খুলনা | রবিবার | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ১৩ আশ্বিন ১৪৩২

সজীব ওয়াজেদ জয়ের সম্পত্তি জব্দে যুক্তরাষ্ট্রে চিঠি পাঠাচ্ছে দুদক

খবর প্রতিবেদন |
০১:০৭ এ.এম | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫


ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে যুক্তরাষ্ট্রে পাওয়া স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি জব্দ করতে দেশটিতে মিউচুয়াল লিগ্যাল এ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম জানান, দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৯ সেপ্টেম্বর এসব সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ দেন আদালত। ওই আদেশের ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্রে এমএলএআর পাঠাচ্ছে দুদক।
দুদকের নথি অনুযায়ী, জয়ের নামে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া রাজ্যে দু’টি বাড়ি রয়েছে। এর একটি ভার্জিনিয়ার গ্রেট ফলস এলাকায়, ২০২৪ সালের ৩ জুন এ বাড়ির মূল্য নির্ধারিত হয় ৩৮ লাখ ৭৯ হাজার ৫৬০ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪৫ কোটি ৪৭ লাখ ৭৩ হাজার ৬৬১ টাকা।
অন্য বাড়িটি ভার্জিনিয়ার ফলস চার্চ এলাকায় অবস্থিত, ২০১৪ সালের ৫ মে বাড়িটির মূল্য ধরা হয় ৯ লাখ ৯৬ হাজার ৮৭৫ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় সাত কোটি ৭৩ লাখ ৮৭ হাজার ৪০৬ টাকা। সব মিলিয়ে বাড়ি দু’টির মূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৩ কোটি ২১ লাখ ৬১ হাজার ৬৭ টাকা।
তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দুদক আবেদনে বলেছে, জয়ের নামে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত আটটি বিলাসবহুল গাড়ি রয়েছে। এর মধ্যে উলে­খযোগ্য মার্সিডিজ-বেঞ্জ এস-ক্লাস (২০১৫), ম্যাকলারেন ৭২০ এস (২০১৮), ল্যান্ড রোভার (২০১৬), লেক্সাস জিএক্স ৪৬০ (২০১৫)– নিবন্ধিত সাবেক স্ত্রী ক্রিস্টিনা ওয়াজেদের নামে। এ গাড়িগুলোর আনুমানিক মূল্য প্রায় চার লাখ ৪২ হাজার ৯২৪ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। আদালত এরই মধ্যে এ গাড়িগুলো জব্দের অনুমোদন দিয়েছেন।
দুদকের নথিতে আরও বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে জয়ের নামে অন্তত ১২টি ব্যাংক হিসাব ও ছয়টি কোম্পানি রয়েছে। এসব কোম্পানির মধ্যে রয়েছে : গোল্ডেন বেঙ্গল প্রডাকশন্স এলএলসি, প্রাইম হোল্ডিং এলএলসি, ওয়াজেদ ইন অসিরিস ক্যাপিটাল পার্টনার্স এলএলসি, ব্লু হ্যাভেন ভেঞ্চারস এলএলসি, ট্রুপে টেকনোলজিস এলএলসি। ব্যাংক হিসাবগুলোর মধ্যে সাতটি এসব কম্পানির নামে, পাঁচটি সজীব ওয়াজেদের ব্যক্তিগত, যার মধ্যে একটি যৌথ হিসাবে খোলা হয়েছে তার সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে।
গত ১৪ আগস্ট সজীব ওয়াজেদের বিরুদ্ধে ৬০ কোটি টাকার বেশি অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে মামলা করে দুদক।
মামলায় বলা হয়, ২০০০ থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত তিনি ‘ক্ষমতার অপব্যবহার করে’, ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে আয়করের বাইরে বিপুল অর্থ উপার্জন করেন এবং হুন্ডি ও অন্যান্য অবৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করেন।
দুদক জানিয়েছে, জয়ের বিরুদ্ধে আয়কর রিটার্নে বিদেশি আয় গোপন, অননুমোদিতভাবে বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং সন্দেহজনক লেনদেন পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে আদালতে প্রমাণ দাখিলের জন্য এসব সম্পদ আলামত হিসেবে পেশ করা হবে।
দুদকের মহাপরিচালক মোঃ আক্তার হোসেন জানান, মামলার তদন্ত চলমান রয়েছে এবং তদন্ত কর্মকর্তার চাহিদা অনুযায়ী আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে আরো সম্পদ জব্দের উদ্যোগ নেওয়া হবে। বিচারকার্য চলাকালে এসব জব্দ করা সম্পদ আদালতে উপস্থাপন করা হবে।