খুলনা | মঙ্গলবার | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ৩১ ভাদ্র ১৪৩২

‘একই পদে ভারতীয় কর্মকর্তার বেতন ২৫ লাখ, বাংলাদেশীরা লাখ টাকা’

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে ভারতীয়দের বাড়তি বেতন, অনুসন্ধানে দুদক

খবর প্রতিবেদন |
১২:৪২ এ.এম | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫


বাগেরহাটের রামপালে অবস্থিত ভারত-বাংলাদেশের যৌথ কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অনিয়ম, অবৈধভাবে মালামাল বিক্রি ও ভারতীয়দের অতিরিক্ত বেতন দেয়ার অভিযোগের অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোমবার দুদক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
দুদক জানায়, এ বিষয়ে গত জুনে আইনজীবী সালেকুজ্জামান সাগর হাইকোর্টে রিট করেন। সেখানে বলা হয়, একজন বাংলাদেশি প্রকৌশলীর বেতন যেখানে ১ লাখ টাকা, সেখানে একই পদে ভারতীয় প্রকৌশলী পাচ্ছেন ২৫ লাখ টাকা।
এছাড়া উচ্চপদে ভারতীয়দের প্রাধান্য, বিশেষ ধর্মের লোকজনকে বাড়তি সুবিধা দেয়াসহ নানা অনিয়মের বিষয়ও উলে­খ করা হয়।
রিটের শুনানিতে আদালত বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে রুল জারি করেন। এর পরেই দুদকের বাগেরহাট অফিস রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে অভিযান চালিয়ে এই অনিয়মের প্রাথমিক প্রমাণ পায়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের নিজস্ব নীতিমালা থাকলেও ভারতীয় কর্মকর্তাদের এনটিপিসির নীতিমালা অনুযায়ী বেশি সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে। এ বিষয় অনুসন্ধানে কমিটি করেছে দুদক।
একই পদে ভারতীয় কর্মকর্তার বেতন ২৫ লাখ : বাগেরহাটের রামপালে অবস্থিত ভারত-বাংলাদেশের যৌথ কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সুন্দরবনের কাছে হওয়ায় শুরু থেকেই ছিল সমালোচনার কেন্দ্রে।
রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ তুলে গত জুন মাসে হাইকোর্টে একটি রিট করেন আইনজীবী সালেকুজ্জামান সাগর। তার অভিযোগ, একজন বাংলাদেশি ইঞ্জিনিয়ারের বেতন যেখানে ১ লাখ টাকা, সেখানে একই পদে ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ার পাচ্ছেন ২৫ লাখ টাকা।
এছাড়া উচ্চপদে ভারতীয়দের প্রাধান্য, বিশেষ ধর্মের লোকজনকে বাড়তি সুবিধা দেয়াসহ নানা অনিয়মের কথাও উলে­খ করা হয়। রিটের শুনানিতে আদালত বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে রুল জারি করেন।
রুল জারির পরপরই রামপালে অভিযান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। স¤প্রতি পাঠানো প্রতিবেদনে উলে­খ করা হয়, বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের নিজস্ব নীতিমালা থাকলেও ভারতীয় কর্মকর্তাদের বেশি সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী একজন বিদেশি কর্মকর্তার বিপরীতে ২০ জন দেশি কর্মকর্তা থাকার কথা থাকলেও বাংলাদেশিদের অদক্ষতার অজুহাত দেখিয়ে এ নিয়ম মানা হচ্ছে না। এর ভিত্তিতেই অনুসন্ধানের সুপারিশ করেছে অভিযানকারী দল।
জানা যায়, রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বর্তমানে ৫২৪ জন কর্মরত আছেন। এদের মধ্যে ভারতীয় নাগরিক রয়েছেন ৩৬ জন। রামপাল কেন্দ্রের অফিসে একজন পিডি, পাঁচজন জিএম, ১৫ জন এজিএম, ৯ জন ডিজিএম রয়েছেন। আর ঢাকার অফিসে এমডি একজন, চিফ অফিসার একজন, জিএম একজন, ডিজিএম দু’জন, এজিএম একজন রয়েছেন।
রিটকারী আইনজীবী সালেকুজ্জামান সাগর বলেন, রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বাংলাদেশি ও ভারতীয় কর্মকর্তাদের বেতন কাঠামো নিয়ে চরম বৈষম্য হচ্ছে। তাই হাইকোর্টে রিট করা হয়।
এদিকে গত ৫ সেপ্টেম্বর দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা (উপ-পরিচালক) আকতারুল ইসলাম বলেন, ‘কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে বৈষম্য, টেন্ডার নিয়ে অনিয়ম, কেন্দ্রের বিভিন্ন মালামাল লুটপাট করে বিক্রিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে দুদক অভিযান চালায়। প্রমাণসহ দুদক কার্যালয়ের অভিযানের প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।  
তবে এসব বিষয়ে গণমাধ্যমে কথা বলতে রাজি হয়নি রামপাল কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, বেতনের তারতম্য থাকলেও তা অস্বাভাবিক নয়। আর সবকিছুই হচ্ছে নির্মাণকালের যৌথ চুক্তির ভিত্তিতে।
বাংলাদেশ-ভারত সহযোগিতার প্রতীক হিসেবে পরিচিত এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রথম ইউনিট চালুর মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করে। এরপর ধাপে ধাপে দুই ইউনিটই উৎপাদনে যায়। প্রায় ১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতার এই কেন্দ্র বর্তমানে দেশের অন্যতম বৃহৎ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র।
প্রতিষ্ঠানটির সবশেষ তথ্যমতে, আগস্টে বিদ্যুৎ উৎপাদনের হার (প্ল্যান্ট লোড ফ্যাক্টর) ছিল ৭৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ। দেশের মোট ১০ হাজার ১০০ মিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মধ্যে এককভাবে এই কেন্দ্রের অবদান ছিল ৭ দশমিক ৬২ শতাংশ। গত তিন মাস ধরে কেন্দ্রটি ধারাবাহিকভাবে ৬০০ মিলিয়নের বেশি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে আসছে। এ সময়ে মোট উৎপাদন হয়েছে ২ হাজার ৩৬ দশমিক ৪ মিলিয়ন ইউনিট।