খুলনা | মঙ্গলবার | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ২৫ ভাদ্র ১৪৩২

স্বাস্থ্য খাতের করুণ দশা অব্যবস্থাপনা দূর করুন

|
১২:০৫ এ.এম | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫


বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের চিত্র যেন এক গভীর সংকটের প্রতিচ্ছবি। রাজধানী থেকে জেলা-উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত হাসপাতালগুলোতে দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও উদাসীনতার কারণে সাধারণ মানুষ মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে হচ্ছে বঞ্চিত। গত শনিবার জাতীয় একটি দৈনিকে প্রকাশিত পাঁচটি প্রতিবেদন বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতকে এক উদ্বেগজনক ও ভয়াবহ বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে মেয়াদোত্তীর্ণ রি-এজেন্ট দিয়ে ১২ হাজারের বেশি রোগীর রক্ত পরীক্ষা হয়েছে।
ঘটনাটি কেবল অবহেলার নয়, রোগীর জীবনের প্রতি চরম উদাসীনতার প্রমাণ। যেসব পরীক্ষার ওপর নির্ভর করে চিকিৎসা দেওয়া হয়, সেগুলো ভুল হলে তা রোগীর জীবনের জন্য মারাত্মক ঝুঁঁকি তৈরি করে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। ময়মনসিংহে দালালদের দৌরাত্ম্য চরমে উঠেছে।
গাজীপুরের কালীগঞ্জে রোগীর খাবার নিয়ে অনিয়ম, সবই স্বাস্থ্যসেবার মৌলিক দুর্বলতাকেই প্রকাশ করে। সব থেকে হতাশাজনক হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো অনিয়মের ব্যাপারে নির্বিকার। বরিশালে একটি আধুনিক ক্যান্সার হাসপাতালের ১৭ তলা ভবন তৈরি হলেও সেখানে চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। দীর্ঘদিন ধরে যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে পড়ে আছে, আর রোগীরা বাধ্য হয়ে দূর-দূরান্তে ছুটছে।
অন্যদিকে গুলশান-ভাটারায় প্রবাসী কর্মীদের জন্য পরিকল্পিত ৩০০ শয্যার হাসপাতাল সংকুচিত হয়ে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২০ শয্যার ভবনে। এ রকম স্বচ্ছতা ও পরিকল্পনাহীন প্রকল্প সরকারি অর্থের অপচয় ছাড়া কিছু নয়।
সরকারি হাসপাতালগুলোতে দালালচক্রের উৎপাত বহু পুরনো ঘটনা ঘটনা। তারা রোগীদের ভুল তথ্য দিয়ে হয়রানি করছে এবং অর্থনৈতিকভাবে শোষণ করছে। এসব অনিয়ম বন্ধে মাঝেমধ্যে অভিযান চললেও দালালরা বারবার ফিরে আসছে।
এর মূল কারণ, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ও দীর্ঘমেয়াদি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। এসব উদাহরণ প্রমাণ করে, দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় নীতি নির্ধারণ থেকে মাঠ পর্যায়ের সেবা-সবখানেই জবাবদিহি ও কার্যকর তদারকির অভাব। মানুষ যখন সরকারি হাসপাতালের সেবা নিতে এসে দুর্নীতি, হয়রানি ও অনিয়মের শিকার হয়, তখন তারা বেসরকারি খাতে অতিরিক্ত খরচে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হয়। ফলে স্বাস্থ্যসেবা হয়ে দাঁড়ায় ধনী-গরিব বৈষম্যের প্রতিচ্ছবি।
এই দূরবস্থা থেকে বের হতে হলে স্বাস্থ্য খাতে প্রশাসনিক সংস্কার জরুরি। হাসপাতাল পরিচালনায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে এবং নিয়মিত তদারকি ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। নতুন প্রকল্প শুরু করার আগে পূর্ণাঙ্গ মাস্টারপ্ল্যান, জনবল প্রশিক্ষণ এবং যন্ত্রপাতি ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য। একই সঙ্গে দালালচক্র ও সরবরাহকারী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। মানুষের জীবন নিয়ে এমন অবহেলা-অব্যবস্থাপনার অবসান হতে হবে।