খুলনা | মঙ্গলবার | ১৪ অক্টোবর ২০২৫ | ২৮ আশ্বিন ১৪৩২

নির্বাচন নিয়ে কারসাজি নয় জনমনে দুশ্চিন্তা বাড়ছে

|
১১:৫৩ পি.এম | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫


জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে ধরনের পরিবর্তনের প্রত্যাশা করেছিল মানুষ, তাদের সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্য তৈরি হয়েছিল, তার জায়গায়ও এখন অনৈক্য ও বিভাজনের সুর স্পষ্ট। নির্বাচনের পদ্ধতি পরিবর্তনসহ বিভিন্ন দাবিতে কিছু দল আন্দোলন করছে। বেশির ভাগ দল পিআর, সংবিধান সংশোধনসহ অনেক দাবিতে একমত নয় এবং তাদের মতে, কয়েকটি দলের এসব কৌশলী পদক্ষেপ বিভাজন আরো বাড়াবে। অর্থনৈতিকভাবেও দেশ ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়ছে। নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না। চালু কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বেকারত্বের হার হু হু করে বাড়ছে। আয় না বাড়লেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে। দারিদ্র্যের হার বাড়ছে। সামাজিক শৃঙ্খলা বা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক পর্যায়ে চলে গেছে। সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়েও সমালোচনা প্রবল হচ্ছে।আর এসব কারণে জনমনেও দুশ্চিন্তা ক্রমেই প্রবল হচ্ছে।
জুলাই সনদের আইনি ভিত্তিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার জামায়াত, এনসিপিসহ আরো কিছু দল। এই দাবিতে ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ চলছে। বিএনপি ও তাদের মিত্র দলগুলো বলছে, তারা জুলাই সনদের বিপক্ষে নয়, কিন্তু সনদের কিছু ধারা এবং এর বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে তাদের কিছুটা ভিন্নমত রয়েছে। ঐকমত্য কমিশনের প্রত্যাশা, দেশের স্বার্থে দু’দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হবে।
কিন্তু আলোচনার টেবিল ছেড়ে মাঠে এসে আন্দোলন শুরু করাকে ভালো চোখে দেখছে না বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো। সংসদের উভয় কক্ষে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির দাবিতে একমত নয় বেশির ভাগ দল। বিষয়টি এখনো ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায়ও স্থান পায়নি। বারবার হোঁচট খাচ্ছে জুলাই অভ্যুত্থানের স্বপ্ন-প্রত্যাশা। জনগণের প্রত্যাশা ও বাস্তবতার ফারাক ক্রমাগত বাড়ছে। স্বচ্ছতা, কর্মসংস্থান, নিরাপত্তা, গণতান্ত্রিক অধিকার ইত্যাদি বিষয়ে আশ্বাস দেওয়া হলেও বাস্তব ফল পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনীতিতে বিভাজন থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, দেশের অর্থনীতি, সামাজিক অবস্থা-সবকিছুই আজ রীতিমতো লাগামছাড়া। মানুষের মধ্যে আস্থার ঘাটতি ক্রমেই প্রবল হচ্ছে। যেকোনো গোষ্ঠী এমন পরিস্থিতির সুযোগ নিতে পারে। দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি হতে পারে। গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণ না ঘটলে দেশে ক্রমাগত অস্থিতিশীলতা ও চরম পন্থার প্রসার ঘটার আশঙ্কা রয়েছে বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধুরী বলেন, ‘রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিক অবস্থা-সবকিছুই যেন এখন লাগামছাড়া। বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও অবস্থা ভালো নয়। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তে যা দেখা যাচ্ছে, তা হচ্ছে আস্থার সংকট।’ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. কে এম মহিউদ্দিন মনে করেন, অন্তর্র্বতী সরকারের প্রতি মানুষের ধারণা আর আগের মতো ইতিবাচক নয়। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘ দেশে নানা সংকট তৈরি হচ্ছে। এদিকে সরকারের মনোযোগ ও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ আমরা লক্ষ্য করিনি, বরং মায়ানমারে করিডর, বিদেশিদের কাছে বন্দর ইজারাসহ নানা ইস্যুতে জনমনে সন্দেহ-সংশয় বেড়েছে।’ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশে শান্তি, শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর অত্যন্ত জরুরি। সে লক্ষে ফেব্র“য়ারিতে নির্বাচন হতেই হবে। কোনো ধরনের কারসাজি বা কৌশলের মারপ্যাঁচে নির্বাচন পিছিয়ে গেলে তার ফল হবে আত্মঘাতী।