খুলনা | রবিবার | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ১২ আশ্বিন ১৪৩২

উপ-সহকারী পরিচালক হাশেমকে প্রধান কার্যালয়ে বদলি

দুদক কর্মকর্তার ঘুষ কেলেঙ্কারি : কেসিসির সাবেক কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে সম্পৃক্ততার অভিযোগ

এন আই রকি |
০১:১৮ এ.এম | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫


স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ঠিকাদার মোঃ শহিদুল ইসলাম। তার নামে চলছে গোপনীয় তদন্ত। খুলনা ও বাগেরহাটের দুদক অফিসকে ম্যানেজ করতে লাগবে ১০ লাখ টাকা। রফা দফার এক পর্যায়ে ৫ লাখ টাকায় বিষয়টি সমঝোতা হয়। ২২ সেপ্টেম্বর বাগেরহাট জেলার দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক মোঃ আবুল হাশেমকে টাকা দেয়ার কথা ঠিকাদার শহিদুলের। কিন্তু তিনি টাকা না দিয়ে বিষয়টি দুদকের চেয়ারম্যান  বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। 
এদিকে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর আনিসুর রহমান বিশ্বাস ব্যবসায়ী শহিদুলের সাথে হাশেমের বিষয়টি সমঝোতা করার জন্য মধ্যস্থতা করেন বলে লিখিত অভিযোগে উলে­খ করা হয়েছে। 
গত রোববার মুঠো ফোনে দুদক কর্মকর্তা হাশেমকে ২ লক্ষ টাকা পৌঁছে দেয়ার কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ  হাতে এসেছে। সেখানে উলে­খ করা হয়েছে, ব্যবসায়ী শহিদুল তার ভাইকে দিয়ে বাগেরহাটে টাকা পাঠাতে চাইলে হাশেম খুলনায় টাকা নেবে বলে জানান। এছাড়া পাঁচ লাখ টাকা দেয়ার কথা থাকলেও আপাতত ২ লাখ টাকা দেয়া হবে। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবসায়ের সাথে দুদক কর্মকর্তার অডিওটি ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে খুব দুদক। 
মঙ্গলবার সকালে দুদকের পরিচালক (প্রশাসন ও মানব সম্পদ) তৌহিদুজ্জামান পাভেল স্বাক্ষরিত এক পত্রে বাগেরহাট থেকে হাশেমকে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের রিজার্ভে বদলি করা হয়েছে। এই ঘটনার পর থেকে দুদকের খুলনা বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়ে ‘হাশেম’ সমালোচনার পাত্র হয়ে উঠেছে। 
জানা যায়,  সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি এলাকায় আবুল হাশেমের বাড়ি। সে খুলনার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের অধীনে সহকারী পরিদর্শক হিসেবে কাজ করতেন। ২০২২ সালে উপসহকারী পরিচালক হিসেবে বাগেরহাট জেলায় বদলি হন। তার পরিবার ঢাকায় আছে। তবে তিনি দীর্ঘদিন খুলনার সি এম বি কলোনিতে বসবাস করতেন। মুখে লম্বা দাড়ি, মাথায় টুপি এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন হাশেম। সিএমবি কলোনির মসজিদের ক্যাশিয়ার  দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। সেই সূত্র থেকে স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর আনিসুর রহমান বিশ্বাসের সাথে হাশেমের সুসম্পর্ক ছিল। 
ঠিকাদার শহিদুল ইসলাম বলেন, আমার বাড়ি বাগেরহাট হলেও আমি খুলনায় বসবাস করি। এলজিইডিসহ বিভিন্ন দপ্তরের ঠিকাদারি কাজ করি। স¤প্রতি সাবেক কাউন্সিলর আনিসুর রহমান বিশ্বাস আমাকে ফোন করে বলেন, ‘তোমার নামে দুদুকে একটি অভিযোগ তদন্ত চলছে, যে অফিসার তদন্ত করছে সে আমার লোক। তুমি আমার সাথে দেখা করো আমি বিষয়টি মিটায় দেব।’ এর কয়েকদিন পর আমার নাম্বারে দুদক কর্মকর্তা আবুল হাশেম ফোন করে। তিনি আমাকে আমার সম্পদ বিক্রি করে দিতে বলেন তা না হলে বাজেয়াপ্ত  করা হবে বলে জানান। এরপর গত ১৮ সেপ্টেম্বর আমাকে সিএমবি কলোনির ভিতরে দেখা করতে বলে। এ সময় তিনি বলেন, আপনার রিপোর্ট রেডি করছি। খুলনা ও বাগেরহাট অফিসসহ আমার খরচ আছে ১০ লাখ টাকা। এত টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় পরবর্তীতে পাঁচ লাখ টাকায় বিষয়টি সমঝোতা হয়। গত সোমবার টাকা দেয়ার কথা থাকলে আমি সেটা না করে চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগে দাখিল করি। এমনকি আমি সাবেক কাউন্সিলরের সাথেও সাক্ষাৎ করিনি। আমার নামে কি অভিযোগ সেটাও আমি জানিনা। 
এ বিষয়ে সাবেক কাউন্সিলর আনিসুর রহমান বিশ্বাস  জানান, দুদকের কোন বিষয়ে শহীদুলের সাথে আমার কথা হয়নি। শহিদুল অন্য একটি মামলার বাদী। ওই মামলার বিষয়ে কথা বলার জন্য আমি তাকে দেখা করতে বলেছিলাম। দুদক কর্মকর্তা হাশেমকে আমি সিএমবিতে বসবাস করে সেই সূত্র ধরে চিনতাম। সে ধার্মিক  লোক ছিল,  তিনি শহিদুলের নিকট টাকা চেয়েছে এটা  আপনার কাছ থেকে শুনলাম। 
বাগেরহাট জেলা দুদকের উপ-পরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, ব্যবসায় শহিদুলের বিষয় প্রধান কার্যালয় থেকে একটি তদন্ত দেয়া হয়েছিল। আবুল হাশেম সেটি তদন্ত করছিল। তাকে আজ (বুধবার ঢাকায় বদলি করা হয়েছে।