খুলনা | রবিবার | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ৩০ ভাদ্র ১৪৩২

‘ক্ষমতার স্বাদ নিতে আসিনি’ ক্ষমতা নিয়ে নেপালের নতুন প্রধানমন্ত্রী

খবর প্রতিবেদন |
০৪:৩২ পি.এম | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫


নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও দেশটির সুপ্রিম কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি বলেছেন, আমার দল এবং আমি ক্ষমতার স্বাদ নিতে এখানে আসিনি। ৬ মাসের বেশি আমরা থাকব না। নতুন সংসদের হাতে দায়িত্ব তুলে দেব। আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া আমরা সফল হতে পারব না।

৭৩ বছর বয়সী সুশীলা কার্কি দায়িত্ব নেওয়ার পর সাংবাদিকদের উদ্দেশে এ কথা বলেন। খবর এনডিটিভি ও দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট-এর। এর আগে রবিবার সকালে ‘সিংহ দরবার’-এ দায়িত্ব নেওয়ার আগে তিনি লাইনচৌড়ের শহীদ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

দায়িত্বগ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কি দেশজুড়ে দুর্নীতিবিরোধী জেন-জি আন্দোলনের প্রশংসা করেন, নিহতদের পরিবারকে ১০ লাখ রুপি করে সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেন। একইসঙ্গে নিহতদের শহীদ ঘোষণা করা হবে বলে জানায় সরকার। আহতদের চিকিৎসার সব খরচ এবং আর্থিক সহায়তাও দেবে অন্তর্বর্তী সরকার।

দ্য হিমালয়ান টাইমস জানিয়েছে, সাম্প্রতিক আন্দোলনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭২ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ৫৯ জন বিক্ষোভকারী, ১০ জন কারাবন্দি এবং ৩ জন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। কার্কি বলেন, ‘মাত্র ২৭ ঘণ্টার আন্দোলনে এমন পরিবর্তন আমি আগে দেখিনি। আমাদের দৃঢ় সংকল্প নিয়ে এগোতে হবে।’

অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনে ভাঙচুরের ঘটনাও উল্লেখ করেন। তিনি জানান, সরকার এসব ঘটনার তদন্ত করবে এবং যাদের সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে তাদের ক্ষতিপূরণ দেবে। সুশীলা কার্কি বলেন, ‘যেভাবে প্রতিবাদের নামে ঘটনাগুলো ঘটেছে, তা পরিকল্পিত মনে হয়। এতে ষড়যন্ত্রের প্রশ্ন ওঠে।’

তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগত সম্পত্তি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে; তাদের আমরা ছেড়ে দেব না। সরকার ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করবে। সেটা সহজ ঋণ বা অন্য কোনো ব্যবস্থার মাধ্যমে হতে পারে। ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত হবে।’

কার্কি বলেন, নেপাল এখন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার হবে পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা।

নেপালে গত সপ্তাহে জেন-জি আন্দোলন প্রাণঘাতী সংঘাতে রূপ নেয়। কিন্তু এর রেশ শুরু হয়েছিল আরও আগে থেকে। হিমালয়ের কোলঘেঁষা দেশটিতে দারিদ্র্য থাকলেও রাজনৈতিক নেতা ও কর্তাব্যক্তিদের সন্তানদের বিদেশে ভোগবিলাস ও রাজকীয় জীবন-যাপন ক্ষোভ তৈরি করছিল।

এসব নিয়ে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগের প্লাটফর্মগুলোতে সমালোচনা ও নিন্দা হতে থাকে। এর সঙ্গে প্রকাশ হতে থাকে সরকারের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভও। কিন্তু সরকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কড়াকড়ি আরোপ করে। এই পদক্ষেপ বুমেরাং হয়। উল্টো রাস্তায় নামেন প্রতিবাদকারীরা। তারা ৮ সেপ্টেম্বর পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। বিক্ষোভ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলপ্রয়োগ করলে সেদিনই ১৯ জন নিহত হন।

আন্দোলনকারীরা প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবাসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতার বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুর চালান। শেষ পর্যন্ত ৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী ওলি পদত্যাগে বাধ্য হন।