খুলনা | রবিবার | ২৭ জুলাই ২০২৫ | ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

আক্রান্ত বনরক্ষী : সুন্দরবনের দুর্বৃত্তদের ছাড় নয়

|
১২:০৫ এ.এম | ২৬ জুলাই ২০২৫


সুন্দরবন আমাদের জাতীয় সম্পদ। এই বনের ওপর নির্ভর করে টিকে আছে অসংখ্য প্রাণের অস্তিত্ব, দেশের অর্থনীতিতেও রয়েছে এর বিশাল অবদান। প্রাকৃতিক দুর্যোগেও রক্ষাকবচ সুন্দরবন। অথচ সেই বন আজ ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে। এক শ্রেণির লোভী ও দুর্বৃত্ত মাছ শিকারি বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে বনের বাস্তুতন্ত্রকে ধ্বংস করছে। আর তাদের এই অপকর্ম ঠেকাতে গিয়ে হামলার শিকার হচ্ছেন বনরক্ষীরা। তাঁরাই যদি নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েন, সুন্দরবনের নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত হবে?
প্রতিবেদন জানায়, ২০ জুলাই রাতে শাকবাড়িয়া টহল ফাঁড়ির বনরক্ষীরা বিষ ও জাল নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, এমন একটি দলকে থামাতে গিয়ে হামলার শিকার হন। সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে জেলেদের প্রবেশ যখন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, তখন এ ধরনের অনিয়ন্ত্রিত প্রবেশ এবং বিষপ্রয়োগের মাধ্যমে মাছ শিকার সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের জন্য এক মারাত্মক হুমকি। বনরক্ষীরা সাহসিকতার সঙ্গে তিনটি নৌকা জব্দ করলেও হামলাকারীরা লাঠি ও দা নিয়ে তাঁদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, সরকারি পোশাক ছিঁড়ে ফেলে এবং মারধর করে জব্দ করা নৌকা ছিনিয়ে নেয়। 
দুঃখজনক ভাবে এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ১০ জুলাই কয়রা টহল ফাঁড়ির বনকর্মীরা একই ভাবে হামলার শিকার হন। এর আগে জুন মাসে জব্দ করা নৌকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা এবং গত মার্চে হরিণ শিকারের মামলা দেওয়ায় এক বন কর্মকর্তাকে প্রকাশ্যে মারধরের ঘটনাও ঘটে। এই ঘটনাগুলো আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় সুন্দরবন আজ কতটুকু অরক্ষিত। 
বনরক্ষীরা নিজেদের জীবন বাজি রেখে বনের সুরক্ষায় কাজ করছেন, অথচ তাঁদেরই হামলার শিকার হতে হচ্ছে। আমরা মনে করি, শুধু মামলা করেই দায়িত্ব শেষ করলে চলবে না, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে বনরক্ষীদের নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজনে তাঁদের আধুনিক সরঞ্জাম সরবরাহ এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। সুন্দরবনের সুরক্ষায় পুলিশ ও বন বিভাগের যৌথ অভিযান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এই অভিযান আরও নিবিড় ও কার্যকর করতে হবে। 
বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকার রোধ করতে স্থানীয় মানুষের মধ্যেও গণসচেতনতা তৈরি করতে হবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পরিবেশ সংগঠন, সামাজিক সংগঠন, সরকারি ও বেসরকারি কর্তৃপক্ষকে এখানে যুক্ত করতে হবে। বিষ প্রয়োগ করে মাছ ধরা বন্ধের একটি সামাজিক আন্দোলন করা জরুরি।