খুলনা | মঙ্গলবার | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ২৫ ভাদ্র ১৪৩২

জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবি ৩০ রাজনৈতিক দলের নেতাদের

খবর প্রতিবেদন |
০২:২৮ এ.এম | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫


জাতীয় পার্টির (জাপা) রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে ৩০টিরও বেশি রাজনৈতিক দলের নেতারা। শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর শাহবাগে গণ অধিকার পরিষদ আয়োজিত সংহতি সমাবেশে একাত্ম হয়ে তারা এ দাবি জানান।

গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের ওপর হামলার ঘটনায় হামলাকারীদের বিচার, জাপা ও ১৪ দলের রাজনীতি নিষিদ্ধ এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

এতে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, জেএসডি, বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, এবি পার্টি, খেলাফত মজলিসসহ ফ্যাসিবাদ বিরোধী ৩০টির বেশি রাজনৈতিক দল সংহতি জানায়।

সমাবেশে অবিলম্বে জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলীয় জোটকে নিষিদ্ধের জোর দাবি জানিয়ে নেতারা বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে। তাদের দোসর জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলীয় জোট শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচার হতে সহযোগিতা করেছে। ফ্যাসিবাদ ফেরাতে জাতীয় পার্টি মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে, এত অপরাধের পরেও এখন দেশকে অস্থির করতে নানাভাবে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। অবিলম্বে আওয়ামী লীগের দোসর ও ভারতীয় এজেন্ট জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করতে হবে। ১৪ দলীয় জোটকে নিষিদ্ধ করতে হবে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল বলেন, গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার পালিয়ে গেছে। এখন তো স্বৈরাচার নাই। তাহলে আজ নূরকে রক্তাক্ত করছে কারা? আমরা বারবার ড. ইউনূসকে বলেছি, অন্তর্বর্তীর্কালীন সরকারের বিভিন্ন স্তরে স্তরে হাসিনার আন্ডাবাচ্চারা রয়ে গেছে। তাদের বিরুদ্ধে আপনি ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, আমরা খুব স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, এই (নুরের) হামলা কোন একটি দলের ওপরে ছিল না, এটি ছিল বাংলাদেশের ওপরে হামলা, এই হামলা দেশের গণতন্ত্রের ওপর হামলা, এই হামলা জুলাইয়ের রক্তের বিরুদ্ধে হামলা। আমরা যে ৫ই আগস্ট দেশ থেকে ফ্যাসিবাদকে বিদায় করেছিলাম, সেই ফ্যাসিবাদ ও তার দোসরদের ফিরে আসার আরেক অপচেষ্টা এই হামলা।

তিনি বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিদায় নিয়েছে, কিন্তু এই ফ্যাসিবাদকে যারা তৈরি করেছিল, সেই জাতীয় পার্টি ও ১৪ দল এখনো আছে। তাদের বাংলাদেশে রাজনীতি করার আর কোন সুযোগ নেই। দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দল মুক্ত বাংলাদেশ দেখতে চায়।

সভাপতির বক্তব্যে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, নুরের ওপর হামলার ঘটনায় সেনাবাহিনী ও পুলিশের যেসকল সদস্যরা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নুর এখনো পর্যন্ত হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। সরকারের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। অবিলম্বে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে হবে। অন্যথায় সচিবালয় ঘেরাও করা হবে। আর আমরা বাংলাদেশে জাতীয় পার্টিকে রাজনীতি করতে দেব না। আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির উপর ভর করে ফিরে আসতে চাচ্ছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মোহাম্মদ আতাউল্লাহ বলেন, আমাদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি করার পাঁয়তারা হচ্ছে। আমরা বাংলাদেশ আর কোনো যেনতেন নির্বাচন করতে দেব না। তবে আমরা নির্বাচনের পক্ষে। সংস্কার করে যদি নির্বাচন নভেম্বরে দেয়া হয় তাহলেও আমরা অংশগ্রহণ করবো।

ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন্দ বলেন, আমরা জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ চাই। আর কোন ফ্যাসিস্ট যেন বাংলাদেশে জন্ম না নেয়, সেজন্য আমরা অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করবো।

হেফাজতে ইসলামের নেতা ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন বলেন, নুরকে আঘাত করা হয়নি। যারা ১৬ বছর আন্দোলন করেছে, তাদেরকে আঘাত করা হয়েছে। জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলসহ আওয়ামী লীগের সকল সহযোগি দলকে নিষিদ্ধ করে আগামী নির্বাচন করতে হবে।

বিকাল ৩টায় সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও দুপুর থেকেই মিছিল নিয়ে অংশগ্রহণ করেন গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা। পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশে সংহতি জানান। ফ্যাসিবাদ বিরোধী দলগুলোর নেতারা একই মঞ্চে পাশাপাশি বসে এদিন নিজেদের মধ্যে ঐক্য মজবুত করার আহ্বান জানান।

এ সময় আরও বক্তব্য দেন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির কামাল উদ্দিন পাটোয়ারী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির শিকদার হারুন মাহমুদ, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মুসা বিন ইযহার, গণসংহতি আন্দোলনের বাচ্চু ভূঁইয়া, এবি পার্টির আনোয়ার সাদাত টুটুল, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব ড. গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী দলের (পিএনপি) চেয়ারম্যান ফিরোজ মোহাম্মদ লিটন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) রাশেদ প্রধান, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) মোমিনুল আমিন, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) একাংশের ক্বারী আবু তাহের, খেলাফত মজলিসের মুহাম্মদ মুনতাসির আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ড. আবু মূসা মোহাম্মদ আরিফ বিল্লাহ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান, বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টির আবুল কাশেম মজুমদার, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মো. শামসুদ্দিন পারভেজ, ডেমোক্রেটিক লীগের খোকন চন্দ্র দাস, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) অপর অংশের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ-আল-হারুন, জনতার অধিকার পার্টির (পিআরপি) তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রমুখ।