খুলনা | বৃহস্পতিবার | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ৩ আশ্বিন ১৪৩২

‘অন্তর্বর্তী সরকার না দিলে জনগণই পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন করবে’

খবর প্রতিবেদন |
০৫:০৫ পি.এম | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫


ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি ফয়জুল করিম বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার যদি কোনো চাপের মুখে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না দেয়, তবে জনগণই সেই নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে। পিআর পদ্ধতির নির্বাচনে তো বিএনপির আপত্তি থাকার কথা না। কারণ, তাদের উচ্চপর্যায়ের এক নেতা দাবি করেছেন, নির্বাচনে তারা ৯০ শতাংশ ভোট পাবেন।

বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেইটে দলের বিক্ষোভ মিছিল শেষে এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুফতি ফয়জুল করিম এসব কথা বলেন।

ফয়জুল করিম বলেন, আমি মনে করি, ভারত জুলাই চায় না। জুলাইয়ের আইনি ভিত্তি দিতে হবে। আপনারা কি ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন? অন্তর্বর্তী সরকার শুধু নির্বাচন দেওয়ার জন্য ক্ষমতায় আসেনি। নির্বাচনের আগে তিনটি কাজ করতে হবে— সংস্কার, দৃশ্যমান বিচার এবং নির্বাচন। নির্বাচন অবশ্যই পিআর পদ্ধতিতে দিতে হবে। ৮০ শতাংশ জনগণ পিআরের পক্ষে।

তিনি আরও বলেন, পিআরে তো বিএনপির আপত্তি থাকার কথা না। তারা যেহেতু সবার সম্পৃক্ততায় নির্বাচন চান, সেহেতু পিআর তো তাদেরই চাওয়ার কথা। পিআর পদ্ধতির নির্বাচনে ফ্যাসিস্ট তৈরি হবে না, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকবে না, ভোট ছিনতাইয়ের সুযোগ থাকবে না। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে সব ধরনের মানুষের সংসদ হবে— বাম-ডান, হিন্দু-মুসলিম। যেকোনো আন্দোলনের জন্য রাস্তায় নামতে হবে না, আন্দোলন হবে সংসদে। যদি কোনো সংশয় থাকে গণভোট দিন। জনগণ চাইলে পিআরে নির্বাচন হবে, না চাইলে হবে না।

মুফতি ফয়জুল করিম প্রাইমারি স্কুলে গান এবং নাচের শিক্ষক নিয়োগ না দেওয়ারও দাবি জানান। তিনি বলেন, মুসলমানদের ট্যাক্সের টাকায় এই দেশে নাচ-গানের শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া যাবে না। কেউ যদি দিতে চায়, তাহলে সে মসনদে থাকতে পারবে না। যদি শিক্ষক দিতে চান, তাহলে কম্পিউটারের শিক্ষক দিন। আর ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ বাধ্যতামূলক করতে হবে।

মিছিলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা উত্তর মহানগরীর সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলমের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুফতি রেজাউল করিম আবরার, সহকারী মহাসচিব মাওলানা আহমদ ইবনে কাউয়ুম, ঢাকা-১১ আসনের এমপি প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ প্রমুখ।

অংশগ্রহণকারীরা বলেন, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা এবং গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান করা অত্যন্ত জরুরি। এছাড়া বিশেষ ট্রাইব্যুনালে ভারতীয় তাঁবেদার ও ফ্যাসিবাদের দোসর জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলের বিচারের সময় তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হোক।

বক্তারা বলেন, রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপর চলমান হামলা দেশের মানুষের মধ্যে ভীতি ও উদ্বেগ তৈরি করছে। একটি গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের ঘটনা অস্বাভাবিক এবং নিন্দনীয়। তাই হামলাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা এবং এর পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা জরুরি।

তারা আরও উল্লেখ করেন, দেশের স্বৈরতন্ত্র চিরতরে উৎখাত করতে হলে নির্বাচনি ব্যবস্থার সংস্কার অপরিহার্য। জনগণের মতামতকে রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রতিফলিত করতে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিই একমাত্র কার্যকর সমাধান।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে পিআর ভিত্তিক নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। এর ধারাবাহিকতায় সেপ্টেম্বর মাসব্যাপী সারাদেশে কর্মসূচি পালন করা হবে।

তারা জানান, আগামী জাতীয় নির্বাচন অবশ্যই জুলাই সনদের ভিত্তিতে পিআর পদ্ধতিতে হতে হবে। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সর্বাত্মক আন্দোলন চালাবে।

এছাড়া আগামীকাল শুক্রবার বিভাগীয় শহরে এবং ২৬ সেপ্টেম্বর সব জেলা ও উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন দলটির নেতারা।