খুলনা | রবিবার | ২৪ অগাস্ট ২০২৫ | ৯ ভাদ্র ১৪৩২

যশোরের ডিসি ফুডের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের আদেশ অমান্য ও সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেক, যশোর |
০২:১০ এ.এম | ২৪ অগাস্ট ২০২৫


হাই কোর্টের আদেশ অমান্য করার অভিযোগ উঠেছে যশোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক শেফাউর রহমানের বিরুদ্ধে। একই সাথে হাইকোর্টের ওই আদেশকে অগ্রাহ্য করে সরকারের প্রায় কোটি টাকা নয়-ছয় করেছেন খাদ্য বিভাগের ওই কর্মকর্তা। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেন সংক্ষুব্ধ ঠিকাদারবৃন্দ। 
প্রাপ্ত অভিযোগে জানা গেছে, যশোর জেলার খাদ্য বিভাগের অধীনে ১০টি এলএসডি খাদ্য গুদামের মাধ্যমে জেলার সরকারি বরাদ্ধের চাল ও ধান ক্রয় এবং বিলিবন্টন করা হয়ে থাকে। এই কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সরকারি ভাবে শ্রম ও হস্তার্পণ ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। এই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হ্যান্ডলিং শ্রমিকের মাধ্যমে গুদামগুলোতে খাদ্য ওঠানো নামানোর কাজটি করে। সরকারি দরপত্রের মাধ্যমে প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করে খুলনার দৌলতপুরের মেসার্স লোটাস এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী সেলিম রেজা ২০২০ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যশোরের ১০টি এলএসডি গোডাউনে হ্যান্ডলিং শ্রমিকের মাধ্যমে খাদ্যশস্য ওঠা-নামানোর কাজটি করেন। কিন্তু তার পর থেকে অদ্যাবধি নানা কৌশলে জেলার বর্তমান খাদ্য নিয়ন্ত্রক শেফাউর রহমান নতুন করে এসব গোডাউনে শ্রম ও হস্তার্পণ ঠিকাদার নিয়োগ না করে নিজে দৈনিক মজুরী ভিত্তিক শ্রমিক নিয়োগের মাধ্যমে হ্যান্ডলিং শ্রমিকের কাজ শুরু করেন। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করে ( নম্বর ১২২৭৪/২০২৪)। 
হাইকোর্ট উক্ত রিটপিটিশনটির শুনানী শেষে চলতি বছরের ১৪ মে নন-প্রসিকিউশন ঘোষণা করেন। এরও আগে অপর সংক্ষুব্ধ ঠিকাদার খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার মেসার্স ইয়াসির এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মিজানুর রহমান খাঁন ঠিকাদার নিয়োগ না করে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে হ্যান্ডলিং শ্রমিক খাটানোর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আরো একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন ( নম্বর ৬৫১৭/২০২৫)। হাইকোর্ট উক্ত রিট পিটিশনের শুনানী শেষে চলতি বছরের ২১ এপ্রিল মাস্টারোলের ভিত্তিতে শ্রম ও হস্তার্পণ কার্যক্রম পরিচালনার ওপর ৩ মাসের স্থগিতাদেশ প্রদান করেন। এই সময়ের মধ্যে ঠিকাদার নিয়োগে কোন উদ্যোগ গ্রহণ না করে ডিসি ফুড পূর্বের ন্যায় মাস্টারোল ভিত্তিতে জেলার ১০টি এলএসডি খাদ্য গুদামে শ্রম ও হস্তার্পণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন। বিষয়টি নিয়ে পুনরায় চলতি বছরের ১৫ জুলাই হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চকে অবহিত করলে বিচারপতি কাজী জিনাত হক ও বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকা’র  দ্বৈত বেঞ্চ চলতি বছরের ৩০ জুলাই ৬৫১৭ নং রিট পিটিশনের শুনানী শেষে যশোর জেলার ১০টি এলএসডি খাদ্য গুদামে শ্রম ও হস্তার্পণ কার্যক্রম বন্ধে আরো ৩ মাসের স্থগিতাদেশ প্রদান করেন। কিন্তু হাইকোর্টের সেই আদেশকে পরোয়া না করে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক শেফাউর রহমান নিজস্ব গতিতে জেলার ১০টি এলএসডি খাদ্য গুদামে শ্রম ও হস্তার্পণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। একই