খুলনা | মঙ্গলবার | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ৩১ ভাদ্র ১৪৩২

পুলিশ, সাংবাদিকসহ আহত ২৫, পুলিশের ৪ গাড়ি ভাঙচুর পুড়েছে ১১ মোটরসাইকেল

উত্তাল ভাঙ্গা : ইউএনও, থানাসহ চারটি সরকারি দপ্তরে হামলা-ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ

খবর প্রতিবেদন |
১২:৫৪ এ.এম | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫


সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠে ফরিদপুরের ভাঙ্গা। বিক্ষোভ থেকে গড়িয়েছে সহিংসতায়। উপজেলা পরিষদ, ভাঙ্গা থানা, হাইওয়ে থানা, পৌরসভায় হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে বিক্ষুব্ধরা। আগুন দেওয়া হয়েছে মোটরসাইকেলে। এ সময় সেনাবাহিনীর এপিসি লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনা ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে সাংবাদিকদের বাধা দেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিকসহ ২৫ জন আহত হয়েছেন। 
সোমবার দুপুরে ছড়িয়ে পড়ে সহিংসতা। পরে কয়েক হাজার বিক্ষুব্ধ ভাঙ্গা গোলচত্বরে অবস্থান নেয়। দুপুর ১২টা ৪৫ থেকে ১টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত আধাঘণ্টার মধ্যে ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদ ও থানা চত্বরে এ তাণ্ডব চলে।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে গোলচত্বরের ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ভাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান নেয় তারা। এ সময় সেখানে অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে পুলিশকে বিক্ষুব্ধদের কাউকে বাধা দিতে দেখা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আন্দোলনকারীরা প্রথমে উপজেলা পরিষদের হল রুমে ঢুকে শতাধিক চেয়ার, বক্তব্য দেওয়ার ডায়াস, ১০টি ফ্যান ও ৩০টির বেশি লাইট ভাঙচুর করে। এরপর তিন তলা বিশিষ্ট পরিষদ ভবনের প্রতিটি তলায় সাতটি করে মোট ২১টি কক্ষে তছনছ চালানো হয়। এ সময় সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয় এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষের কাচ ভাঙা হয়। পরিষদ চত্বর ও অফিসার্স ক্লাবের গ্যারেজে সাতটি মোটরসাইকেল আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এছাড়াও উপজেলা অফিসার্স ক্লাবেও ভাঙচুর করা হয়।
অন্যদিকে ভাঙ্গা থানায় হামলা চালিয়ে পুলিশের তিনটি গাড়ি ও একটি বড় রিজার্ভ ভ্যান ভেঙে দুমড়ে-মুচড়ে দেওয়া হয়। থানা প্রাঙ্গণে অন্তত চারটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় থানার ব্যানার ও ভবনের কাচও।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চেষ্টা করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়েছেন। তবে সড়কের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন হাইওয়ে পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ রোকিবুজ্জামান।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে দুপুর ১টার দিকে বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে কয়েক হাজার জনতা লাঠিসোঁটা, রামদাসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মিছিল নিয়ে যোগ দিতে যায়। পরক্ষণেই দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালায় তারা। এ সময় ১০ থেকে ১২ জন আর্মড পুলিশের সদস্য দৌড়ে পার্শ্ববর্তী ভাঙ্গা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মসজিদে আশ্রয় নেন। উত্তেজিত জনতার ইটপাটকেলে রক্তাক্ত অবস্থায় দৌড়াতে দেখা যায় পুলিশ সদস্যদের। পরে কিছু সময় তাদের ঘিরে রাখে উত্তেজিত জনতা। একপর্যায়ে মাদ্রাসা ও মসজিদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে পুলিশ সদস্যদের রক্ষা করেন।
এরপর সেখান থেকে বিক্ষুব্ধরা থানার দিকে চলে যায়। থানায় থাকা গাড়ি ও থানা ভবনে ভাঙচুর করে। ভেতরে আটকা পড়েন পুলিশ সদস্যরা। পরে উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে গিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়, আগুন দেওয়া হয় সেখানে থাকা মোটরসাইকেলে। পরে হাইওয়ে অফিস ও পৌরসভা কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়। 
আন্দোলনকারীরা উপজেলা পরিষদে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় মাইটিভির সাংবাদিক সারোয়ার হোসেনকে কুপিয়ে জখম করেন। যমুনা টিভির ভাঙ্গা প্রতিনিধি আব্দুল মান্নানসহ আরও কয়েকজন সাংবাদিকও এসময় আহত হন। বর্তমানে তারা ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক প্রশাসনের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এদিন সকাল থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী- সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা মাঠে অবস্থান নিলে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল। পরে বেলা সাড়ে ১১টায় হঠাৎ করেই বিভিন্ন এলাকায় জড়ো হোন এলাকাবাসী।
বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ মিজানুর রহমান জানান, আমরা কার্যালয় থেকে নিরাপদ স্থানে আছি। কারোর ওপর হামলার ঘটনা ঘটেনি। তবে ইউএনও কার্যালয়ের কিছু অংশে ভাঙচুর করা হয়েছে। নির্বাচন কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে আন্দোলনকারীরা। সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি আপাতত মন্তব্য করবেন না বলে জানিয়েছেন।
অন্যদিকে ভাঙ্গা থানা ও ট্রাফিক পুলিশ কার্যালয়ের ভেতরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা, নির্বাচন কার্যালয়ের কর্মকর্তারা নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছেন বলে কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।
এর আগে ভোর থেকে অবরোধ কর্মসূচি বন্ধ থাকলেও সকাল সাড়ে ১০টার পর ফের তারা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন। এ সময় সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আন্দোলনকারীদের বাধা দিলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে দুপুর ১টার পর থেকে ভাঙ্গা উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হয়ে একযোগে হামলা চালায় বিভিন্ন স্থাপনায়।
তবে ভাঙ্গা থানা ভবনে অবস্থানরত ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোঃ আব্দুল জলিলের বক্তব্য জানতে চেয়েও জানা যায়নি। ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমানও এ ব্যাপারে কিছু বলতে রাজি হননি।
জেলা প্রশাসক মোঃ কামরুল হাসান মোল­া বলেন, ‘আমরা বিক্ষুব্ধদের শান্ত করার চেষ্টা করছি এবং নির্বাচন কমিশনে জানানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশন থেকে আমাদের বলা হয়েছে দ্রুত প্রতিবেদন দিতে। আমরা দ্রুত প্রতিবেদন দিলে আশা করি দু-এক দিনের মধ্যে সমাধান হবে।’
প্রসঙ্গত, গত ৪ আগস্ট নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত গেজেটে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসে ফরিদপুর-৪ আসনের ভাঙ্গার আলগী ও হামিরদি ইউনিয়নকে পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর-২ আসনে সংযুক্ত করা হয়। এর পরেই তিন দফায় গত ৫ দিন ভাঙ্গা হয়ে যাওয়া দু’টি মহাসড়ক, দু’টি রেলপথ ও ঢাকা-মাওয়া ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করেন। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার মানুষ।
গত শনিবার তিন দিনের সকাল সন্ধ্যা অবরোধের ঘোষণা দেয়া হয়। পরে ঘোষণাকারী সর্বদলীয় ঐক্য পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক ও আলগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ম ম সিদ্দিক মিয়াকে আটক করে ডিবি পুলিশ। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বিঘেœর অপরাধে রোববার রাতে ৯০ জনের নাম উলে­খ করে মামলা করেন পুলিশ।