খুলনা | মঙ্গলবার | ১৪ অক্টোবর ২০২৫ | ২৮ আশ্বিন ১৪৩২

কঠিন সংকটে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ প্রয়োজন

|
১২:২৯ এ.এম | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫


দেশের শিল্পোদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীরা আজ কঠিন সংকটে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শিল্প-ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভালো কিছু আশা করলেও তাঁরা এখন চূড়ান্ত হতাশা প্রকাশ করছেন। এক বছর পরও শান্তি, স্বস্তি কিংবা আস্থা কোনোটিই ফেরেনি, বরং ক্রমেই বাড়ছে সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা। বিনিয়োগে স্থবিরতা চলছে।
দেশি বা বিদেশি কোনো উদ্যোগেই ভালো সাড়া নেই। এ জন্য বিদ্যুৎ-জ্বালানির সংকট, ঋণের উচ্চ সুদের হার, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিসহ অন্যান্য কারণ তো আছেই, সেই সঙ্গে আছে পরিকল্পিত হয়রানি। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও অভিমতে ব্যবসায়ীসমাজের পক্ষ থেকে এমনই নানা অভিযোগ ও আশঙ্কার কথা উঠে এসেছে।
দেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে ও বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, নীতি সহায়তা বা সহযোগিতার বদলে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে চলছে মিডিয়া ট্রায়ালসহ নানা ধরনের হয়রানি ও মিথ্যা মামলার বিড়ম্বনা। অনেকের বিদেশভ্রমণে নিষেধাজ্ঞাসহ ব্যাংক এ্যাকাউন্ট জব্দ করে রাখা হয়েছে। এর বাইরে উচ্চ সুদের হার, বেশি দাম দিয়েও প্রয়োজনীয় গ্যাস না পাওয়া, মুদ্রার অবমূল্যায়ন, মব সন্ত্রাস, আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি, ঘুষ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজিসহ আরো বহু সমস্যায় ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা রীতিমতো দিশাহারা। শুধু তা-ই নয়, এত সব সংকট সত্তে¡ও সমাধানের লক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেই বললেই চলে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে বসা বা আলোচনা পর্যন্ত করা হচ্ছে না। তাঁদের সমস্যা দূর করা তো পরের কথা, সমস্যা কী বা সমস্যার গতি-প্রকৃতি নিয়ে কথা বলারও উদ্যোগ নেই। ফলে বিনিয়োগে মন্দা চলছেই। কর্মসংস্থান হচ্ছে না, বরং মানুষ প্রতিদিনই চাকরি হারাচ্ছেন। একের পর এক ব্যবসা ও শিল্প-কারখানা বন্ধ হচ্ছে।
অনেকে অনিচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হয়ে পড়ছেন। তাঁদের পুনরুদ্ধারে প্রণোদনা দিতে কমিটি করা হলেও নামমাত্র কিছু ব্যবসায়ীকে এই সুবিধা দিয়ে বেশির ভাগকেই বঞ্চিত করা হয়েছে।
শিল্প-বাণিজ্যের দূরবস্থায় দেশের অর্থনীতি আজ বিপর্যয়ের মুখোমুখি। বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন বলছে, ২০২৫ সালে নতুন করে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যেতে পারে। পরিস্থিতি সেদিকেই যাচ্ছে। এরই মধ্যে দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষ বেকার হয়েছে। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল স¤প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘২০২৫ সালে শুধু শিল্প নয়, শিল্পোদ্যোক্তাদের মেরে ফেলা হচ্ছে। এটাকে আমরা ষড়যন্ত্র মনে করি। শিল্প বাঁচাতে না পারলে দেশে দুর্ভিক্ষ হবে। শিল্পবিরোধী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শিল্প-কারখানা গলা টিপে মেরে ফেলা হচ্ছে। গ্যাসসংকটে আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। চলতি মূলধন সংকুচিত হয়েছে। প্রতিনিয়ত আমাদের কারখানা লে-অফ হচ্ছে। কিছুদিন পর মানুষ রাস্তায় নামবে। আরো ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে।’
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক আবদুল আউয়াল মিন্টু যথার্থই বলেছেন, দেশে বর্তমানে রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা, দুর্বল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা-সব মিলিয়ে একটি অনিরাপদ ও অনিশ্চিত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিবেশে দেশি-বিদেশি উভয় ধরনের বিনিয়োগই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। স্থিতিশীলতা না থাকলে ব্যবসা পরিচালনা করা শুধু কঠিনই নয়, অসম্ভব হয়ে পড়ে।
বিনিয়োগের জন্য আস্থার পরিবেশ অত্যন্ত জরুরি। কারণ বিনিয়োগ দু-এক দিনের বিষয় নয়। একজন বিনিয়োগকারী দীর্ঘ মেয়াদে তাঁর বিনিয়োগের নিশ্চয়তা অবশ্য চাইবেন। দেশের স্বার্থে, মানুষের স্বার্থে, কর্মসংস্থান ও অর্থনীতির স্বার্থে বিনিয়োগের জন্য উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। আর এ জন্য সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অত্যন্ত জরুরি।