শহর টহল দিচ্ছেন নৌবাহিনীসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যরা। কারাগার পরিদর্শন শেষে অতিরিক্ত কারা পরিদর্শক জানান, নতুন করে হামলার শঙ্কা নেই।
এদিকে বুধবার রাত ৮টায় শুরু হওয়া ২২ ঘণ্টার কারফিউয়ের কারণে বৃহস্পতিবার নগরীর গেটপাড়া থেকে লঞ্চঘাট পর্যন্ত এলাকায় বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ দেখা গেছে।
তবে রাস্তায় রিকশা ভ্যান ও হালকা কিছু যানবাহন চলছে। রাস্তায় মানুষের উপস্থিতিও কম। শহর জুড়ে পুলিশের কয়েকটি গাড়ি টহলরত অবস্থায় আছে।
যৌথ বাহিনীর অভিযান, আটক ২০ : গোপালগঞ্জে এনসিপি পদযাত্রা ও সমাবেশকে কেন্দ্র করে বুধবার দিনব্যাপী সংঘর্ষের পর রাত থেকে কারফিউ জারি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে এলাকায় যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
কারফিউয়ের মধ্যে এ পর্যন্ত ২০ জনকে আটকের খবর নিশ্চিত করেন গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মীর মোঃ সাজেদুর রহমান। মূলত বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে এই ২০ জনকে আটক করার কথা জানান তিনি।
আটককৃতদের গোপালগঞ্জ সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। আটকদের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জানান ওসি মীর মোঃ সাজেদুর রহমান। গোপালগঞ্জের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে বলেও জানান তিনি।
গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ড. রুহুল আমিন সরকার আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৫ জনকে আটক করেছে সেনাবাহিনী। পুলিশ আটক করেছে ৫ জন। এ নিয়ে মোট ২০ জন আটক আছে। সবাইকে অভিযান চালিয়ে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ প্রক্রিয়া চলমান। 
উলে­খ্য, সারাদেশে মাসব্যাপী পদযাত্রার অংশ হিসেবে বুধবার গোপালগঞ্জে যান এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা। এর আগে মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) রাতে তারা এটিকে ‘লং মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ হিসেবে নামকরণ করেন। এরপর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। গোপালগঞ্জের স্থানীয় আ’লীগ ও ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা এটি প্রতিহতের ঘোষণা দেন।
এর আগে বুধবার (১৬ জুলাই) গোপালগঞ্জে ছিল এনসিপির ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচি। এদিন দুপুর ২টার পর পৌর পার্কের উন্মুক্ত মঞ্চে কর্মসূচি শুরু হয়। সভা শুরুর আগে সমাবেশের মঞ্চে এক দফা হামলা চালায় সেখানকার আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ। বুধবার দুপুরের পর অনুষ্ঠানস্থল ঘিরে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হলেও পরে তা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়। এ ঘটনায় অন্তত চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া পুলিশ, সাংবাদিক, সাধারণ পথচারীসহ আহতের সংখ্যা কয়েকশ’। ঘটনার পর জেলাজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে এদিন রাত ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করে স্থানীয় প্রশাসন। হামলাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের আল্টিমেটাম দিয়েছে এনসিপি।
এই হামলার পরও সমাবেশে যোগ দেন এনসিপির নেতারা। এরপর সমাবেশ শেষ হলে ফের তাদের ওপর হামলা চালায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ। ভাঙচুর করা হয় নতুন এ দলটির গাড়িবহর। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ এগিয়ে গেলে তাদের উপরও হামলা হয়।  পরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আশ্রয় নেন এনসিপির নেতারা। কিছু সময় পর সেনাবাহিনীর পাহারায় গোপালগঞ্জ থেকে খুলনার দিকে যাত্রা করেন তারা।