খুলনা | সোমবার | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ৩১ ভাদ্র ১৪৩২

রূপসায় বাস-মালিক সমিতির সংবাদ সম্মেলন : দাবি না মানলে ৬ অক্টোবর থেকে বাস চলাচল বন্ধের আল্টিমেটাম

খুলনা-বরিশাল সড়ক-মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নসিমন, করিমনসহ অবৈধ যান, ঘটছে দুর্ঘটনা

আল মাহমুদ প্রিন্স |
১২:৪৮ এ.এম | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫


উচ্চ আদালতের নির্দেশ অপেক্ষা করে খুলনা টু বরিশাল পর্যন্ত (পাঁচ জেলায়) সড়ক-মহাসড়কে আজও বহাল তবিয়তে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে যন্ত্রদানব অবৈধ যান নসিমন, করিমন, ভটভটি, আলমসাধু, ইজিবাইক, মাহিন্দ্রা ও ব্যাটারি চালিত ভ্যান। অবৈধ এসব যান চলাচল অতি শিগগিরই বন্ধ না হলে আগামী ৬ অক্টোবর থেকে সাত মালিক সমিতির ৫০ রুটে পরিবহন (বাস) চলাচল বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। 
রোববার বেলা ১১টায় রূপসা-বাগেরহাট বাস-মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস মালিক সমিতি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ আল্টিমেটাম ঘোষণা করা হয়। 
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মালিক সমিতির সভাপতি মোল­া আনোয়ারুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ মহিউদ্দিন শেখ, নির্বাহী সভাপতি মোল­া সাইফুর রহমান, কার্যকরি সভাপতি মুর্শিদুর রহমান (লিটন), সিনিয়র সহ-সভাপতি বিকাশ মিত্র, সহ-সভাপতি, মিঠু মোল­া, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইসমাইল হোসেন, উপ-সাধারণ সম্পাদক, মোঃ রেজাউল করিম, সহ-সাধারণ সম্পাদক মোঃ সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম তারেক, কোষাধ্যক্ষ রকিব উদ্দিন রশিদ, দপ্তর সম্পাদক তৌহিদ উদ্দিন শেখ, লাইন সম্পাদক মোঃ জান্নাতুন নাঈম, মোঃ সেলিম মুন্সি, মোঃ সাকির চৌধুরী, মোঃ গহর আলী, আশরাফ-উজ-জামান শাহিন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে,  দীর্ঘদিন মালিক শ্রমিকরা বিভিন্ন ভাবে বৈষম্য ও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে আসছে। বিশেষ করে সরকার অনুমোদন ব্যতীত বিআরটিসি নামধারী গাড়িগুলো লাগামহীনভাবে বিভিন্ন সড়কে চলাচল করছে। তাদের সরকার কর্তৃক নেই কোনো রকম অনুমোদন। নিলামকৃত বিআরটিসি গাড়ি নিলাম কিনে মেরামত করে বিআরটিসি'র নাম ব্যবহার করে সড়কে চলাচল করছে। যা সম্পূর্ণ আইনের পরিপন্থী। কথিত আছে যে স্থানীয় ডিপো ম্যানেজারদের সাথে যোগসাজো একটি বিশেষ মহল এ ধরনের অপকর্ম করছে। প্রকৃতপক্ষে, তারা স্থানীয় মালিক শ্রমিকদের আর্থিক ক্ষতি এবং সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। এছাড়া সরকারি অনুমোদনবিহীন অবৈধ থ্রি-হুইলার ইজিবাইক মাহিন্দ্রা, নসিমন, ভটভটি আলমসাধু ও ব্যাটারি চালিত ভ্যান সড়ক মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এসব গাড়ি চালকদের নামমাত্র লাইসেন্স থাকলেও নেই কোনো অভিজ্ঞতা। এসব গাড়ি চালকরা সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চলাচল করছে। অথচ প্রকৃত অর্থে যারা মালিকরা প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ টাকা ট্যাক্স প্রদান করে থাকেন। গাড়ি চালকদের অভিজ্ঞতা না থাকায় সড়ক-মহাসড়কে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। ইতোমধ্যে, খুলনা জেলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের সকল জেলায় অবৈধ যানগুলো