সাথে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কাজ করানো হ্যান্ডলিং শ্রমিকদের বিভিন্ন মাসের কাজের বকেয়া মজুরি বাবদ ৭৬ লাখ ২২ হাজার ২ টাকা ডিসি ফুড শেফাউর রহমান নিজ স্বাক্ষরে বিল ভাউচারের মাধ্যমে উত্তোলন করেছেন। যা খাদ্য অধিদপ্তরের আইনে এবং মহামান্য হাই কোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকায় তিনি পারেন না। অথচ আইনের তোয়াক্কা না করে তিনি খেয়াল খুশি মতো খাদ্য অধিদপ্তরের কতিপয় কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে দিব্যি তা চালিয়ে যাচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা খাদ্য অফিসের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে আমরা এই ধরনের অনৈতিক কাজ করা থেকে বিরত থাকার জন্য স্যারকে বার বার নিষেধ করেছি। কিন্তু স্যার ঢাকা অফিসের কথা বলে সব জায়েজ করার চেষ্টা করছেন। একই সাথে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের ক্ষেত্রেও করা হয়েছে নানা অনিয়ম আর দুর্নীতি। এই বিভাগের অন্যান্য অনেক জেলায় ঠিকাদার নিয়োগ করে তাদের মাধ্যমে আইন মোতাবেক এলএসডি গোডাউনগুলোতে শ্রম ও হস্তার্পণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হলেও ব্যতিক্রম যশোর জেলা। এই জেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক শেফাউর রহমান ঠিকাদার নিয়োগের কোন উদ্যোগ না নিয়ে বরং নিজেই উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রায় এক বছর ধরে জেলার ১০টি এলএসডি গোডাউনে শ্রম ও হস্তার্পণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। যা সরকারি আইনের চরম লংঘন বলছেন বাদী মিজানুর রহমান খান। একই ধরনের কথা বলেন মেসার্স লোটাস এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী সেলিম রেজা। তিনি বলেন, সরকারি বিধান হচ্ছে নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত সর্বশেষ নিয়োগকৃত ঠিকাদার এলএসডি গোডাউনে শ্রম ও হস্তার্পণ কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। ২০২১ সালের ৯ আগস্ট খাদ্য মন্ত্রনালয়ের সরবরাহ শাখা-২ এর উপ-সচিব মুহাম্মদ মাসুম বিল­াহ স্বাক্ষরিত এক আদেশে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। 
খুলনা বিভাগের বহু জেলার এলএসডি গোডাউনে সেই নিয়মেই শ্রম ও হস্তার্পণ কার্যক্রম পরিচালিত হলেও ব্যতিক্রম যশোর জেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক। তিনি নিজে ঠিকাদার সেজে জেলার ১০টি এলএসডি গোডাউনে মাস্টারোল ভিত্তিতে শ্রম ও হস্তার্পণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। একই সাথে সরকারি কাজের বিলের অর্থ এজি অফিস থেকে চেকের মাধ্যমে সংগ্রহ করে তা নিজের ব্যাংক হিসাবে জমা করে উদ্বৃত্ত টাকা ও লভ্যাংশ আত্মসাৎ করছেন। যা সরকারি চাকুরি বিধির চরম লংঘন এবং মহামান্য হাইকোর্টের আদেশের স্পষ্ট অবমাননা।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে যশোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ডিসি ফুড) শেফাউর রহমান বলেন, তিনি যা করছেন তা আইন মেনেই করছেন। হাইকোর্টের কোন আদেশ তিনি অমান্য করেননি। জেলার ১০টি এলএসডি গোডাউনের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে তিনি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা মোতাবেক শ্রম ও হস্তার্পণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এখানে আইনের কোন ব্যাত্যয় ঘটানো হয়নি। 
তিনি অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অভিযোগে দুদকে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। যদি দুদক মনে করে তাহলে প্রাপ্ত অভিযোগ তদন্ত করে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। তাতে আমার কোন আপত্তি নেই।