খুলনা | বৃহস্পতিবার | ০৭ অগাস্ট ২০২৫ | ২৩ শ্রাবণ ১৪৩২

মারণাস্ত্র ও হেলিকপ্টারে গুলি নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য মামুনের জবানবন্দিতে

খবর প্রতিবেদন |
১২:৩০ এ.এম | ৩০ জুলাই ২০২৫


গত বছরের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে মরিয়া ছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। মারণাস্ত্রের ব্যবহার, হেলিকপ্টার থেকে গুলি, ব্লক রেইডসহ নানা কৌশলে আন্দোলন দমানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করে সরকার। আর এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে অগ্রগামী বাহিনী ছিল পুলিশ। সেই পুলিশের তৎকালীন প্রধান (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন নিজের জবানবন্দিতে জানিয়েছেন ভয়ংকর সব কৌশলের কথা।  

আদালতে সাবেক আইজিপির দেওয়া জবানবন্দির নথি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। জবানবন্দিটি কয়েক মাস আগের হলেও মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) এই তথ্য সামনে এসেছে।

গত ১০ জুলাই চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করে নেন। সব দোষ স্বীকার করে সাবেক এই পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, আমি এ মামলার বিষয়ে বিস্তারিত ট্রাইব্যুনালের সামনে তুলে ধরতে চাই। এরপর তিনি এই মামলায় রাজসাক্ষী হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। পরে ট্রাইব্যুনাল এটি মঞ্জুর করেন। পাশাপাশি কারাগারে তাকে নিরাপত্তার জন্য আলাদা কক্ষে রাখার নির্দেশ দেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এক মামলায় গত ২৪ মার্চ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে জবানবন্দি দেন সাবেক আইজিপি। ৫ পৃষ্ঠার জবানবন্দিতে তিনি জুলাই আন্দোলন ঠেকানোসহ আরও নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন।

জবানবন্দিতে আবদুল্লাহ মামুন বলেন, ‘১৯ জুলাই থেকে প্রায় প্রতিরাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় বৈঠক হতো তাদের। বৈঠকে দুজন সচিব, এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম, ডিবির হারুন অর রশীদ, র‌্যাবের মহাপরিচালক, আনসারের ডিজি, এনটিএমসির জিয়াউল আহসানসহ অনেকে উপস্থিত থাকতেন। মূলত এ বৈঠক থেকে সবরকম নির্দেশনা ও পরামর্শ করা হতো।’

সাবেক এই আইজিপি বলেন, ‘কোর কমিটির এক বৈঠকে সমন্বয়কদের আটক করার সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক ছয় সমন্বয়ককে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। আন্দোলন প্রত্যাহারে তাদের মানসিক নির্যাতন ও চাপ দেওয়া হয়। কর্মসূচি প্রত্যাহারে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিতে বলা হয়। ঢাকার মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার প্রধান হারুনকে ‘জনাব’ বলে ডাকতেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কেন না রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কার্যকর মনে করা হতো তাকে।’

আন্দোলন দমনে হেলিকপ্টার থেকে গুলির বিষয়ে জবানবন্দিতে মামুন বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের নজরদারি, গুলি করে ভীতিকর পরিবেশ তৈরির গোপন পরিকল্পনা হয়। র‌্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক হারুন অর রশিদের পরিকল্পনায় মূলত রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়।’

আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আন্দোলন দমনে মারণাস্ত্র ব্যবহার এবং আন্দোলনপ্রবণ এলাকায় ব্লক রেইডের সিদ্ধান্ত হয় রাজনৈতিকভাবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে তাকে লেথাল উইপন ব্যবহারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা জানিয়েছিলেন। ডিএমপি সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান হাবিব এবং ডিবির সাবেক প্রধান হারুন অর রশীদ লেথাল উইপন ব্যবহারে অতিউৎসাহী ছিলেন।

এছাড়া সাবেক স্বরাষ্ট্রমমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ অনেকে মারণাস্ত্র ব্যবহারে পরামর্শ ও উসকানি দিয়েছিলেন বলেও জানান সাবেক আইজিপি।

সরকার পতনের দিন কী করেছিলেন জানিয়ে মামুন বলেন, ৫ আগস্ট বিকেলের দিকে একটি হেলিকপ্টার আসে পুলিশ হেড কোয়ার্টারে। ওই হেলিকপ্টারে তেজগাঁও বিমানবন্দরে যান তিনি। এরপর সেখান থেকে সেনানিবাসে আশ্রয় নেন।

জবানবন্দির শেষাংশে গুলি করে হত্যা, আহতের ঘটনায় সেসময় পুলিশ প্রধান হিসেবে অনুতপ্ত ও ক্ষমা চান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। যদিও পাঁচ পৃষ্ঠার জবানবন্দিতে শুধু মিটিংয়ে অংশ নেওয়া ছাড়া নিজের সম্পৃক্ততার বিষয়ে কিছুই বলেননি তিনি।