খুলনা | মঙ্গলবার | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ৩১ ভাদ্র ১৪৩২

পুলিশ হেফাজতে এক নারীসহ তিনজন

নগরীতে ড্যাপস্ হসপিটাল থেকে চুরির ৬ ঘন্টা পর নবজাতক উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক |
১২:৪৩ এ.এম | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫


খুলনার একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে চার দিনের নবজাতক চুরি হওয়ার ছয় ঘণ্টার মধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে নগরীর রূপসা ইস্পাহানী গলি থেকে ওই নবজাতককে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত এক নারীসহ ৩ জনকে  হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। এদিকে শিশুটিকে পেয়ে আনন্দিত বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যরা। 
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর রূপসা ট্রাফিক মোড়ে অবস্থিত ড্যাপস্ হসপিটাল এ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তৃতীয় তলা থেকে ওই নবজাতককে চুরি করা হয়।
খুলনা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি, তদন্ত) শাহজাহান আহমেদ বলেন, ‘সাঁড়াশি অভিযানে রূপসা ট্রাফিক মোড় থেকে একটু সামনে ইস্পাহানী গলি থেকে নবজাতককে উদ্ধার করা হয়। 
নবজাতকের মা ফারজানা আক্তার বলেন, ‘‘বাগেরহাটের মোংলার সিগন্যাল রোডের বাসিন্দা স্বামী সুজন মিয়াকে নিয়ে সন্তান ডেলিভারির জন্য ক্লিনিকে ভর্তি হই। চার দিন আগে আমার ছেলের সন্তান হয়। আজ সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় আমি ঘুমিয়ে পড়ি।  দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঘুম থেকে জেগে নবজাতককে না পেয়ে চিৎকার শুরু করি। ক্লিনিকের তৃতীয় তলার একটি রুমে আমি চিকিৎসাধীন আছি।’’
নবজাতকের আত্মীয়-স্বজনরা জানান, মোংলা সিগন্যাল রোড এলাকা থেকে আসা সুজন মিয়া ও ফারজানা আক্তার দম্পতির চার দিন আগে ছেলে সন্তান হয়। সোমবার দুপুরে হাসপাতালের তৃতীয় তলা থেকে ওই নবজাতক চুরি হয়েছিল। পরে সিসি টিভি ফুটেজে দেখা যায় দ্বিতীয় তলায় থাকা এক নারী তৃতীয় তলা থেকে এক শিশুকে ঢেকে নিয়ে যাচ্ছে। ওই নারী কাকে নিয়ে যাচ্ছে সেটি স্পষ্ট নয়। তবে তাদের সন্দেহের তীর ওই নারীর দিকে। পুলিশ পরবর্তীতে ওই নারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে শিশুটিকে উদ্ধার করেছে। এ জন্য আমরা খুশি।
নবজাতকের বাবা সুজন বলেন, গণমাধ্যম, প্রশাসন ও চিকিৎসকদের সহযোগিতায় শিশুটিকে ফিরে পেয়েছি। খুব আনন্দ লাগছে। 
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, দ্বিতীয় তলায় থাকা এক নারী তৃতীয় তলা থেকে এক শিশুকে ঢেকে নিয়ে নেমে যাচ্ছে। ওই নারী কাকে নিয়ে যাচ্ছে, সেটি স্পষ্ট না হলেও পুলিশের ওই নারীকে নিয়ে সন্দেহ হয়।
নবজাতকের মা-বাবা বলেন, ‘‘আমাদের আগে দু’টি সন্তান মারা গেছে। এবার আল­াহ একটি ছেলে দিলেন, তাও চোরে নিয়ে যায়।’’ সন্তান ফিরে পেয়ে তারা আনন্দে কেঁদে ফেলেন। 
খুলনা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাওলাদার সানোয়ার হোসেন মাসুদ বলেন, ‘খবর পেয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়। সিসি টিভি ফুটেজে দেখে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হয়। পুলিশের ত্বরিত অভিযানে দ্রুত নবজাতককে উদ্ধার করা সম্ভব হলো।’
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (খুলনা জোন) শিহাব করিম বলেন, সংবাদ পেয়ে প্রথমেই সিসি টিভি ফুটেজ চেক করি। আমাদের পুরো টিম কাজ করেছে। সিসি টিভি ফুটেজ দেখে এক নারীর চলাচলে সন্দেহ হয়। সেই সন্দেহের কারণে আমরা যাচাই-বাছাই করি। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে এই কাজের সঙ্গে জড়িত ৩ সন্দেহভাজনকে হেফাজতে আনা হয়। পরবর্তীতে তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী রূপসার ট্রাফিক মোড়ের পাশ থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। 
চুরির কারণ জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা শিহাব করিম বলেন, ওই নারীও প্রসূতি মা। তিনিও একই হাসপাতালে ছিলেন। ওই নারীর পাঁচটি কন্যা সন্তান রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এ কারণেই হয়তো ছেলে শিশুটিকে চুরি করেছিল। তাকেসহ তিনজনকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ ও যাচাই-বাছাই শেষে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।