খুলনা | রবিবার | ২৭ জুলাই ২০২৫ | ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অপব্যবহার ‘অস্ত্রের চেয়েও মারাত্মক’

সংবিধান পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত আগের পদ্ধতিতেই নির্বাচন হবে : খুলনায় সিইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:০৮ এ.এম | ২৭ জুলাই ২০২৫


এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিনের আলোয় সম্পন্ন হবে। রাতের বেলায় কোনো কর্মকান্ড করতে চায় না নির্বাচন কমিশন। স্বচ্ছতার সাথে নির্বাচন পরিচালনা করতে চান। আর সংবিধান পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত আগের পদ্ধতিতেই নির্বাচন হবে। 
শনিবার সকালে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে খুলনা অঞ্চলের নির্বাচন কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকের শুরুতে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন। যতক্ষণ চেয়ারে আছেন ততোক্ষণ রাতের আঁধারে আর নির্বাচন হবে না বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি। 
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার এবং ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে ফিরিয়ে আনাকে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম নাসির উদ্দিন। তবে এর চেয়েও বড় হুমকি হিসেবে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ার অপতথ্য এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অপব্যবহারকে চিহ্নিত করেছেন, যা তার মতে ‘অস্ত্রের চেয়েও মারাত্মক’। 
তিনি গণমাধ্যমের সক্রিয় সহযোগিতা কামনা করে বলেন নির্বাচনের সামনে সবচেয়ে বড় দু’টি চ্যালেঞ্জ হলো নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করা। 
মানুষের অনীহা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি গেলেও যা হবে, না গেলেও তাই হবে। মানুষের মনের এই ধারণা পাল্টে দিয়ে নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি তাদের আগ্রহ ফিরিয়ে আনা আমাদের জন্য অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ।
সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, বহুবিধ ও নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, সোশ্যাল মিডিয়ার ভুল তথ্য ও অপতথ্য ছড়ানো ও এআই-এর অপব্যবহার আগামী নির্বাচনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখছে নির্বাচন কমিশন। এটাকে মডার্ন যুগের মডার্ন থ্রেট (হুমকি) মনে করা হচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা ও ভোটকেন্দ্রে মানুষকে আনাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ।
এজন্য তিনি সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করে তিনি বলেন, সবার সহযোগিতায় আমরা জাতিকে একটি ভালো নির্বাচন উপহার দিতে চাই, এটা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। বিদ্যমান আইন না বদলানো পর্যন্ত আগের নিয়মেই নির্বাচন হবে।
কবে নাগাদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হলে আপনারা জানতে পারবেন কবে নির্বাচন হবে। তার আগে বলা সম্ভব নয়। এ ছাড়া যখন নির্বাচনের তপশিল ঘোষিত হবে তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নির্বাচন কমিশনের অধীনে আসবে।
ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হবে কি না এই প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের কথা আমরা বলিনি, প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন দপ্তরকে বলেছেন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে।
তিনি আরও বলেন, আমরা কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নেই। আমরা একটি ইন্টেরিম সরকারের অধীনে আছি। তাই আমাদের দলীয় কোনো চাপ নেই। একটি সুন্দর, সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন জাতিকে উপহার দেওয়ার জন্য আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও স্বাভাবিক রাখার জন্য নানাবিধ কাজ চলছে।
খুলনা আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ের আয়োজনে মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফয়সাল কাদের। স্বাগত বক্তৃতা করেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফারাজী বেনজীর আহমেদ। অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 
অন্যদিকে, শনিবার বিকেলে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা খুলনা সার্কিট হাউজের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন।
অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আগামী নির্বাচন আমাদের সবার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। এ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশ সত্যিকারের গণতন্ত্রের দিকে যাবে। সুতরাং এ চ্যালেঞ্জে আমরা যদি ব্যর্থ হই তার খেসারত পুরো জাতিকে দিতে হবে। তিনি বলেন, অনেক প্রতিক‚লতা ও সীমাবদ্ধতা থাকবে, তবুও আমাদেরকে একটি সঠিক ও সুষ্ঠু নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে হবে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুল বা অপতথ্য ছড়ানোর বিষয়টি আমাদের ভাবাচ্ছে। আগামী নির্বাচনকালে অপতথ্যের বিস্তার এবং আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর অপব্যবহার বড় হুমকি হিসেবে দেখা দিতে পারে। আমরা দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে এসমস্যার সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে কাজ করছি। এটি আধুনিক যুগের আধুনিক হুমকি, যা অস্ত্রের চেয়ে মারাত্মক। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে মানুষকে সচেতন করতে  এবং এ সমস্যা সমাধানে প্রচলিত গণমাধ্যমগুলোর সহায়তা প্রয়োজন। একই সাথে মানুষকে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসতে গণমাধ্যমের ভূমিকা দরকার।  
প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, নির্বাচন আয়োজনের জন্য আইনশৃঙ্খলা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নিয়ে এ চ্যালেঞ্জ উতরাতে পারবো বলে বিশ^াস আছে। নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে সারাদেশে সম্ভাব্য আইনশৃঙ্খলাজনিত হুমকিগুলো পর্যালোচনা করা হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কোন আশঙ্কা থাকলে তা মোকাবেলার প্রস্তুতি আমাদের থাকবে। ২০২৪ এর ৫ আগস্ট ও তার ঠিক পরের সময়টিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল ছিলো। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতি সে সময়ের তুলনায় অনেক ভালো। নির্বাচনের তারিখ আসতে আসতে পরিস্থিতি আরো ভালো হবে বলে আশা করা যায়।
খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় খুলনা নৌ-অঞ্চলের কমান্ডার রিয়ার এ্যাডমিরাল গোলাম সাদেক, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) মোঃ ফিরোজ শাহ, রেঞ্জ ডিআইজি মোঃ রেজাউল হক, পুলিশ কমিশনার মোঃ জুলফিকার আলী হায়দার, খুলনা বিভাগের ১০ জেলার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফয়সল কাদের, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফারাজী বেনজীর আহম্মেদ-সহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।