খুলনা | সোমবার | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ৩১ ভাদ্র ১৪৩২

নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে একাধিক তদন্ত চলছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে

সবুরণনেছা মহিলা কলেজে উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ

এন আই রকি |
১২:৪৮ এ.এম | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫


নগরীর সবুরণনেছা মহিলা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ মরিয়ম ছিদ্দীকার বিরুদ্ধে নানান অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তাধীন থাকা অবস্থায় কলেজটিতে উপাধ্যক্ষ নিয়োগ নিয়ে ফের সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি গোপালগঞ্জের বাসিন্দা বলে জানা গেছে।
অধ্যক্ষের শ^শুর বাড়ির এলাকার বাসিন্দা এবং স্বামীর রাজনৈতিক সহকর্মীকে উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে জোর তদবির চলছে বলে কলেজের একাধিক সূত্র জানায়। ইতোমধ্যে কলেজের উপাধ্যক্ষ নিয়োগের তারিখও পরিবর্তন করা হয়েছে। বিপুল অর্থের বিনিময়ে দিঘলিয়া উপজেলার সরোয়ার খান কলেজের শিক্ষক মোঃ টিপু সুলতানকে কলেজের উপাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। 
এদিকে কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ মরিয়ম ছিদ্দীকার বিরুদ্ধে চলমান অভিযোগগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত, গত আওয়ামী লীগের আমলে সভাপতির সাথে সমঝোতা করে ২২ জন শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতির তদন্ত এবং বর্তমানে আর্থিক অনিয়মের মাধ্যমে উপাধ্যক্ষ নিয়োগের প্রতিবাদে খুলনা জেলা প্রশাসক, মাউশিসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
জানা যায়, গত জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের একটি টিম কলেজটির অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে খুলনায় আসেন। এসময় তারা আওয়ামী লীগের আমলে শিক্ষকসহ বিভিন্ন নিয়োগে অনিয়ম, আত্মীয়করণ, ভুয়া বিল ভাউচার বিভিন্ন বিষয়ে তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তলব করেন। এমন অবস্থার মধ্যে কলেজটিতে উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগের জন্য মরিয়া হয়ে পড়েন। গত ২৪ জুন একটি জাতীয় দৈনিকে উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেন অধ্যক্ষ মরিয়ম ছিদ্দীকা। উলে­খ্য, অধ্যক্ষ মরিয়ম ছিদ্দীকার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সমূহ তদন্ত না করেই গত ১৭ জুন অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের সভায় উপাধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য কমিটি গঠন ও পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। 
জানা গেছে উপাধ্যক্ষ পদে আবেদন করেন খুলনার সরোয়ার খান কলেজ থেকে ৩ জন, সবুরণনেছা মহিলা ডিগ্রী কলেজের ৩ জন এবং রূপসা কলেজের ৩ জন। গত ৬ সেপ্টেম্বর নিয়োগ পরীক্ষার কথা থাকলেও সেটা পেছানো হয়। আগামী শনিবার ফের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।  
তবে দিঘলিয়া সরোয়ার খান কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও লেবার পার্টির মহানগরের সভাপতি এস এম সাইফুদ্দোহা তার স্ত্রী মরিয়ম ছিদ্দীকার মাধ্যমে টিপু সুলতানকে সবুরণনেছা মহিলা ডিগ্রী কলেজের উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগের জন্য চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া টিপু সুলতান এবং এস এম সাইফুদ্দোহার দুইজনের বাড়ি যশোর জেলার বাঘারপাড়া উপজেলায়। এমন অবস্থায় কলেজের নিয়োগ যেন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় এবং আর্থিক অনিয়মের মাধ্যমে টিপু সুলতানের নিয়োগ না হয় সেজন্য বিভিন্ন মহলে লিখিত অভিযোগ করেছেন সবুরণনেছা মহিলা ডিগ্রী কলেজের একাধিক শিক্ষক। 
কলেজটির বর্তমান অধ্যক্ষ মরিয়ম ছিদ্দীকা জানান, উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগের তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। আগামী শনিবার নিয়োগ পরীক্ষা হবে। আমিও শুনেছি ৭/৮ লাখ টাকার বিনিময়ে টিপুকে নিয়োগ দেওয়ার একটা কথা রটেছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এখনও নিয়োগই হলো না তারপরও এমন অভিযোগ বিভিন্ন দপ্তরে কেন দেওয়া হচ্ছে আমি জানি না। 
অধ্যক্ষের স্বামী ও বাংলাদেশ লেবার পার্টির খুলনা মহানগরের সভাপতি এস এম সাইফুদ্দোহা বলেন, টিপু সুলতান আগে লেবার পার্টি করতেন তবে এখন আর আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখেন না।
দিঘলিয়া সরোয়ার খান কলেজের শিক্ষক ও উপাধ্যক্ষ প্রার্থী মোঃ টিপু সুলতান  জানান, সাইফুদ্দোহা স্যার একসময় আমাদের কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। আমার এবং তার গ্রামের বাড়ি যশোর জেলার বাঘারপাড়া উপজেলায়। আমাকে সে কয়েকদিন লেবার পার্টি করার জন্য বিভিন্ন প্রোগ্রামে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমার কোন পদ নেই। তাছাড়া নিয়োগের জন্য আমি টাকা দেব কোথা থেকে। আমার কাছে এত টাকা নেই। আমি এখন তাবলিগ জামাত করি। 
খুলনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং কলেজের নিয়োগ বোর্ডের সদস্য শেখ রায়হানা ইসলাম বলেন, সকলের সম্মতিক্রমে নিয়োগ পরীক্ষা পিছিয়েছে। টাকা নিয়ে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে আমি জানি না। আমি এটা অবশ্যই খোঁজ নিবো।
এদিকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া অধ্যক্ষ মরিয়ম ছিদ্দিকার বিরুদ্ধে আনীত বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ সমূহ তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ স্থগিত রাখার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীবৃন্দ ও অভিভাবকমহল।