খুলনা | শুক্রবার | ০১ অগাস্ট ২০২৫ | ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২

নদীতে ডাইভারশন বাঁধ, তলিয়ে গেছে ২০ গ্রামের ধান

খাইরুল ইসলাম নিরব, ঝিনাইদহ |
০১:৫৪ এ.এম | ৩০ জুলাই ২০২৫


ঝিনাইদহের সদর ও কালীগঞ্জ উপজেলায় সেতু নির্মাণে ধীরগতি ও ভরা মৌসুমে বেগবতী নদীতে ডাইভারসন বাঁধ দেয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অন্তত ২০টি গ্রামের মানুষ। বন্ধ হয়ে গেছে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ। ফলে বিল ও খালের পানি আটকে হাজার হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান তলিয়ে গেছে।
জানা গেছে, জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার জামাল ইউনিয়নের কোলা বাজারে নির্মাণাধীন সেতুর ডাইভারসন বাঁধের কারণে নদীর স্রোত ও সাভাবিক পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বিলের পানি কমছে না। এতে সদর ও কালীগঞ্জের অন্তত ৪টি বিল ও খালের পানি আটকে গেছে বেগবতী নদীতে। আবার প্রবাহমান বেগবতীর উজানে ফুলে উঠেছে পানির স্তর। ফলে নদী তীরবর্তী ফসলের মাঠে পানি আটকে আছে দিনের পর দিন। 
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না ও মহারাজপুর ইউনিয়নে মাঠের পর মাঠ পানিতে থই থই করছে। তলিয়ে গেছে হাজার হাজার হেক্টর বোরো ধানের ক্ষেত। এ সময় স্থানীয়রা জানান, বিলের পানি বের হয় সিরিসকাঠ খাল হয়ে। সেই খালের সংযোগ ঘটেছে বেগবতী নদীতে। কিন্তু বেগবতী নদীর নলডাঙা বাজার ও কালীগঞ্জের কোলা বাজারে সেতু নির্মাণের ডাইভারসন বাঁধ রয়েছে। নদীর পানি বের হওয়ার জন্য বাঁধে রাখা হয়েছে মাত্র ৩৫ ফুট চওড়া জায়গা। দেয়া হয়েছে কাঠের সেতু। পানির তীব্র স্রোত ও চাপ সৃষ্টি হলে যেকোনো সময় সেতুটি ভেসে যেতে পারে।  
সদর উপজেলার গান্না, হরিপুর, মহারাজপুর, কুলবাড়িয়া, ভাদালডাঙ্গা, বেতাই, কুঠিদুর্গাপুর, ডেফলবাড়ি, বিষয়খালী, কেশবপুরসহ অন্তত ২০ গ্রামের ফসলের মাঠ পানিতে তলিয়ে গেছে। ডাকবাংলা, বাদপুকুরিয়া, মামুনশিয়া, নাথকুন্ডু, রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামেও দেখা দিয়েছে প্লাবন। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বিল ও খালপাড়ের বাসিন্দারা।
মহারাজপুর গ্রামের কৃষক নিখিল কুমার ও সাহেব আলী বলেন, বেগবতী নদীতে কোলা বাজারে ব্রিজ করার কারণে নদীতে বাঁধ দিয়েছে ঠিকাদাররা। যে কারণে নদী দিয়ে পানি নামছে না। আমরা ধান লাগিয়ে বিপাকে পড়েছি। পানিতে ধান তলিয়ে গেছে। জমিতে গলা সমান পানি।
দুর্গাপুর গ্রামের কৃষক সাবদার বিশ্বাস ও বিল­াল হোসেন বলেন, আমরা ধান লাগিয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছি। হাজার হাজার কৃষক হাহাকার করছে। ২০ গ্রামের অন্তত আড়াই হাজারে হেক্টর জমির ধান পানির নিচে।
জানা গেছে, ঝিনাইদহের অন্যতম বৃহত্তম বিল হামোদর বিল। এই বিল ও বিল ঘেঁষা মাঠগুলোতে বোরো মৌসুমে অন্তত আড়াই থেকে তিন হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়। কিন্তু এবছর বিলে জমা বৃষ্টির পানি বেগবতী নদী দিয়ে বের হতে পারছে না। 
মহারাজপুর কৃষক সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপক ইউনুস আলী বলেন, বিলের পানি আগে সিরিসকাঠ খাল দিয়ে বের হয়ে বেগবতী নদীতে গিয়ে পড়তো। এখন খাল দিয়ে পানি কিছুটা নামলেও নদীতে বাঁধ দেয়া হয়েছে দুই/তিন জায়গায়। বিলের পানি বের হওয়ার জন্য সাময়িক ভাবে নদীর বাঁধ তুলে দেয়ার বিকল্প নেই। কৃষকের কষ্ট আর দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু ঠিকাদাররা কর্ণপাত করছে না।
ডাইভারশন বাঁধ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান মিজানুর রহমান কনস্ট্রাকশনের ম্যানেজার আব্দুল খালেক জানান, নদীতে ডাইভারসন করা হলেও পানি বের হওয়ার জায়গা আছে। তবে পানি একটু কম বের হচ্ছে। ধান যেমন লাগবে, ব্রিজও লাগবে।
প্রবাহমান নদীতে ডাইভারসন বাঁধ নির্মাণের নির্দেশনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানেই এই কর্মকর্তা বলেন, ৪০ ফুট চওড়া কাঠের ব্রিজ বানানো হয়েছে। যার নিচ দিয়ে পানি বের হচ্ছে। কিন্তু নদীর প্রস্থ প্রায় দেড়শ’ ফুট। পানি বের হওয়ার জায়গা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেদারুল ইসলাম বলেন, কৃষকরা নদীর ডাইভারশন বাঁধ স¤প্রসারণের জন্য দাবি জানিয়েছেন। আমরা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। দ্রুতই সমাধান হবে বলে আশা করছি।