খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২৮ অগাস্ট ২০২৫ | ১৩ ভাদ্র ১৪৩২

গাজায় যুদ্ধ বন্ধের আহŸান জানিয়ে পথে নামলেন ইসরাইলের বহু মানুষ

খবর প্রতিবেদন |
০১:৪৭ এ.এম | ২৮ অগাস্ট ২০২৫


মহাসড়ক অবরোধ করে ইসরাইল জুড়ে হাজার হাজার মানুষ অংশ নিলেন বিক্ষোভে। লক্ষ্য ছিল প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে যুদ্ধের অবসানের জন্য একটি চুক্তিতে সম্মত হতে রাজি করানো এবং গাজা শহরে আক্রমণের পরিকল্পনা বাতিল করা। জিম্মিদের আত্মীয়স্বজনরা তেল আবিবে সবচেয়ে বড় মিছিল এবং সমাবেশের নেতৃত্ব দেন, অন্যদিকে জেরুজালেমে শত শত মানুষ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বাইরে জড়ো হন যখন নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করার জন্য বৈঠক করছিলো। 
দেশজুড়ে আরও কয়েক ডজন বিক্ষোভ হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে উত্তরাঞ্চলীয় শহর হাইফা এবং বেন গুরিওন বিমানবন্দরের ভেতরের প্রধান মহাসড়ক অবরোধ। ইসরাইলি সেনাবাহিনীকে গাজা সিটিতে স্থল আক্রমণের প্রস্তুতি দ্রæততর করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যদিও মধ্যস্থতাকারীরা বলছেন যে, তারা ইতিমধ্যেই আলোচনার টেবিলে থাকা যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রতি ইসরাইলের প্রতিক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। নেতানিয়াহু এই সতর্কবার্তা উপেক্ষা করেছেন যে গাজা শহরে আক্রমণ দুর্ভিক্ষপীড়িত ফিলিস্তিনিদের জন্য ভয়ঙ্কর বিপর্যয় ডেকে আনবে এবং প্রায় ২০ জন জিম্মির জন্য এই সিদ্ধান্ত আরো বিপজ্জনক হবে ,যারা এখনও জীবিত বলে মনে করা হচ্ছে।
মঙ্গলবারের মন্ত্রিসভার বৈঠকে গাজা সিটি অভিযানের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি। ইসরাইলি সংবাদপত্র হারেৎজ জানিয়েছে, হাসপাতালে হামলার ঘটনা বিশ্বব্যাপী তীব্র ক্ষোভের উদ্রেক করেছে। এই হামলার জেরে পাঁচজন সাংবাদিক সহ ২০ জন নিহত হয়েছেন। 
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গাজার জন্য যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তি চুক্তিতে সাড়া দেয়ার জন্য ইসরাইলের প্রতি আহŸান জানিয়েছে, যা হামাস কর্তৃক ইতিমধ্যেই গৃহীত হয়েছে। বেশির ভাগ ইসরাইলিই যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে যুদ্ধবিরতি চুক্তির সমর্থনে রয়েছেন, যাতে বাকি সকল জিম্মিকে মুক্ত করা যায়। এই অনুভূতি মূলত গাজায় এখনও জিম্মিদের নিয়ে উদ্বেগ এবং ইসরাইলি সমাজ ও অর্থনীতির উপর দুই বছরের যুদ্ধের প্রভাবের কারণে উদ্ভূত।
বেশির ভাগ বিক্ষোভে দুর্ভিক্ষ এবং ফিলিস্তিনিদের হত্যার অবসানের আহŸান জানানো হয়েছে। যদিও এই সপ্তাহের জরিপে দেখা গেছে যে প্রায় তিন-চতুর্থাংশ ইহুদি  ইসরাইলি সরকারের এই দাবির সাথে আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে একমত যে ‘গাজায় কোনও নিরাপরাধ ব্যক্তি নেই’। 
এই মাসের শুরুতে আরেকটি জরিপে দেখা গেছে যে, ৭৮% ইহুদি ইসরাইলি বলেছেন যে, তারা ফিলিস্তিনিদের দুর্দশার খবরে অতটা উদ্বিগ্ন নন। নেতানিয়াহু তার ভঙ্গুর জোট সরকারকে সমর্থনকারী অতি-ডানপন্থী দলগুলোর চাপের মুখে আছেন, যারা বলছেন যে তিনি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হলে তারা পদত্যাগ করবেন। এদিকে সমালোচকরা যার মধ্যে গাজায় জিম্মিদের আত্মীয়স্বজনও রয়েছেন, বলছেন যে তিনি তার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক ক্যারিয়ার দীর্ঘায়িত করার জন্য যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছেন। 
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সামরিক শক্তিই ইসরাইলের নিরাপত্তা রক্ষার সর্বোত্তম উপায়, সেইসঙ্গে  অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দেয়ার জন্য হামাসের উপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। কিছু বিক্ষোভকারী বলেছেন যে তাদের খুব কম আশা ছিল যে নেতানিয়াহু নিজের পথ পরিবর্তন করবেন। যার মধ্যে ছিলেন ৮৮ বছর বয়সী আদা গোর্নি , যিনি তার মেয়ে কারমেনের সাথে প্রতিবাদে সামিল হন। তাদের হাতের  প্ল্যাকার্ডে আরবি, ইংরেজি এবং হিব্র“তে লেখা ছিল ‘যথেষ্ট’।
৫৮ বছর বয়সী কারমেন বলেন, ‘আমরা কেবল যুদ্ধ বন্ধ করতে চাই, জিম্মিদের বাসায়  ফিরিয়ে আনতে চাই এবং গাজায় দুর্ভিক্ষ বন্ধ করতে চাই। কিন্তু আমার মনে হয় না তারা আমাদের কথা শুনবে।’ 
সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান।