খুলনা | মঙ্গলবার | ২২ জুলাই ২০২৫ | ৭ শ্রাবণ ১৪৩২

সমাবেশে যাওয়ার পথে বাস চাপায় দাকোপের জামায়াত আমিরসহ নিহত ২

নিজস্ব প্রতিবেদক, দাকোপ প্রতিনিধি |
০১:৫০ এ.এম | ২০ জুলাই ২০২৫


হাজারো মানুষের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় চির নিদ্রায় শায়িত হলেন সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণকারী দাকোপ উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আবু সাঈদ।
রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশে যাওয়ার পথে ফরিদপুরের ভাঙ্গা মোড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত দাকোপ উপজেলা আমীর মাওলানা আবু সাঈদের দাফন করা হয়। শনিবার আসর বাদ তারই কর্মস্থল চালনা বিল­ালিয়া আলিম মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। পরে চালনা সরকারি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। আজ রোববার মরহুমের কবর জিয়ারতে দাকোপে আসছেন জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের আমির ড. শফিকুল ইসলাম।
জানাজায় ইমামতি করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন। 
জানাজার পূর্বে তার জীবনীর উপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন দাকোপ বটিয়াঘাটা খুলনা-১ আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী মাওলানা আবু ইউসুফ, জেলা বিএনপি’র সাবেক আহবায়ক আমির এজাজ খান, জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী মাওলানা গাউসুল আজম হাদী, জেলা জামায়াত নেতা অধ্যাপক আবু রব, দাকোপ উপজেলা ইসলামী আন্দোলনের সভাপতি মাওলানা ইলিয়াছ হোসাইন, উপজেলা খেলাফাত মজলিসের সভাপতি মাওলানা মুস্তাফিজুর রহমান, চালনা বিল্লালিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা অজিহুর রহমান, উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারী অধ্যাপক অহিদুজ্জামান, মোঃ বেলাল হোসাইন, শেখ ইউনুস আলী টিটু। এ ছাড়া দাকোপ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসমত হোসেন, দাকোপ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ সিরাজুল ইসলাম, আসমত হোসেন, মোঃ সিরাজুল ইসলাম, মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান, জি এম আকতারুজ্জামান, মোঃ নজরুল ইসলাম, মেহেদী হাসান, নাঈম বিল্লাহ, নুরুন নবী সরদার, মাওলানা বেলাল হোসেনসহ উপজেলা জামায়াত, বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফাত মজলিস, হেফাজাতে ইসলাম ও উপজেলা ইমাম পরিষদের সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দ, এলাকার বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ শত শত মুসলি­ অংশ নেন।
এর আগে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় মহাসমাবেশে যাওয়ার পথে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বাসের চাপায় উপজেলা জামায়াতের আমিরসহ দু’জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ছয়জন। তাঁদের উদ্ধার করে ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
শনিবার ভোরে ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার সামনে এক্সপ্রেসওয়ের শুরুতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির ও চালনা বিল­ালিয়া আলিম মাদ্রাসার সহকারী মৌলভী মাওলানা আবু সাঈদ (৫২)। তিনি ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এ ছাড়া গুরুতর আহত অবস্থায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান একই উপজেলার বানিশান্তা গ্রামের জামায়াত কর্মী আমানত শেখ (৫৫)।
হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় মহাসমাবেশে খুলনা থেকে ২৬০টি বাসে যোগ দিচ্ছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। পথে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার মডেল মসজিদের সামনে যাত্রাবিরতি নিয়ে চা পান করছিলেন তাঁরা। এ সময় গাড়ির ব্যানারটি খুলে যাওয়ায় সেটি ঠিক করতে যান দাকোপ উপজেলা আমির মাওলানা আবু সাঈদ ও অন্যরা। এ সময় পেছন দিক থেকে এসে রয়্যাল পরিবহনের একটি বাস সজোরে চাপা দিলে ঘটনাস্থলে মাওলানা আবু সাঈদ নিহত হন। দুর্ঘটনার পর বাসটি দ্রুত পালিয়ে যায়।
গুরুতর আহত মোঃ আমানত শেখ, মোঃ আনিসুর রহমান ও মোঃ ইকবাল হোসেনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আমানত শেখ।
ভাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, ‘শনিবার ভোররাতের দিকে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই একজন নিহত হন। এ ছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকালে আরেকজনের মৃত্যু হয়। একজনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
মাওলানা আবু সাঈদ চালনা বিল­ালিয়া আলিম মাদ্রাসার সহকারী মৌলভী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এ ছাড়া তিনি ছিলেন চালনা বিল­ালিয়া আলিম মাদ্রাসা সংলগ্ন বায়তুস সালাম জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব। তার স্ত্রী ও চার মেয়ে রয়েছে।
জামায়াত নেতার লাশ গ্রহণ করেন ইসলামী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ : দাকোপ উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা আবু সাঈদের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে তার কফিন গ্রহণ করার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে দাকোপ উপজেলার প্রবেশদ্বার পানখালী ফেরিঘাটে ইসলামী আন্দোলনের একটি টিম অপেক্ষা করেন। ইসলামী আন্দোলন দাকোপ উপজেলার সভাপতি মাওলানা ইলিয়াস হোসাইনের নেতৃত্বে কফিন নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীরা মোটরসাইকেল বহর নিয়ে চালনা বিল­ালিয়া আলীয়া মাদরাসা প্রাঙ্গনে পৌছান। মরহুমের গোসল ও জানাজা এবং দাফনের প্রক্রিয়া অংশ গ্রহণ করেন। এ সময় ইসলামী আন্দোলনের নেতা শফিকুল ইসলাম,  মাওলানা মহাসিন আলম মাহবুবী, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, হাফেজ আব্দুল কাদের, ক্বারী আবু ইউসুফ, মাস্টার রফিকুল ইসলাম, আবু দাউদ, মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক, ছাত্রনেতা লোকমান ফকির, ছাত্রনেতা এস এম সাজিদ, মোঃ আখতার হোসেন, মুফতি ফেরদাউস হোসাইন, মাওলানা বিল­াল হোসেন আশরাফী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 
এদিকে দাকোপ উপজেলা আমীর মাওলানা আবু সাঈদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ এবং শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজন ও সহকর্মীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার । তিনি বলেন, মাওলানা আবু সাইদ ছিলেন ইসলামী আন্দোলনের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁকে শহিদের মর্যাদা দান করুন এবং জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব করুন। আমিন।
অপরদিকে জামায়াত নেতা মাওলানা আবু সাঈদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য খুলনা অঞ্চল সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, টিম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মশিউর রহমান খান, মাস্টার শফিকুল ইসলাম ও মুহাদ্দিস হাফেজ রবিউল বাশার, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য খুলনা জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন ও সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান ও সেক্রেটারি অ্যাড. শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল, বটিয়াঘাটা উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা শেখ মোঃ আবু ইউনুফ ও সেক্রেটারি ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল হাই বিশ্বাস, দাকোপ উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মাওলানা মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান, চালনা পৌরসভা জামায়াতের সভাপতি জি এম আকতারুজ্জামান ও সেক্রেটারি মোঃ নজরুল ইসলাম, উপজেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মেহেদী হাসান ও সেক্রেটারি নাঈম বিল্লাহ।