মহাসড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কে চলাচল সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। এছাড়া দূরপাল­া পরিবহনগুলো সরকার এবং বিআরটিএ'র নিয়ম-কানুন অবজ্ঞা ও উপেক্ষা করে বিভিন্ন মোড়ে টিকিট কাউন্টার স্থাপন করে ক্ষতি করে আসছে। গত ৩ সেপ্টেম্বর এসব সমস্যার প্রতিকার চেয়ে প্রশাসনের সহযোগিতা ও হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এছাগা গত ২৫ আগস্ট পাঁচ জেলার সাতটি মালিক সমিতির যৌথ সভায় এসব গান বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হশ। 
উলে­খ্য, সরকার কর্তৃক অনুমোদিত বিআরটিসি পরিবহনগুলো মহাসড়কে নিয়ম-নীতি মেনে চলার বিধান থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে,  ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে খুলনা ডিপোর তৎকালীন ম্যানেজার ওমর ফারুক মেহেদীর একচ্ছত্র নেতৃত্বে বিআরটিসি পরিবহন চালকরা তাদের ইচ্ছামত গাড়িতে যাত্রী আনা নেওয়া করেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত পাঁচ আগস্ট থেকে বিআরটিসি বেড়ে গেছে। 
অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, বিগত সরকারের আমল থেকে কতিপয় নামধারী ক্যাডার মালিক সমিতির অনুমতি ছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের রুটে স্বঘোষিত রাজিব পরিবহন, অর্থি পরিবহন, মেট্রো পরিবহন, আব্বাস পরিবহন, সৈয়দ পরিবহনসহ বেশকিছু পরিবহন মালিকরা তাদের ইচ্ছামত যাত্রী আনা নেওয়া করে আসছেন। গত ৫ আগস্ট এর পর এসব অবৈধ পরিবহন (বাস) স্থায়ীভাবে বন্ধের ব্যাপারে  একাধিকবার উদ্যোগ নিলেও মালিক সমিতি কর্তৃপক্ষ এখনো সুষ্ঠু কোনো সমাধান পায়নি। 
মানিক সমিতির দেয়া তথ্য মতে, সাত মালিক সমিতির অধীনে আড়াই হাজার পরিবহন (বাস) চলাচল করে থাকে।  রূপসা-বাগেরহাট বাস মালিক সমিতির কর্মকর্তারা অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে সমিতির অন্তর্ভুক্ত প্রত্যেক গাড়ি প্রতি প্রতিদিন চলি­শ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে প্রতিদিন গাড়ি প্রতি চাঁদা আদায় করা হতো সাড়ে তিনশ’ থেকে চারশ’ টাকা। একজন পরিবহন মালিক মাসে বিশ দিন ট্রিপ পেলেও ব্যাঙের ছাতার মত অবৈধ স্বঘোষিত পরিবহন মালিকদের জন্য প্রকৃত পরিবহন মালিকরা ঠিকমত পাচ্ছে না গাড়ির ট্রিপ। ফলে প্রকৃত পরিবহন মালিকরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। 
সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ তাদের দীর্ঘদিনের দাবিসমূহ তুলে ধরে প্রতিকার কামনা করেন। তাদের দাবিগুলো আগামী ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়ন করা না হলে আগামী ৬ অক্টোবর থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত পাঁচ জেলার সাতটি বাস মালিক সমিতি প্রায় ৫০টি রুটে তাদের সকল গাড়ি অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ রাখবেন।
বাগেরহাট বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, দাবি বাস্তবায়ন না হলে আগামী ৬ অক্টোবর থেকে পাঁচ জেলার সাতটি বাস মালিক সমিতির ৫০টি রুটে সকল গাড়ি চলাচল অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ রাখা হবে। 
রূপসা-বাগেরহাট বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ মহিউদ্দিন শেখ বলেন, দাবি বাস্তবায়ন না হলে আগামী ৬ অক্টোবর থেকে মালিক সমিতির ৫০টি রুটে সকল গাড়ি চলাচল অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ করা হবে।