খুলনা | মঙ্গলবার | ১৮ নভেম্বর ২০২৫ | ৪ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

কুমির মুখে নিয়ে বিভিন্ন খালে ঘুরছিলো জেলে সুব্রতর মরদেহ : উদ্ধার করে বন বিভাগ ও স্বজনরা

মোংলা প্রতিনিধি |
০৩:০৪ পি.এম | ০১ অক্টোবর ২০২৫


সুন্দরবনের করমজল খাল থেকে কুমিরে নেয়া জেলে সুব্রত মরদেহ উদ্ধার করেছে বন বিভাগ ও স্বজনরা। মঙ্গলবার গভীর রাতে বনের করমজল ছিলা খালের পাশ থেকে ভাসমান অবস্থায় লাশটি উদ্ধার করা হয়। সোমবার বিকালে কাঁকড়া ধরে সহকর্মীদের সাথে খাল সাতরে রাতে বাড়ি ফেরার পথে কুমিরে আক্রমণ করে তাকে পানির নিচে নিয়ে যায়। পরে জেলের সুব্রতের লাশের সন্ধানে সেখানে অভিযান চালানোর ৮ ঘন্টা পর তার সন্ধান মিলে।  
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, অন্যান্য দিনের মত মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে বনের ঢাংমারী ফরেষ্ট অফিস থেকে পাশ নিয়ে ৫ জন জেলে মিলে সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরতে যায় জেলে সুব্রত মন্ডল (৩২)। কাঁকড়া ধরে অন্যান্যদের সাথে বাড়ি ফেরার পথিমধ্যে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে করমজলের খাল সাঁতরে পার হচ্ছিলো সুব্রত। পিছন থেকে হঠাৎ একটি কুমির তার উপর আক্রমণ চালিয়ে টেনে হিঁচড়ে পানির নিচে নিয়ে যায়। তখন তার সাথে থাকা অপর জেলে সোহেল বিশ্বাস, জুয়েল সরদার, জয় সরকার ও স্বপন বিশ্বাস কুমিরের মুখ থেকে স্বপনকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে তারা বনবিভাগ ও স্বপনের পরিবারকে খবর দেন। খবর পেয়ে বনবিভাগ ও স্বপনের পরিবারসহ গ্রামবাসী গভীর রাত পর্যন্ত লাশের সন্ধানে তল­াশী চালায় কিন্তু না পেয়ে হতাশাগ্রস্ত— হয়ে পড়ে পরিবারের লোকজন।  
সুব্রতর মরদেহ তল­াশী দলে থাকা ইস্রাফিল বয়াতি বলেন, সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে আমরা দেখেছি কুমিরের মুখে রয়েছে স্বপন। তবে স্বপনকে খায়নি কুমিরটি, মুখে নিয়ে খালের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মাঝে মাঝে কুমিরটি ভাসছে, কিন্তু আমরাও পিছু ছাড়িনি। রাতে অন্ধকারে তল­াশী চালাতে বেগ পেতে হয়েছিল কিন্তু পরিশেষে প্রায় ৮ ঘন্টা পর সুব্রতর মরদেহ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। 
জেলে সুব্রত মন্ডল পূর্ব ঢাংমারী গ্রামের কুমুদ মন্ডলের ছেলে। ছোট বেলা থেকেই কাঁকড়া ধরে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলো। কাঁকড়া জেলে সুব্রত বনবিভাগ থেকে কাঁকড়া ধরার পাস নিয়ে সুন্দরবনে গিয়েছিলো। 
সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণি প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, মঙ্গলবার বিকালে কাঁকড়া ধরে বাড়ি ফিরছিলেন সুব্রতসহ তার সাথের অন্য জেলেরা। পথে করমজলের বড় খাল পাড়ি দিয়ে আসতে হবে কিন্তু এ খালে বেশ কুমির রয়েছে। মাঝে মাঝেই আক্রমণও করে। গত বছর এই কুমিরের আক্রমণে মারা গেছে মোশাররফ। পাঁচজন মিলে কাঁকড়া শিকারী সবাই খাল সাতরে পার হয়ে গেলেন। কিন্ত সুব্রত পানিতে নামার পূর্বে একটু থুম খেয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন। এক মুহূর্তের মধ্যে একটি কুমির দুই পা একসাথে কামড়ে ধরে পানির নিচে নিয়ে যায়। সাথে সাথে সুব্রতকে ধরে ফেললো সাথের অন্য জেলেরা। চারজন মিলে অনেক সময় চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। কিছুক্ষণ পর সুব্রতকে মুখে নিয়ে ভেসে উঠলো বিশাল কুমিরটি। পরে আবারও খালের পানিকে ডুব দিয়ে অন্যত্র চলে যায়। খবর পেয়ে ট্রলার নিয়ে বনরক্ষীরাও উদ্ধারের চেষ্টা করা হয়। পরে ছিলা খালের মুখ থেকে ভাসমান মরদেহ উদ্ধার করা হয়।