খুলনা | বৃহস্পতিবার | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ২ আশ্বিন ১৪৩২

ভোমরা স্থল বন্দর দিয়ে ২৯ দিনে ৯৫ হাজার ৭২১ মেট্রিক টন চাল আমদানি

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা |
১২:৫৬ এ.এম | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫


বাজারের উর্ধ্বমুখী চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাল আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। অনুমতি পাওয়ার পর গত ১৯ আগস্ট থেকে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানি শুরু হয়। আমদানির শুরু থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গত ২৯দিনে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে ২৪৭৫টি গাড়িতে করে মোট ৯৫ হাজার ৭২১ দশমিক ৬৩৫ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রাপ্ত দেশের শীর্ষ ৭৩টি প্রতিষ্ঠান এই চাল আমদানি করে। 
সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, দেশের চালের বাজার স্থিতিশিল রাখতে বেসরকারি পর্যায়ে ভারত থেকে সিদ্ধ ও আতপ চাল আমদানির জন্য নির্বাচিত ২৪২টি ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ৪ লাখ ৬১ হাজার মেট্রিক টন সিদ্ধ ও ৩৯ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল বরাদ্দ প্রদান করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মোঃ লুৎফর রহমান কর্তৃক গত ১০ আগস্ট স্বাক্ষরিত এক পত্রে এই বরাদ্দ প্রদান করা হয়। বরাদ্দ প্রাপ্ত আমদানিকারকগণকে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সমুদয় চাল বাংলাদেশে বাজারজাত করতে বলা হয়। সে অনুযায়ি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রাপ্ত দেশের শীর্ষ ৭৩টি চাল আমদানীকারক প্রতিষ্ঠান ভোমরা বন্দর ব্যবহার করে ভারত থেকে চাল আমদানি করছে।
এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে গত ১৯ আগস্ট থেকে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু হয়। প্রথম দিন ভারতীয় ২৪টি ট্রাকে ৯১৮ মেট্রিক টন চাল ভোমরা বন্দরে ঢোকে। শুরু থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারত থেকে ২৪৭৫টি গাড়িতে করে মোট ৯৫ হাজার ৭২১ দশমিক ৬৩৫ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে সবশেষ ১৬ সেপ্টেম্বর ১০০টি ভারতীয় গাড়িতে মোট ৩৯৩৬ দশমিক ২৫৮ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। অমদানিকারক প্রতিষ্ঠান গুলোর মধ্যে গত ২৯ দিনে যশোরের মজুমদার এন্ড সন্স সর্বোচ্চ ১২৪৯৩ দশমিক ৬১৯ মেট্রিক টন চাল আমদানি করেছে। ৩৯৯৯ দশমিক ৯৯৬ মেট্রিক টন চাল আমদানি করে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চাল অমদানি করেছে যশোরের নওয়াপাড়ার সুশান্ত কৃষ্ণ রায়। ভোমরা শুল্ক স্টেশনের দায়িত্বরত কাস্টমসের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ প্রাপ্ত তথ্যের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অপরদিকে ভারতীয় চাল আমদানি শুরু হওয়ায় সাতক্ষীরার বাজারে চালের দাম কেজিতে ২/৩টাকা কমেছে। দেশি ২৮ জাতের চিকন চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৪ টাকা এবং ২৮ জাতের মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি। যা আগে ছিল ৬৬ ও ৬২ টাকা কেজি। ভারতীয় এলসির স্বর্ণ জাতের চাল ৫২ টাকা এবং মোটা চাল (নুরজাহান) ৫০ টাকা, মিনিকেট ৭২/৭৪ টাকা এবং নাজির চাল ৭০/৭২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। 
সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড়বাজারের চালের আড়তের মালিক জাহিদুর রহমান জানান, ভারতীয় চাল বাজারে আসায় মোটা জাতের দালের দাম কেজিতে ২ টাকা কমেছে। তবে দেশি অন্য জাতের চালের দাম প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। দেশি জাতের চালের বেচা কেনা আগের তুলনায় কমে গেছে। বাজারে এলসির চালের সরবরাহ বাড়লে দাম আরো একটু কমতে পারে বলে জানান তিনি।
ভোমরা বন্দরের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স মা মনি ট্রেডার্সের মালিক মনিরুল ইসলাম জানান, আমার ৫০০ মেট্রিক টন অমদানির অনুমতি পেয়েছি। ইতিমধ্যে ১২০ টন এসেছে। আগামীকাল আরো ৪০ টন চাল ঢুকবে। ভারতীয় চাল আসায় সাতক্ষীরার বাজারে চালের দাম কেজিতে ২টাকা কমেছে উলে­খ করে তিনি বলেন, এবার চালের ব্যবসায় লোকসানের মুখে পড়তে হতে পারে। কারণ আজ হঠাৎ করে দাম ২টাকা পড়ে গেছে। এই ব্যবসায় আহমরি তেমন লাভ হয়না। তবুও  নিজেদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য করতে হয়।
ভোমরা স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবু মুসা বলেন, চার মাস বন্ধ থাকার পর ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ১৯ আগস্ট থেকে আবার ভারতীয় চাল আমদানি শুরু হয়েছে। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যবসায়িরা তাদের নির্ধারিত বরাদ্দের চাল আমদানি করতে পারবেন। 
ভোমরা স্থলবন্দর কাস্টমসের সহকারি কমিশনার মোঃ শওকত হোসেন জানান, চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল এ বন্দর দিয়ে সর্বশেষ চাল আমদানি হয়। গত ১৯ আগস্ট থেকে আবারো চাল আমদানি শুরু হয়েছে। গত ১৬ সেপ্টেম্বর গত ২৯ দিনে ২৪৭৫টি গাড়িতে করে মোট ৯৫ হাজার ৭২১ দশমিক ৬৩৫ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই চালের গাড়ি ঢুকছে।