খুলনা | শনিবার | ১৯ জুলাই ২০২৫ | ৪ শ্রাবণ ১৪৩২

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহিদ মুগ্ধের কবর জিয়ারত, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ

খবর প্রতিবেদন |
০১:৩১ এ.এম | ১৯ জুলাই ২০২৫


গেল বছরের ১৮ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের উত্তাল সময়ে শহিদ হয়েছিলেন মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় তাকে স্মরণ করেছেন সহপাঠী-বন্ধু, স্কাউট সদস্য এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সহযোদ্ধারা। প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরার কামারপাড়া (বামনারটেক) কবরস্থানে তারা মুগ্ধের কবর জিয়ারত করতে আসেন।
আবেগাপ্লুত সহপাঠী-বন্ধুরা : জুমার নামাজের পর মুগ্ধের তিন বন্ধু মনজুরুল করিম (বাল্যকালের বন্ধু), সাজ্জাদ হোসেন (স্কাউট বন্ধু) এবং আল আমিন (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বড় ভাই) মুগ্ধের কবর জিয়ারত করেন। তাঁরা মুগ্ধের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
দুপুর আড়াইটায় কবর জিয়ারতে আসেন গত বছর মুগ্ধকে কবর দিতে নিয়ে আসা বন্ধু আশিক। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস (বিইউপি)-এর শিক্ষার্থী আশিক বলেন, মুগ্ধ আমার খুব ভালো বন্ধু ছিল। ওর মতো সাহসী আর মানবিক ছেলে খুব কমই দেখেছি। ওকে শেষ বিদায় জানানোর সেই কঠিন মুহূর্ত আজও আমার চোখে ভাসে।
সহযোদ্ধাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি : বেলা ২টা ২৭ মিনিটে যুবশক্তি উত্তরা পশ্চিম থানার সদস্য আনিসুল হক, সাখাওয়াত হোসেন এবং শাহেদ শাহরিয়ারসহ জুলাই আন্দোলনের সহযোদ্ধারা মুগ্ধের কবর জিয়ারত করেন। আনিসুল হক বলেন, মুগ্ধ আমাদের অনুপ্রেরণা ছিল। দেশের জন্য ওর আত্মত্যাগ আমরা কখনো ভুলবো না।
পরিবার ও স্কাউট সদস্যদের শ্রদ্ধাঞ্জলি : বেলা আড়াইটায় মুগ্ধের বড় ভাই দীপ্ত এবং বাংলাদেশ স্কাউটের সদস্যরা কবর জিয়ারত করতে আসেন। বাংলাদেশ স্কাউটের একজন প্রতিনিধি বলেন, মুগ্ধ আমাদের স্কাউট আন্দোলনের একজন গর্বিত সদস্য ছিল। ওর আদর্শ আমাদের সবার জন্য পাথেয় হয়ে থাকবে।
এ সময় মুগ্ধের মীর মাহমুদুর রহমান দীপ্ত বলেন, আমার ভাই দেশের জন্য জীবন দিয়েছে, আমরা গর্বিত। আমরা চাই ওর আত্মত্যাগ যেন বৃথা না যায়।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, মুগ্ধ মারা যাওয়ার পর অনেকে রাস্তায় নেমে গেছে। কারো সঙ্গে কোনো কথা হয়নি, নিজে থেকেই সবাই চলে এসেছে। আসলে বাংলাদেশের মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ। উত্তরাবাসী, বিশেষ করে যারা স্কাউটে আছেন তাদের প্রতি অনেক বেশি কৃতজ্ঞ।
দীপ্ত বলেন, সবাই জানি আমরা একসময় না এক সময় ইন্তেকাল করব। কবরস্থানের এই আড়াই হাত জায়গায় আমাদের আসলে শেষ জায়গা হবে। আমরা মারা যাওয়ার পর আমাদের কয়জন মনে রাখবে, আমাদের জন্য সর্বোচ্চ হলে ১০০ জনের মতো দোয়া করতে পারে। কিন্তু আজ মুগ্ধ এবং জয়সহ সকল শহিদের জন্য পুরো দেশের মানুষ দোয়া করছে।
তিনি আরও বলেন, কেউ যদি হাজার কোটি টাকাও ইনকাম করে মানুষের মাঝে বিতরণ করে তারপরও কেউ মন থেকে দোয়া পাবে না। তবে মানুষের দোয়া পাওয়া এটাই আমাদের দিনশেষে আসল চাওয়া। আমরা দুনিয়া থেকে কিছু নিয়ে যেতে পারব না, শুধু মানুষের দোয়া ছাড়া।
মুগ্ধর বড় ভাই সবাইকে অনুরোধ করে বলেন, বাংলাদেশের যে পরিবর্তনটা আমরা চাচ্ছি, সেটা আমরা নিজেরা পরিবর্তন না হলে এই পরিবর্তন আসলে সম্ভব না। আমাদের বৈষম্যকে দূর করা এবং নিজেদের মধ্যে যে ভুলগুলো আছে এগুলোকে দূর করাই আমাদের সবচেয়ে বড় কর্তব্য।
মুগ্ধের কবর জিয়ারত করতে আসেন গণআন্দোলনে ৫ আগস্ট চানখার পুলে শহিদ হওয়া শাহরিয়ার খান আনাসের বাবা পলাশ।  
কবর জিয়ারতের পর মুগ্ধের কাছে একই সঙ্গে কবর দেওয়া আরও এক জুলাই যোদ্ধা শহিদ রিদোয়ান শরীফ রিয়াদ (জয়) এর বাসায় যান মুগ্ধের ভাই দীপ্ত এবং শহিদ আনাসের বাবা পলাশ। তিন শহিদ পরিবারের সদস্যদের মিলনে সেখানে এক আবেগঘন মুহূর্তের সৃষ্টি হয়েছিল।