খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২১ অগাস্ট ২০২৫ | ৬ ভাদ্র ১৪৩২

‘গুলিবিদ্ধ ১৬৭ জনের অনেকেরই মাথার খুলি ছিল না’ : ‘নতুন করে যেন গুলিবিদ্ধ কোনো আন্দোলনকারীকে ভর্তি না করানো হয় নির্দেশ ডিবির’

হাসিনাসহ চারজনের ফাঁসি চাইলেন নিউরো সায়েন্সের চিকিৎসক

খবর প্রতিবেদন |
০১:২৮ এ.এম | ২১ অগাস্ট ২০২৫


২০২৪ সালের ১৬ জুলাইয়ের পর থেকে দিন যত গড়াতে থাকে মাথা-বুকে গুলিবিদ্ধ মুমূর্ষু রোগী ততই বাড়তে থাকে বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে বলেন নিউরো সায়েন্স হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, হাসপাতালে মারা যায় ৩৩ জন। হাসপাতালে আসা রোগীদের মধ্যে ১৬৭ জনের অনেকেরই মাথার খুলি ছিল না।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাক্ষ্য দেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান।
জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতাকে দমনে ডিবির একটি দল রাজধানীর নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে এসে গুলিবিদ্ধদের চিকিৎসা ও রিলিজ না দিতে শাসিয়ে যায় বলেও ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় বলেন এই চিকিৎসক। জুলাই-আগস্টের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ষষ্ঠ দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয় গতকাল।
১৩তম সাক্ষী হিসেবে শুরুতে সাক্ষ্য দেন নিউরো সায়েন্স হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ মাহফুজুর রহমান। তিনি জবানবন্দিতে আদালতকে আরও বলেন, আমরা ৫৭৫ জনকে চিকিৎসা দিয়েছি। যাদের অনেকেরই মাথার খুলি গুলিতে উড়ে যায়। এই হাসপাতালে মারা যায় ৩৩ জন। গুরুতর অবস্থায় ভর্তি হয় আজন। তাদের মধ্যে একজন মারা যায়। বাকি সাতজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বাইরে পাঠানো হবে।
সাক্ষ্য দিতে গিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শুরু থেকেই চিকিৎসা প্রদানে বাধা দিয়েছে। পরে রোগীদের পরিচয় ও আহতের কারণ গোপন করে অনেকের চিকিৎসা দিয়েছেন তারা।
এর আগে আরও এক সাক্ষী দাবি করেন, পঙ্গু হাসপাতালে আহতদের দেখতে গিয়ে শেখ হাসিনা চিকিৎসকদের নির্দেশ দেন ‘নো ট্রিটমেন্ট নো রিলিজ’।
আন্দোলন চলাকালে হাসপাতালে কী ঘটেছে তা উল্লেখ করে তিনি শেখ হাসিনাসহ চারজনের দৃশ্যমান ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন। বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সাক্ষ্য দেন এই চিকিৎসক।
অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বলেন, আন্দোলন চলাকালীন যখন মাথায় গুলি লেগে হাসপাতালে আসছিলেন আন্দোলনকারীরা, তখন ডিবি তাদের রিলিজ দিতে মানা করেন। সেই সাথে ডিবি হাসপাতালে এটাও বলে যায়, নতুন করে যেন গুলিবিদ্ধ কোনো আন্দোলনকারীকে ভর্তি না করানো হয়।
এসব অভিযোগ এনে শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল কামাল, ওবায়দুল কাদের এবং আরাফাত এ রহমানের দৃশ্যমান ফাঁসি দাবি করেন এই চিকিৎসক।
এছাড়া বুধবার রাজধানীর চাঁনখারপুলে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দায়ের করা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সকালেই ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয় কারাগারে থাকা আসামিদের।
প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। এ পর্যন্ত এই মামলায় মোট ১৩ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন।
জবানবন্দি শেষে শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মোঃ আমির হোসেন সাক্ষীদের জেরা করবেন।
এর আগে, এই মামলার প্রথম সাক্ষী হিসেবে গত ৩ আগস্ট জবানবন্দি দেন আন্দোলনে আহত খোকন চন্দ্র বর্মণ। পরে ৬ আগস্ট রিনা মুর্মু ও একেএম মঈনুল হক নামে দুইজন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী দেন। ৪ আগস্ট পঙ্গু শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল ইমরান ও দিনমজুর পারভীন সাক্ষ্য দিয়ে নিজেদের দুর্দশার জন্য শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্টদের দায়ী করে সর্বোচ্চ সাজা দাবি করেন।
এরপর ১৭ আগস্ট সবজি বিক্রেতা আবদুস সামাদ, মিজান মিয়া, শিক্ষার্থী নাঈম শিকদার এবং শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা শাহীনা বেগম জবানবন্দি দেন। আর ১৮ আগস্ট সাক্ষ্য দেন শহীদ আস-সাবুরের বাবা মো. এনাব নাজেজ জাকি, শহীদ ইমাম হাসান তাইমের ভাই রবিউল আউয়াল এবং রাজশাহীর প্রত্যক্ষদর্শী জসিম উদ্দিন।
গত ১০ জুলাই ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। প্রসিকিউশন এই তিন জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ এনেছে। আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার বিশাল এই অভিযোগপত্রে তথ্যসূত্র, জব্দ তালিকা, দালিলিক প্রমাণ এবং শহিদদের তালিকা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই মামলায় মোট ৮১ জন সাক্ষী রয়েছেন।