খুলনা | বৃহস্পতিবার | ১৪ অগাস্ট ২০২৫ | ৩০ শ্রাবণ ১৪৩২

সারজিসের বিরুদ্ধে ১০ কোটি টাকার মানহানির মামলা, সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ

খবর প্রতিবেদন |
০১:৩৬ এ.এম | ১৩ অগাস্ট ২০২৫


গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যাকাণ্ডে বিএনপিকে জড়িয়ে সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছেন বাসন থানা বিএনপি’র সভাপতি তানভীর সিরাজ। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গাজীপুর অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে করা মামলায় ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছে।
মামলার আইনজীবী এড. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, মামলার শুনানি শেষে বিচারক সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। সারজিস বেশ কয়েকবার বিএনপিকে নিয়ে এমন অপপ্রচার চালিয়েছেন। বিষয়টি দলের কর্মীদের মনে আঘাত করেছে। আশা করি তিনি এখন থেকে আরও সচেতন হবেন।
সাংবাদিক তুহিন হত্যাকাণ্ড দেশজুড়ে একটি নৃশংস ও সংবেদনশীল বিষয় হিসেবে আলোচিত হয়েছে। অপরাধী চক্রের ভিডিও ধারণ করার কারণে তুহিনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এই ঘটনা সাংবাদিক সমাজের মধ্যে গভীর শোক ও ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে এবং হত্যাকাণ্ডের সকল দিক স্পষ্ট হওয়ার জন্য অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে।
মামলার বাদী তানভীর সিরাজ অভিযোগ করে বলেন, “অপরাধী চক্রের ভিডিও ধারণ করায় সাংবাদিক তুহিনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। কিন্তু সারজিস আলম না জেনেই ফেসবুকে এই ঘটনায় বিএনপিকে জড়িয়ে ভিত্তিহীন ও মানহানিকর বক্তব্য দিয়েছেন, যা দলের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণœ করেছে। ইতোমধ্যে গাজীপুর মহানগর পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করে স্পষ্ট করেছেন যে, এতে কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই। দলের নির্দেশনা অনুযায়ী আমি এই মামলা করেছি এবং আশা করি ন্যায়বিচার পাবো।”
বিএনপি’র সভাপতি তানভীর সিরাজ অভিযোগ করেছেন, এনসিপির উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মামলা ও হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে অবগত না হয়েও বিএনপি’র বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অপপ্রচার চালিয়েছেন। তার এই কর্মকাণ্ড দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করেছে এবং রাজনৈতিক দলের প্রতি জনসাধারণের আস্থা হ্রাস করেছে।
তানভীর সিরাজ বলেন, কোনো প্রমাণ ছাড়াই বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয়েছে যা দলে বিভ্রান্তি ও বিভাজন সৃষ্টি করছে। এই মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে আমি আইনি পদক্ষেপ নিয়েছি।
মামলার পটভূমিতে জানা যায়, গত ৭ আগস্ট রাত ৯টা ৫৫ মিনিটে সারজিস আলম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে লেখেন, “গাজীপুরে এক বিএনপি নেতার চাঁদাবাজি নিয়ে নিউজ করায় দুপুরে আনোয়ার নামের এক সাংবাদিককে ইট দিয়ে থেঁতলে দেয় বিএনপি’র কর্মীরা। দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের সাংবাদিক তুহিনকে গাজীপুরের চৌরাস্তায় চা দোকানে রাতে জবাই করে হত্যা করেছে চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীরা! আনোয়ার এবং তুহিন বন্ধু ছিলেন।”
পরদিন ৮ আগস্ট সকাল ১০টা ৩৯ মিনিটে তিনি পোস্টটি সম্পাদনা করে ‘চাঁদাবাজ’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘ছিনতাইকারী’ শব্দ ব্যবহার করেন।
সাংবাদিক তুহিন হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক বিবাদ ও অভিযোগ-প্রতিযোগিতা রয়েছে। বিএনপি ও এনসিপি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল একে অপরকে দোষারোপ করছে। সাংবাদিক সমাজের সদস্য হিসেবে সঠিক তথ্য এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বিভ্রান্তিকর তথ্যের কারণে সাধারণ জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা দেশের সামাজিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
এই ধরনের নৃশংস ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা এবং তাদের পেশাগত স্বাধীনতা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। সঠিক তথ্য পরিবেশন ও সত্য প্রকাশের দায় নিয়ে কাজ করা সাংবাদিকরা নানা ধরনের হুমকি ও সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। সরকারের উচিত হবে সাংবাদিকদের সুরক্ষা প্রদান এবং স্বাধীন সাংবাদিকতা নিশ্চিত করা।