খুলনা | রবিবার | ২৭ জুলাই ২০২৫ | ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

সুন্দরবনের বিভিন্ন খালে আশ্রয়

সাগর উত্তাল, বৈরী আবহাওয়ায় টিকতে না পেরে কিনারে ফিরছে জেলেরা

মাহমুদ হাসান, মোংলা |
১২:৪০ এ.এম | ২৭ জুলাই ২০২৫


নিম্ন চাপের প্রভাবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় উত্তাল সাগরে টিকতে না পেরে সুন্দরবনের বিভিন্ন খালে আশ্রয় নিয়েছে জেলেরা। গত দুই দিন যাবত মাছ ধরা বন্ধ রেখে বন উপকূলের বিভিন্ন স্থানে নোঙর করে অলস সময় পার করছেন তারা। দীর্ঘ ৫৮ দিনের অবরোধ ১১ জুন শেষ হওয়ার পরে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে কয়েক দফা বৈরী আবহাওয়ার কবলে পড়েছে ফিশিংবোটসহ জেলে বহর। দূর্যোগ আর বৈরী আবহাওয়া যেন জেলেদের পিছু ছাড়ছেনা। আর মাছ ধরতে না পেরে জেলে-মহাজনরা আর্থিক সংকটেও পড়েছেন। 
সুন্দরবন সংলগ্ন উপজেলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন বলেন এ এলাকা থেকে বেশ কয়েকটি ফিশিং ট্রলার মাছ ধরার জন্য সাগরে গমন করে। হঠাৎ সাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়। যার প্রভাবে সাগর উত্তাল হওয়ায় মাছ ধরতে না পেরে উপকূলের বিভিন্ন স্থানে শত শত ফিশিং ট্রলার নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে। দীর্ঘ ৫৮ দিনের অবরোধ শেষে ১১ জুন মধ্যরাত থেকে জেলেরা সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে কয়েক দফা দুর্যোগের কবলে পড়েছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে পুনরায় সাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ায় গত দুই দিন যাবৎ কয়েক শতাধিক ফিশিং ট্রলার মাছ ধরতে না পেরে সুন্দরবন সংলগ্ন মহিপুর, খেপুপাড়া, নিদ্রাসখিনা, পাথরঘাটাসহ উপকূলের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে ফলে জেলে ও ফিশিং ট্রলার মালিকরা জানিয়েছে। এতে প্রচুর আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন বলে জানায় এ জেলে প্রতিনিধি।
রাজৈর মৎস্যঘাটের আড়ৎদার কবীর হোসেন বলেন, সাগরে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করায় ফিশিং ট্রলার সাগরে না গিয়ে ঘাটে নোঙর করে আছে। মাছ ধরা বন্ধ থাকায় জেলে মহাজনরা এবার মহাসংকটে পড়েছেন। এক একটি ট্রলার সাগরে পাঠাতে কমপক্ষে প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ হয়। এ মৌসুমে সাগরে কেবল মাছ পড়া শুরু হচ্ছিল, এরই মধ্যে সাগর উত্তাল হওয়ায় জেলেরা টিকতে না পারায় কিনারে চলে আসে। যে মাছ পাওয়া গেছে তাতে খরচের টাকা ওঠবে না। বার বার সাগরে বৈরী আবহাওয়া জেলেদের উপর যেন মরার উপর খাড়ার ঘা বলে জানালেন কবীর আড়ৎদার।
বরগুনা জেলা ফিশিং ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দুলাল মাষ্টার বলেন দীর্ঘ ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞায় মাছ ধরতে না পেরে জেলেরা অর্থকষ্টে দিন পার করেছেন এবং হয়েছেন ঋণগ্রস্ত। অবরোধের পরে মাছ শিকারের আশায় বুক বেধে সাগরে গিয়ে জেলেরা তেমন মাছ পায়নি। মাছ ধরার অবৈধ ট্রলিংবোট সাগরে মাছের বংশ শেষ করে দিচ্ছে। এছাড়া এবারের অবরোধের পরে দুর্যোগ যেন জেলেদের পিছু ছাড়ছেনা। বার বার বৈরী আবহাওয়ার কারণে উত্তাল সাগরে জাল ফেলতে না পেরে ফিশিং ট্রলার ও জেলেবহর উপকূলে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছে বলে জানালেন তিনি।
বরগুনা জেলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন জেলে মৎস্যজীবিরা ধার দেনা করে সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে বৈরী আবহাওয়ায় উত্তাল সাগরে জাল ফেলতে না পেরে ট্রলার নিয়ে উপকূলের ফিরে এসেছে। লাখ লাখ টাকা খরচ করে ফিশিংবোট সাগরে গিয়ে মাছ ধরতে না পারায় বোট মালিকদের অপূরণীয় লোকসান হচ্ছে বলে জানালেন মোস্তফা চৌধুরী।
পূর্ব সুন্দরবনের দুবলর চরের আলোরকোল ফরেষ্ট টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেস্টার ফারুক আহমেদ মোবাইল ফোনে শনিবার বিকেলে জানায়, নিম্নচাপের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়ে পড়েছে। প্রচন্ড ঢেউ ও ঝড়ো বাতাসে সাগরে টিকতে না পেরে ফিশিং ট্রলারসমূহ উপকূলের দিকে চলে আসছে। বর্তমানে সাগরে প্রবল বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া বইছে বলে জানায় বনের এ কর্মকর্তা।