খুলনা | বুধবার | ২০ অগাস্ট ২০২৫ | ৪ ভাদ্র ১৪৩২

কোচিং সেন্টারের আড়ালে গোপন অস্ত্রভাণ্ডার

আ. লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যের চাচাতো ভাইসহ তিনজন গ্রেফতার

খবর প্রতিবেদন |
০১:২৭ পি.এম | ১৬ অগাস্ট ২০২৫


আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের চাচাতো ভাই মুনতাসিরুল অনিন্দ্যসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে সেনাবাহিনী। গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার (১৬ আগস্ট) সকাল থেকে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে অভিযানটি চালানো হয়।

শনিবার (১৬ আগস্ট) নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। এ সময় তাদের বাসা ও কোচিং সেন্টার থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, বোমা তৈরির সরঞ্জাম এবং বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়।

সেনাবাহিনীর একটি সূত্র বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানায়, ‘ডক্টর ইংলিশ’ নামে একটি কোচিং সেন্টারের সাইনবোর্ডের আড়ালে এসব অস্ত্র ও বিস্ফোরক রাখা ছিল।

কোচিং সেন্টারটি পরিচালনা করছিলেন মুনতাসিরুল আলম অনিন্দ্য (৩৬)।  তিনি রাজশাহী মহানগর বিএনপির সহসভাপতি শফিউল আলম লাটকুর ছেলে। অভিযানকালে অনিন্দ্যসহ দুজনকে যৌথবাহিনী নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বাবা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হলেও চাচাতো ভাই লিটনের প্রভাবেই চলতেন অনিন্দ্য।

অনিন্দ্যের বিরুদ্ধে রাবির ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় ২০১৬ সালের ২ জুন গোয়েন্দা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছিল। অনিন্দ্য রাবির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং জঙ্গি কার্যকলাপে জড়িত হয়ে দেশের ভেতরে কয়েকটি জঙ্গি হামলায় অংশ নিয়েছিল বলে ওই সময় পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিল।

এছাড়া গুলশানের চাঞ্চল্যকর হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ঘটনা তদন্তেও অনিন্দ্যের সম্পৃক্ততা পায় গোয়েন্দা পুলিশ। ওই সময় তাকে রাজশাহী থেকে  গ্রেফতার করে ঢাকায় নেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ রয়েছে, সাবেক মেয়র লিটনের আত্মীয় হওয়ায় ওই সময় সব মামলা ও অভিযোগ থেকে পুলিশ অনিন্দ্যের নাম বাদ দিয়েছিল। গত কয়েক বছর ধরে অনিন্দ্য নিজের বাড়ির লাগোয়া ফাঁকা জায়গায় টিনসেড দিয়ে ডক্টর কোচিং সেন্টারটি পরিচালনা করছিলেন। পাশাপাশি গোপনে অস্ত্র ও বিস্ফোরক মজুদ ও তৈরির কাজও করে আসছিল। যৌথবাহিনী গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার সকালে অভিযান শুরু করেন।  সকালে শুরু হওয়া এ অভিযান দুপুর সাড়ে ১২টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।

সেনাবাহিনী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অভিযানকালে ইতোমধ্যে কোচিং সেন্টারটি থেকে দুটি বিদেশি এয়ার গান, একটি রিভলবার, কার্টুজ, তিন বাক্স শিশা, একটি ম্যাগনেট, ছয়টি দেশীয় অস্ত্র, একটি জিপিএস, চারটি ওয়াকিটকি, একটি ট্রেজারগান, ১০টি সিমকার্ড, একটি বাইনোক্যুলার, বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম, পাসপোর্ট, এনআইডি কার্ড, ছয়টি মনিটর, তিনটি কম্পিউটার, তিনটি  স্ক্যানার ও ৩৫ বোতল মদ জব্দ করেছে।

বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছালে উদ্ধারকৃত বোমা ও অন্যান্য বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করা হবে। এরপর বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী।

সূত্র আরও জানায়, উদ্ধার হওয়া অস্ত্রগুলো অত্যন্ত বিপজ্জনক। ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ সদস্য ও বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যেকোনো মুহূর্তে বিস্ফোরণের ঝুঁকি থাকায় সাংবাদিকদের নিরাপদ দূরত্বে থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে।