খুলনা | শনিবার | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ২৯ ভাদ্র ১৪৩২

ন্যায়বিচারের দৃষ্টান্ত তৈরি হোক

|
১১:৩৫ পি.এম | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫


২০২৪ সালের জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়। এই আন্দোলন শুধু একটি সরকারের পতনই ঘটায়নি, বরং ক্ষমতার অপব্যবহার, নৃশংসতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের এক ভয়াবহ চিত্র উন্মোচন করেছে। অভ্যুত্থানের রক্তাক্ত অধ্যায় নতুন করে আলোচনায় এসেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তিনজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীর জবানবন্দিতে। এই সাক্ষ্যগুলো শুধু ভয়াবহ সহিংসতার চিত্রই তুলে ধরেনি, বরং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার শীর্ষ পর্যায়ে পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞের ইঙ্গিতও দিয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে তিনজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীর জবানবন্দিতে উঠে এসেছে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানো, নির্যাতন, হত্যাকাণ্ড এবং লাশগুমের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের ভয়াবহ বিবরণ। সাক্ষীদের বয়ানে যে নৃশংসতার চিত্র উঠে এসেছে, তা যেকোনো বিবেকবান মানুষকে স্তম্ভিত করবে। চট্টগ্রামের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ হাসান রাষ্ট্রীয় বর্বরতার এক জীবন্ত দলিল হয়ে বেঁচে আছেন। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর শরীরে বিদ্ধ ১১টি গুলির মধ্যে এখনো তিনটি রয়ে গেছে।
গাজীপুরের সোহেল মাহমুদ চোখের সামনে দেখেছেন, কিভাবে এক আন্দোলনকারীকে রিকশার গ্যারেজ থেকে টেনে এনে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে এবং পরে তাঁর লাশ গুম করা হয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ আশরাফুল ইসলাম, যিনি সরাসরি জানিয়েছেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাঁর এই বক্তব্য প্রমাণ করে, সহিংসতা ছিল রাষ্ট্রীয়ভাবে অনুমোদিত। আরো তাৎপর্যপূর্ণ হলো, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল­াহ আল মামুনের স্বীকারোক্তি। তাঁর রাজসাক্ষী হওয়া রাষ্ট্রযন্ত্রের সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত দায়বদ্ধতার প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি’ আন্তর্জাতিক আইনের একটি স্বীকৃত নীতি, যা এবার বাস্তবায়নের পথে। এই বিচারপ্রক্রিয়ার গুরুত্ব এখানেই যে এটি শুধু অতীতের অপরাধের বিচার নয়, ভবিষ্যতের জন্য একটি সতর্কবার্তা। রাজনৈতিক সহিংসতা, নির্বিচার গুলি, লাশ গুম-এসব অপরাধের সংস্কৃতি যদি ভাঙতে হয়, তবে এই বিচারকে হতে হবে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং দ্রুত।
বাংলাদেশের মানুষ বহুবার দেখেছে, বড় বড় অপরাধ বিচারহীন থেকে গেছে। এবার যদি ন্যায়বিচার আবারও প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তবে তা গণতন্ত্রের প্রতি মানুষের আস্থা আরো ক্ষতিগ্রস্ত করবে। আমরা বিশ্বাস করতে চাই যে এই বিচার বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সহিংসতার বিচারে পৃথিবীর ইতিহাসেই একটি নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করবে।