খুলনা | রবিবার | ২৭ জুলাই ২০২৫ | ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

দগ্ধ অফিস সহকারী মাসুমার মৃত্যু, নিহত বেড়ে ৩৫, দু’জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছে

মাইলস্টোন ট্রাজেডি : এখনো ৩৬ জন ভর্তি বার্ন ইনস্টিটিউটে, ৪ জনের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন

খবর প্রতিবেদন |
০১:২৪ এ.এম | ২৭ জুলাই ২০২৫


মাইলস্টোন স্কুল এ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন চারজন ক্রিটিকাল বা আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে। আরও নয়জন রয়েছে সিভিয়ার ক্যাটাগরিতে। তারাও শঙ্কামুক্ত নন। এই ১৩ জনসহ মোট ৩৬ জন এখন এ হাসপাতালে ভর্তি।
শনিবার দুপুরে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এসব তথ্য জানান হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ নাসির উদ্দীন। 
তিনি বলেন, প্রথমত দুঃখের সংবাদ হচ্ছে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২ জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। আমরা আপনাদের আগেই জানিয়েছিলাম, আজকে (শনিবার) থেকে রিলিজ দেওয়া শুরু করব। তারই ধারাবাহিকতায় আজকে আমরা দুই শিশুকে কিছুক্ষণের মধ্যেই হাসপাতাল থেকে রিলিজ দিয়ে দেবো। আশা করছি আগামী সপ্তাহে আরও দশ জনকে আমরা ছেড়ে দিতে পারব।
তিনি বলেন, ‘বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ এখনো ৩৬ জন ভর্তি রয়েছেন। এদের মধ্যে সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে ৪ জন। তাদেরকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। মাইলস্টোনের দুই শিক্ষার্থী রাফসি (১২) ও আয়ান খানকে (১২) ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। তাদের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়।’
পরিচালক বলেন, ‘সিবিআর ক্যাটাগরিতে ৯ জনকে রাখা হয়েছে। বাকিরা অন্যান্য ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন।’ আগামী এক সপ্তাহে অন্তত আরো ১০ জনকে পর্যায়ক্রমে ছাড়পত্র দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আরো বলেন, বর্তমানে চারজন আশঙ্কাজনক পর্যায়ে রয়েছে এবং ৯ জন রোগীর অবস্থা গুরুতর। এছাড়া বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। চিকিৎসায় আমাদের কী কী ওষুধ দরকার সেগুলো আমরা আগে থেকেই কিনে রাখছি বলে জানান তিনি।
পরিচালক আরও জানান, চিকিৎসায় সহায়তা দিতে ভারত থেকে ২ চিকিৎসক ও ২ নার্স, সিঙ্গাপুর থেকে ৩ চিকিৎসক ও ২ নার্স এবং চীন থেকে ৩ চিকিৎসক ও ৬ জন সাপোর্টিং স্টাফ এসেছেন। তাদের ও এখানকার চিকিৎসকদের সমন্বয়ে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
দগ্ধ অফিস সহকারী মাসুমার মৃত্যু, নিহত বেড়ে ৩৫ : রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল এ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ আরও একজনের হয়েছে। তার নাম মাসুমা (৩২)। শনিবার সকালে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শুক্রবার সকাল পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৩২ জন। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে ৫১ জন। পরে শুক্রবার বিকেলে মাকিন (১৩) নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয় জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। আর আজ সকালে জারিফ ফারহান ও মাসুমার মৃত্যু হলো। সবমিলিয়ে এ পর্যন্ত ৩৫ জনের মৃত্যু ঘটলো এ দুর্ঘটনায়। 
এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মাইলস্টোন স্কুল এ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ২০ শিক্ষার্থী, ২ জন শিক্ষক ও ২ জন অভিভাবক নিহতের তথ্য জােনায়। 
সোমবার দুপুরে উত্তরার দিয়াবাড়ী এলাকায় বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে। দুর্ঘটনায় দগ্ধ ও আহতদের উদ্ধার করে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। 
বিমান বিধ্বস্ত ও প্রাণহানির ঘটনায় পরদিন মঙ্গলবার একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে অন্তর্র্বর্তী সরকার। দেশের সকল সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাাখা হয়। পাশাপাশি সকল সরকারি, বেসরকারি ভবন ও বিদেশে বাংলাদেশি মিশনেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত ছিল। 
এছাড়া আহত-নিহতদের জন্য দেশের সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনারও আয়োজন করা হয়।  
এর আগে গত সোমবার দুপুরে বিমান বাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান মাইলস্টোন স্কুল এ্যান্ড কলেজের ভেতরে বিধ্বস্ত হয়। এতে এই নিয়ে এ পর্যন্ত ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের বেশির ভাগই শিশু শিক্ষার্থী।