খুলনা | মঙ্গলবার | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ২৫ ভাদ্র ১৪৩২

দিঘলিয়ায় ব্যবসায়ী আব্দুর রবের রহস্যজনক মৃত্যু : আত্মহত্যা নাকি পরিকল্পিত হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:৫৬ এ.এম | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫


দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর ইউনিয়নে ব্যবসায়ী আব্দুর রবের রহস্যজনক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ধীরে ধীরে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো কোনো সুস্পষ্ট তদন্ত ফলাফল না আসায় এলাকাজুড়ে চলছে নানামুখী আলোচনা-সমালোচনা এবং জনমনে তৈরি হচ্ছে নানা প্রশ্ন।
তার পরিবারের সদস্যরা জানান, বারাকপুর ইউনিয়নের কেবলঘাট এলাকার মৃত শওকত আলীর বড় ছেলে এস এম আব্দুর রব (৪৫)-কে গত ১ মার্চ  নিজ বাড়ির দ্বিতীয় তলায় গলায় ফাঁস লাগানো ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। স্থানীয়রা প্রথমে ঘটনাটিকে আত্মহত্যা হিসেবে দেখলেও পরিবারের পক্ষ থেকে এটি রহস্যজনক মৃত্যু হিসেবে দাবি করা হচ্ছে এবং তারা ঘটনাটিকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হিসেবেও সন্দেহ করছেন।
মৃতের পরিবারের অভিযোগ, এস এম আব্দুর রবের দ্বিতীয় স্ত্রী সুলতানা খাতুন শামীমা (৩০) এই মৃত্যুর সঙ্গে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকতে পারেন। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী সুলতানা খাতুন শামিমা, শ্বশুর কওছার খান এবং শাশুড়ি মনিরা বেগমকে আসামি করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে মামলাটি আদালতে বিচারাধীন থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়ায় পরিবারের পক্ষ থেকে গভীর ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করা হয়েছে।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে আরও জানা যায়, এস এম আব্দুর রবের প্রথম স্ত্রী অন্যত্র পালিয়ে বিয়ে করায় তার রেখে যাওয়া একমাত্র শিশু সন্তান মো. মোস্তফাকে লালনপালনের প্রয়োজনে তিনি দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন। ২০২১ সালের ৪ মার্চ তিনি বারাকপুর ইউনিয়নের লাখোহাটি খানাবাড়ী গ্রামের কওসার খানের বিধবা কন্যা সুলতানা খাতুন শামীমার সাথে পারিবারিকভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন মৃত আব্দুর রব।
এলাকাবাসীর দাবি, ব্যবসায়ী হিসেবে সুপরিচিত আব্দুর রব ছিলেন শান্ত-শিষ্ট ও ভদ্রস্বভাবের মানুষ। তার আকস্মিক ও অপ্রত্যাশিত মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে এবং এর পেছনে পরিবার থেকেই ষড়যন্ত্র থাকতে পারে এমন ধারণা থেকেই এখন এলাকায় ব্যাপক গুঞ্জন ও আলোচনার জন্ম হয়েছে।
এ বিষয়ে আব্দুর রবের মা ঝরনা বেগম বলেন, মৃত্যুর আগের দিন আমার ছেলে রব কে দোকান থেকে তার শ্বশুর ডেকে নিয়ে কি এমন কথা বলল। যে পরের দিন আমার ছেলে রব এর ঘর থেকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হল।
আব্দুর রব এর ভাই আব্দুল হক বলেন, বড় ভাইয়ের বউ তার নামে একটি ট্রেড লাইসেন্স তৈরি করেন। যে নামে কোন প্রতিষ্ঠানই নেই এবং আমার ভাইয়ের টাকা আত্মসাৎ করেছে। এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করার পরেই আমার ভাই আত্মহত্যা করেছে। আমি মনে করি আমার ভাই আত্মহত্যা করেনি তাকে মারা হয়েছে।
আব্দুর রব-এর আরেক ভাই আব্দুল করিম বলেন, আমার বড় ভাই পহেলা মার্চ শুক্রবার মারা যায়। ভাই মারার পর ভাবির ভিতরে কোন শোক নেই আমার মনে হয় ভাবীর কারণেই আমার ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে।
নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে আব্দুর রব-এর স্ত্রী সুলতানা খাতুন শামীমা বলেন, তার ভাই-বোনদের সাথে তার মনোমালিন্য ছিল যে কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তিনি মারা যাওয়ার পরে আমাকে জানানো হয়েছিল না। আমিও চাই উদঘাটন হোক আমার স্বামীর মৃত্যু কি করে হয়েছিল। তিনি যে আত্মহত্যা করেছেন আমিও বিশ্বাস করতে পারছি না।
দিঘলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এইচ এম শাহীন বলেন, এঘটনার পর একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছিল ইতোমধ্যেই তার রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। এছাড়া আদালতে যে মামলাটির কথা বলছেন আপনারা, সেই মামলাটি এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে এসে পৌঁছায়নি।