খুলনা | বুধবার | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ২ আশ্বিন ১৪৩২

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি জননিরাপত্তা নিশ্চিত করুন

|
১২:০৮ এ.এম | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫


বাংলাদেশের সামগ্রিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে, যা গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে এই চিত্রই স্পষ্ট হয়। রাজনৈতিক সহিংসতা থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত বিরোধ, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসাসহ নানা কারণে খুনখারাবি বাড়ছে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই লাগামহীনভাবে বাড়ছে। এসব কারণে সমাজে এক ধরনের অস্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাহীনতার জন্ম দিচ্ছে।
জাতীয় নির্বাচনে ভোটগ্রহণের আর মাত্র পাঁচ মাস বাকি। এ সময়ে রাজনৈতিক সহিংসতা বৃদ্ধি বড় আশঙ্কার কারণ হচ্ছে। হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত এক বছরে (সেপ্টেম্বর ২০২৪ থেকে আগস্ট ২০২৫) রাজনৈতিক সহিংসতায় ১৫১ জন নিহত এবং সাত হাজার ৬২৬ জন আহত হয়েছেন।
এসব সহিংসতা মূলত রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার, কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধ, প্রতিশোধপরায়ণতা ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে ঘটেছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর নিষ্ক্রিয়তা বা পক্ষপাতমূলক আচরণ এই পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলছে বলে অপরাধ বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
রাজনৈতিক সহিংসতার বাইরেও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে খুনের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। চট্টগ্রামে সাড়ে ৯ মাসে ১৪৪টি হত্যাকাণ্ড আমাদের সমাজে সহিংসতার ভয়াবহ বিস্তারকেই প্রমাণ করছে।
জায়গাজমির বিরোধ, মাদক ব্যবসা ও রাজনৈতিক প্রতিদ্ব›িদ্বতা সেখানে রক্তপাতের বড় কারণ। রাজধানীতেও চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নতুন আতঙ্ক তৈরি করছে। চাঁদা না পেয়ে নারীকে ছুরিকাঘাত ও তাঁর ভাইকে গুলি করার ঘটনা প্রমাণ করে, অপরাধীরা আইনের তোয়াক্কা করছে না। কক্সবাজার, গোপালগঞ্জসহ সারা দেশেই হত্যাকাণ্ডসহ নৃশংস অপরাধের চিত্র কমবেশি প্রায় একই রকম। বাড়ছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার।
কিশোর গ্যাং নামের উঠতি বয়সী অপরাধীদের কারণে মানুষের মান-সম্মান নিয়ে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
এই নাজুক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নেওয়া অপরিহার্য। পরিস্থিতি উন্নয়নে অন্তর্বর্তী সরকারকে পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোকে যথাযথভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। দ্রুত বিচারের পদক্ষেপ নিতে হবে। অপরাধীরা যেন মনে না করতে না পারে যে খুন বা সহিংসতা করেও পার পেয়ে যাওয়া সম্ভব।
স¤প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনিভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস এ্যান্ড পিস (আইইপি) এ বছরের গ্লোবাল পিস ইনডেক্স (জিপিআই) প্রকাশ করেছে। এতে বাংলাদেশ একলাফে আগেরবারের চেয়ে ৩৩ ধাপ পিছিয়েছে। এক বেলা না খেয়ে হলেও মানুষ নিরাপদে ও মান-সম্মানের সঙ্গে বসবাস করতে চায়। আর সেই নিরাপত্তা প্রদানের দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে।