খুলনা | বৃহস্পতিবার | ১৪ অগাস্ট ২০২৫ | ৩০ শ্রাবণ ১৪৩২

১২ জেলায় বন্যার শঙ্কা

খবর প্রতিবেদন |
০১:১৩ এ.এম | ১৪ অগাস্ট ২০২৫


বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ও সক্রিয় মৌসুমি বায়ুুর প্রভাবে দেশের চার বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর বাংলাদেশ। বুধবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া এক পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সে সঙ্গে রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। এ সময় সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
এদিকে বৃষ্টিপাত বেড়ে যাওয়ায় ১২ জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে বলে সতর্ক করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এর মধ্যে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রামের নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার এবং রাজবাড়ী, ফরিদপুর, পাবনা, মানিকগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, মুন্সীগঞ্জ ও ঢাকা জেলার নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চল সাময়িকভাবে প্লাবিত হওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। 
আবহাওয়া অফিস বলছে, উত্তর অন্ধ্র প্রদেশ এবং দক্ষিণ উড়িষ্যা উপকূলের অদূরে পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় বুধবার সকাল ৬টায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। এটি আরও ঘনীভূত হওয়ার প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। তাই উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
বুধবার নীলফামারীর ডিমলায় দেশের সর্বোচ্চ ১৮১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আর দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ৩৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতকে ভারি ও ১৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতকে অতিভারি বর্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বৃষ্টিপাত এবং নদ-নদীর পরিস্থিতি নিয়ে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, তিস্তা নদীর পানি সমতল ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রংপুর বিভাগে তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি সমতল গত ২৪ ঘণ্টায় বেড়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা নদীগুলোর পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে এবং তিস্তা নদীর পানি সমতল বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে, অপরদিকে ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি সমতল বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এই সময়ে লালমনিরহাট, নীলফামারি, রংপুর, কুড়িগ্রাম জেলার ওই নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। তবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন নদীগুলোর পানি সমতল কমতে পারে।
গত ২৪ ঘণ্টায় গঙ্গা ও পদ্মা নদীর পানি বেড়েছে জানিয়ে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, গঙ্গা নদীর পানি সমতল আগামী দু’দিন স্থিতিশীল থাকতে পারে। তবে পরবর্তী তিন দিন পানি সমতল কমতে পারে। অপর দিকে পদ্মা নদীর পানি সমতল আগামী তিন দিন বাড়তে পারে এবং সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে। এই সময়ে রাজবাড়ী, ফরিদপুর, পাবনা, মানিকগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, মুন্সীগঞ্জ ও ঢাকা জেলার পদ্মা নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চল সাময়িকভাবে প্লাবিত হতে পারে। তবে চতুর্থ ও পঞ্চম দিন পানি সমতল স্থিতিশীল সম্ভাবনা কথাও তুলে ধরা হয়েছে।
কেন্দ্র আরও জানায়,গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানি সমতলও বেড়েছে। এ সব নদ-নদীর পানি সমতল আগামী তিন দিনও বাড়তে পারে এবং সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে। একই সময়ে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের মহানন্দা, করতোয়া, যমুনেশ্বরি, পুনর্ভবা ও ঘাঘট নদীর পানি সমতলও বেড়েছে। অপরদিকে আপার আত্রাই, টাঙ্গন নদীর পানি সমতল কমেছে। আগামী তিন দিন এ নদীগুলোর পানি সমতল বাড়তে পারে এবং এ সময়ে আত্রাই নদীর পানি সমতল বেড়ে সতর্কসীমা প্রবাহিত হতে পারে।
এ ছাড়া সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের সোমেশ্বরী, ভুগাই ও কংস নদীর পানি সমতল বেড়েছে, অপরদিকে সারিগোয়াইন, যাদুকাটা, লুবাছড়া, ঝালুখালি নদীর পানি সমতল কমেছে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। আর মনু, ধলাই, খোয়াই ও জিঞ্জিরাম নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে। এ নদীগুলোর পানি সমতল আগামী ২৪ ঘণ্টা বাড়তে পারে ও পরবর্তী দুদিন কমতে পারে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় সোমেশ্বরী, ভুগাই ও কংস নদীর পানি সমতল সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে বলেও তুলে ধরেছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় নদীর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি জোয়ার আছে বলে তুলে ধরে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, আগামী তিন দিন এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে।