খুলনা | বুধবার | ০১ অক্টোবর ২০২৫ | ১৫ আশ্বিন ১৪৩২

১২ দিনের যুদ্ধে ১৬ ইসরায়েলি পাইলট নিহতের দাবি ইরানের

খবর প্রতিবেদন |
১২:৪৯ পি.এম | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫


ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির জ্যেষ্ঠ সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল ইয়াহিয়া রাহিম-সাফাভি জানিয়েছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের সংঘাতে তাদের ১৬ জনেরও বেশি বৈমানিক প্রাণ হারিয়েছেন।

এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে রাহিম-সাফাভি বলেন, ‘যুদ্ধের সূচনালগ্নে ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা ব্যবস্থায় কিছু দুর্বলতা সামনে এলেও, তা দ্রুত শনাক্ত করে সংস্কার ও পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়।’

তার ভাষ্য, সংঘাতের প্রথম দুই-তিন দিন পরিস্থিতি কিছুটা চাপে থাকলেও চতুর্থ দিন থেকেই পাল্টে যেতে শুরু করে যুদ্ধের গতিপথ। শেষদিকে এসে ইরান পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের অধিকাংশ—প্রায় ৬০ শতাংশ—এই যুদ্ধে ইরানকেই বিজয়ী হিসেবে বিবেচনা করেছেন।

তিনি বলেন, ‘প্রথম দিকে কিছু ঘাটতি থাকলেও পরিস্থিতির পালাবদল হয় চতুর্থ দিন থেকেই, আর শেষ দিকে আমাদের পক্ষেই জয় নিশ্চিত হয়।’

রাহিম-সাফাভির বক্তব্যে ছিল স্পষ্ট আত্মবিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল তার ঘোষিত কোনো লক্ষ্যই পূরণ করতে পারেনি। তারা ইরানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস কিংবা সামরিক ও পারমাণবিক সক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। বিপরীতে, ইরান তার কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনে সফল হয়েছে।’

তিনি জানান, শত্রু পক্ষের কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র এবং টার্মিনালসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনায় আক্রমণ চালায় ইরান, যার ফলে ইসরায়েল আত্মসমর্পণের মতো পরিস্থিতিতে পড়ে।

এই অভিযানে ১৬ জনের বেশি ইসরায়েলি পাইলটের প্রাণহানির দাবি করেন তিনি।

রাহিম-সাফাভি আরও বলেন, যুদ্ধ চলাকালে শত্রুপক্ষ প্রায় ৬০০ থেকে ৬৪০টি আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে, যার ফলে তারা নিজেদের পক্ষে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

তার দাবি, ইরানের মহাকাশ এবং বিমান প্রতিরক্ষা খাত এখন পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে এগোচ্ছে। যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত আকাশ প্রতিরক্ষা ইউনিট, রাডার ব্যবস্থা, ক্ষেপণাস্ত্র বাহিনী ও বিমান ইউনিটগুলোর নেতৃত্বে পরিবর্তন এনে সক্ষমতা দ্রুত ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, কেবল প্রতিরক্ষায় সীমাবদ্ধ না থেকে ইরান আকাশ ও মহাকাশসহ সব সেক্টরে নিজেদের আক্রমণাত্মক শক্তিও বাড়াচ্ছে।

শত্রু পক্ষের প্রতি সতর্কবার্তা দিয়ে রাহিম-সাফাভি বলেন, ভবিষ্যতে ইসরায়েল বা তার মিত্ররা যদি আগ্রাসনের পথ বেছে নেয়, তাহলে আগের চেয়েও বহু গুণ শক্ত প্রতিক্রিয়া পাবে।

গত ১৩ জুন বিনা প্ররোচনায় ইরানের ওপর হামলা চালায় ইসরায়েল, যা পরে ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে রূপ নেয়। এ সংঘাতে অন্তত এক হাজার ৬৪ জন প্রাণ হারান, যাদের মধ্যে সামরিক কর্মকর্তার পাশাপাশি পারমাণবিক বিজ্ঞানী ও সাধারণ নাগরিকও রয়েছেন।

পরবর্তীকালে এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রও জড়িয়ে পড়ে এবং ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। এর জবাবে ইরান হামলা চালায় তেল আবিবের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় এবং কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বড় সামরিক ঘাঁটি ‘আল-উদেইদ’-কে লক্ষবস্তুতে পরিণত করে।

শেষ পর্যন্ত, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ২৪ জুন উভয় পক্ষ অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয়।
তথ্যসূত্র: মেহের