খুলনা | শুক্রবার | ০১ অগাস্ট ২০২৫ | ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২

এনসিপির অনুরোধে সমাবেশের স্থান পরিবর্তন করল ছাত্রদল

খবর প্রতিবেদন |
০২:০২ পি.এম | ৩০ জুলাই ২০২৫


চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মরণে আগামী ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্র সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিয়েছিল জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। কিন্তু একইদিনে একই ভ্যানুতে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কর্মসূচি করার কথা জানায়। পরে তাদের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হলে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে কর্মসূচির দিন সময় ঠিক রেখে স্থান পরিবর্তন করে শাহবাগে করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আজ বুধবার (৩০ জুলাই) ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মরণে ২০২৫ সালের জুলাই মাস শুরুর পূর্বেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে ৩৬ দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে সর্বাধিক শহীদের সংগঠন ছাত্রদল। এই অভ্যুত্থানের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী সংগঠন হিসেবে জুলাই-আগস্টের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান স্মরণ, শহীদ ও আহতদের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন, ঐতিহাসিক স্মৃতি সংরক্ষণ, সকল অংশীজনদের অবদানের স্বীকৃতি ও ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার দীর্ঘ ধারাবাহিক লড়াইয়ের বীরোচিত বিজয়ের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আমরা মাসব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করি। এই পূর্বঘোষিত ধারাবাহিক কর্মসূচিগুলোর মাঝে গুরুত্বপূর্ণ একটি কর্মসূচি ছিল ৩ আগস্টে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে- ছাত্র সমাবেশ। জুন মাসেই ঘোষিত এই কর্মসূচিটি পালনের জন্য আমরা ২২ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের বরাবর লিখিত আবেদন করি। আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২৬ জুন আমাদেরকে ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে ছাত্র সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়।

ছাত্রদল সভাপতি বলেন, ছাত্রদলের কর্মসূচি ঘোষণার কয়েকদিনের মাঝে জাতীয় নাগরিক পার্টিও একইদিনে একই স্থানে সমাবেশ করার কথা আমরা প্রথমে গণমাধ্যম মারফত অবগত হই। পরবর্তীতে নাগরিক পার্টির নেতৃবৃন্দ ব্যক্তিগতভাবে বারবার আমাদের সঙ্গে এই বিষয়ে যোগাযোগ করে সমাবেশের স্থান পরিবর্তনের অনুরোধ জানান। এই বিষয়ে আমাদের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সাথেও তারা যোগাযোগ করেন।

তিনি বলেন, এ ধরনের একটি কর্মসূচি ঘোষণা করার পর, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পর কর্মসূচিটি ভিন্ন কোনো স্থানে সরিয়ে নেওয়া খুবই বিব্রতকর ও কষ্টসাধ্য একটি কাজ। কর্মদিবসে আমাদের কর্মসূচির কারণে যেন কোনো জনভোগান্তি তৈরি না হয়, সমাবেশটি শহীদ মিনারে করতে চাওয়ার এটিও ছিল একটি অন্যতম কারণ। তাছাড়া আমরাই যেহেতু কর্মসূচিটি প্রথমে ঘোষণা করি এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতিও লাভ করি, তাই ওই স্থানে সমাবেশ করার আমরাই একমাত্র বৈধ দাবিদার। তারপরও একটি উদার, গণতান্ত্রিক, সহাবস্থানে বিশ্বাসী, পরমতসহিঞ্চু, গ্রহণযোগ্য সব মত ও পথের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সংগঠন হিসেবে আমরা জাতীয় নাগরিক পার্টির অনুরোধকে বিবেচনায় নিয়ে আমাদের ছাত্র সমাবেশের স্থানটি পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।

কেন্দ্রীয় সভাপতি বলেন, বিগত সময়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল যখন রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে ছিল, তখন ক্যাম্পাসগুলোতে ন্যূনতম রাজনৈতিক সহানস্থান বজায় ছিল। সব মত ও পথের ছাত্রসংগঠনগুলো ক্যাম্পাসে অবস্থান করে তাদের কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ পেতো। কিন্তু ২০০৮ সালের পর এই সংস্কৃতিটি একেবারেই বিলুপ্ত হয় এবং সব ক্যাম্পাসে বর্তমানে নিষিদ্ধ সংগঠনের একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাই নিজেদের জীবন, রক্ত, ক্যারিয়ার, পরিবারকে বিসর্জন দিয়ে ক্যাম্পাসগুলোতে স্বনামে ফ্যাসিবাদের প্রতিরোধ জারি রেখেছিল। কিন্তু এতো এতো জুলুম সত্ত্বেও ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা অদ্যবধি ক্যাম্পাসগুলোতে ধারাবাহিকভাবে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। দেশের একক বৃহত্তম ছাত্রসংগঠন হয়েও আমাদের নেতাকর্মীরা ৫ আগস্টের পর কোথাও হল দখল করেনি, কোথাও সিট দখল করেনি, কোথাও কাউকে জোর করে প্রোগ্রামে নিয়ে যায়নি। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে রাজপথে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখা সত্ত্বেও আমাদের অবদানকে বারবার অস্বীকার করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। আমাদেরকে নানাভাবে কোণঠাসা করার চেষ্টা করা হয়েছে। অপপ্রচার করা হয়েছে, গুজব ছড়ানো হয়েছে। অনলাইনে কুৎসিত আক্রমণ করা হয়েছে। কিন্তু এই সবকিছুর বিপরীতে আমরা শান্তি ও সহাবস্থানের রাজনীতি করে যাচ্ছি। এই সমাবেশের স্থান পরিবর্তনের ঘটনা এর সর্বশেষ উদাহরণ।

তিনি বলেন, আমরা চাইলে সমাবেশটি ঘোষিত স্থানেই করতে পারতাম। কিন্তু আমরা কাঁটার পরিবর্তে ফুল দিলাম। আমরা উসকানির বিপরীতে শান্তি ও সহানস্থানের বার্তা দিলাম। আমরা মনে করি, আমরা অকারণ উত্তেজনা ছড়ানোর বদলে উদারতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলাম। আমরা মনে করি, এ ঘটনা বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির ইতিহাসে শান্তি, সম্প্রীতি, উদারতা ও সৌহার্দ্যের অনন্য নজির হয়ে থাকবে। যারা সফল অভ্যুত্থানের পর অভ্যুত্থানের একক মালিক হয়ে উঠতে চাইছেন, আশা করি এ উদারতার পর তারা নিজেদের সম্বিত ফিরে পাবেন এবং সঠিক ও সুস্থ ধারায় নিজেদের রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। অন্য সব মত ও পথের প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধা পোষণ করবেন। সব বিষয়ে হঠকারিতার রাস্তা পরিত্যাগ করবেন।

কেন্দ্রীয় সভাপতি আরও বলেন, আজকের বার্তাটা খুবই পরিষ্কার। আমরা আগামী দিনে দেশের শিক্ষাঙ্গনগুলোতে ইতিবাচক ধারার গণতান্ত্রিক, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের, পরস্পর শ্রদ্ধাপূর্ণ, সৌহার্দ্যমূলক, পলিসিনির্ভর ছাত্ররাজনীতি করতে চাই। এই পথে উদারতা ও পরমতসহিঞ্চুতাই হবে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী ধারার রাজনৈতিক শক্তির পাথেয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির, সিনিয়র সহ-সভাপতি  আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহইয়া, সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সাধারণ সম্পাদক  শ্যামল মালুম, সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান প্রমুখ।